কমছে গাছ, চাহিদা সামালে নলেন গুড়ে মিশছে ভেজাল-আরিফ ইকবাল খান
খেজুর গাছ কমছে। কিন্তু শিউলির সংখ্যা বাড়ছে। এদিকে বাজারে খেজুরের গুড়ের জোগানের অভাব নেই। এমন বৈপরীত্য কি সম্ভব? পূর্ব মেদিনীপুত্রের হলদিয়া, সেজুতি, মহিষাদল, নন্দীগ্রামে …
কমছে গাছ, চাহিদা সামালে নলেন গুড়ে মিশছে ভেজাল-আরিফ ইকবাল খান
খেজুর গাছ কমছে। কিন্তু শিউলির সংখ্যা বাড়ছে। এদিকে বাজারে খেজুরের গুড়ের জোগানের অভাব নেই। এমন বৈপরীত্য কি সম্ভব?
পূর্ব মেদিনীপুত্রের হলদিয়া, সেজুতি, মহিষাদল, নন্দীগ্রামে বেড়েছে শিউলির সংখ্যা। কিন্তু পূর্ব মেদিনীপুরের বহু জায়গায় ভেড়ির বাড়বাড়ন্ত। এতে বহু খেজুর গাছ কাটা পড়েছে।অন্য কারণেও খেজুর গাছ কমেছে। কিন্তু শীত এলেই বাঙালির মন নলেন শুড়ের জন্য আকুল হয়। ফলে জোগান স্বাভাবিক রাখতে হয়। তা রাখতে গিয়েই খেজুর গুড়ে ভেজাল দেওয়া চলছে বলে দাবি করছেন গবেষকেরা। যে-সব উপাদান ভেজাল দেওয়া হয় সেগুলোর কিছু খাদ্য হিসেবে ব্যাবহৃত হয়। কিন্তু কিছু উপাদান স্বাস্থ্যের পক্ষে ক্ষতিকর । ক গবেষকেরা বলছেন? মহিষাদল রাজ কলেজের জীববিদ্যার বিভাগীয় প্রধান শুভময় দাস বলেন , খেজুর গাছের ফ্লোয়েম বা কাণ্ড থেকে রস সংগ্রহ করা হয়। একটি গাছ থেকে প্রতিদিন রস পাওয়া যায় না। বাজার জাত বেশিরভাগ খেজুর রসেই ভেজাল মেসানো হচ্ছে। যা জনস্বাস্থ্যের পক্ষে ক্ষতিকর। অবশ্যই স্বাস্থ্য দপ্তরের নজর দেওয়া উচিত।
শুভময় বাবুরা কলেজের গবেষণাগারে গুড়ের ভেজাল পরীক্ষা করেছেন দেখা গিয়েছে চিটে গুড়, ভেলি গুড় মেশানো হয়। পাটালি তৈরীর সময় কৃত্রিম রং দেওয়া হয় মহিষাদল রাজ কলেজের গবেষণা বলেছেন ভেজাল আটকাতে শিউলিদের মধ্যে সচেতনতা ও নজরদারি বাড়ানো দরকার। খেজুর গাছ ও রস নিয়ে গবেষণা করেছেন খেজুরি কলেজের প্রাক্তন অধ্যক্ষ অসীম কুমার মান্না অসীমবাবুর দাবি খেজুর গুড় তৈরি করতে গুরো চীনে সালফেট মেশানো হয়। ওই সালফেট বাজারে ১৮ থেকে ২০ টাকা কেজি দরে পাওয়া যায় পাটালি দীর্ঘ সময় রেখে দিলে সাদা দাগ হয়ে যায়। পাঠালিকে রেখে খাওয়ার প্রবণতা থাকে। অনেক ই ক্ষেত্রেই এর সঙ্গে প্রিজারভেটিভ ( যাতে দীর্ঘদিন ঠিক থাকে) মেশানো হয়। এই সালফেট এবং প্রিজারভেটিভ ক্ষতিকর।
গুড়ে ভেজাল কিভাবে দেওয়া হয়? অসীমবাবু দাবি তিন কেজি গুড়ে ৭ কেজি সালফেট মেশানো ফর্মুলা মেনে চলা হয়। গুড় যখন শালে ফুটতে থাকে তখন একেবারে শেষের দিকে( চালতা ফুলিয়া ফুট) গুড়ে ভেজাল মেশানো মহেন্দ্রক্ষন।
কেউ কেউ এই সময় রাঙালু সেদ্ধ করে মুটি গামছা দিয়ে ছেঁকে দেন। সেটাই মেশানো হয়। এমনকি মিষ্টির দোকানের গাদ ও মেশানো হয় কোথাও কোথাও।
গবেষকদের ব্যাখ্যা বাজারে বছর গুড়ের দাম বাড়ে না কেজি প্রতি ১০০ থেকে ১০০কোটি টাকা গাছের শারীরিক বিদ্যা রস প্রাপ্তি ও খরচ হিসেবে করে দেখলে অংকে মেলেনা। ভেজাল না মেশালে কেজি প্রতি গুড়ের দাম হবে বেশি।
অসীম বাবু বলেন গুড়ের রসের তারতম্য রয়েছে। দেখা গিয়েছে পুরুষ গাছের রসের গুড় সুস্বাদু নলেন গুড় বলে যেটি বাজারে আসে তাও কার্যত বোকা বানানো হয়। নলেন কথার অর্থ নবীন সন্ধ্যা ছটার পর কলসি বেঁধে রাত দশটার মধ্যে রস সংগ্রহ করে গুড় তৈরি করলে গুণ সুবাসিত হয় একেই বলে নলেন গুড় কিন্তু বাজারে যে ঘুরে নলেন গুড় পাওয়া যায়। তা অনেকাংশেই ভেজাল কৃত্রিম সুগন্ধি ব্যবহার করা হয়। এইসব ক্ষতিকর।
মহিবাদল, হলদিয়া খেজুরির শিউলিরা জানাচ্ছেন, তারা গুড়ে ভেজাল দেন না। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক শিউলি বলেন, "দেখুন আমাদের পরিবার ছেড়ে দু'মাসের বেশি থাকতে হয়। গাছ ধরতে হয়। গাছ পিছু এক কেজি গুড় দিতে হয়। কেউ টাকা নেন। আবার দেখবেন খেজুর গাছ কমে যাচ্ছে। প্রতি বছর আবার শালের সংখ্যা বাড়ছে। কী করে প্রতিযোগিতায় টিকে থাকা যাবে?' শীতকালে নলেন গুড়ের রসগোল্লা, সন্দেশ তো আছেই। এখন কেকও হয় নলেন গুড়ের। ফলে চাহিল বাড়ে। এক শিউলিকে জিজ্ঞাসা করা হয়েছিল তিনি ভেজাল দেন কিনা? শিউলি বলেন, "আমরা ভেজাল দেই না গুড়ে। কিন্তু অনেকেই ১ নম্বর এবং ২ নম্বর গুড় তৈরি করেন।"
No comments