Page Nav

HIDE

Grid Style

GRID_STYLE

Post/Page

Weather Location

Breaking News:

latest

তুই, তুমি ,আপনি কোনটাতে বন্ধুত্বের দীর্ঘস্থায়ী

তুই, তুমি ,আপনি কোনটাতে বন্ধুত্বের দীর্ঘস্থায়ী

স্বর্ণযুগের গানে অনুরণন তৈরি করত ‘তুমি বলো’, ‘না না তুমি বলো’। এ যুগে প্রেম বোঝানোর ভাষা অনেক ক্ষেত্রেই তুই! ‘একবার বল নেই, তোর কেউ নেই’, ‘চল রাস্তায় সাজি ট্রামলাইন’— রয়েছে বহু।মধ্য …

 




তুই, তুমি ,আপনি কোনটাতে বন্ধুত্বের দীর্ঘস্থায়ী



স্বর্ণযুগের গানে অনুরণন তৈরি করত ‘তুমি বলো’, ‘না না তুমি বলো’। এ যুগে প্রেম বোঝানোর ভাষা অনেক ক্ষেত্রেই তুই! ‘একবার বল নেই, তোর কেউ নেই’, ‘চল রাস্তায় সাজি ট্রামলাইন’— রয়েছে বহু।

মধ্য চল্লিশের রূপক বিয়ে করেছিলেন স্কুলজীবনের সহপাঠী রিমিকে। রূপক ও রিমি বন্ধু হওয়ায় প্রথম থেকেই একে অন্যকে  ‘তুইতোকারি’ করেন। বর-বউয়ের আগমার্কা সম্পর্কে প্রবেশের পরেও সেই অভ্যেস কাটেনি। রূপকের মায়ের তীব্র আপত্তি ছিল তুই বলা নিয়ে। রিমি যদিও বা অভ্যেস করার চেষ্টা করছিলেন, রূপক সে ডাক শুনে হেসেই অস্থির! এখানকার দম্পতি তুহিন ও মিত্রার বন্ধুত্ব থেকে শুরু আলাপ পরিচয়। তখন তুই-ই ছিল। প্রেমে পড়ার পর ‘তুমি’ বলা শুরু। তুমি-ই টিকে আছে। বরং তুমি বলার পর পর আলাদা অনুভব তৈরি হয়েছে। দু’জনেরই মত, এই সম্পর্কে তুমি বলতে মানসিক স্বস্তি হয়। তুই বললে ততখানি নয়। 

তুই, নাকি তুমি? দাম্পত্যে কোনটা সম্পর্ককে দীর্ঘস্থায়ী করে? মনস্তত্ত্ব কী বলছে? বাংলা ভাষায় তুই বা তুমি দু’টিই কাছের জনকে সম্বোধন করার ভাষা। ইংরেজিতে আবার সবই ‘ইউ’। লাতিন ভাষায় আবার তুমি ও আপনি আলাদা করা গেলেও তুই-এর জন্য আলাদা শব্দ নেই। রাশিয়ান ভাষায় আবার ‘তি’ মানে তুই। মালয়ালম ভাষায় তুই-তুমি-আপনি সবই এক। বাঙালি সমাজে কে কাকে তুই বা তুমি বা আপনি বলবে তা নির্দিষ্ট। আমাদের প্রচলিত ধারণা, বয়সে ছোট হলে তুই বলা যাবে। আবার ভাই বোনদের মধ্যে ‘তুই’ চললেও মা বাবাকে তুই বলা যাবে না। বর্তমান প্রজন্ম বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই ক্লাসমেট বা সহপাঠীকে বিয়ে করেছে। স্কুল কলেজ বা কোচিংয়ের ‘তুই’ সম্পর্কে যাওয়ার পরও তুই-ই থেকে যাচ্ছে। অনেকে দেখাশোনা করে বিয়ে হলেও, বয়সের ফারাক থাকলেও ‘ট্রেন্ডি’ করে তুলতে, বন্ধুত্ব ও ঘনিষ্ঠতা প্রমাণ করতে তুই বলা শুরু করেছেন। আসলে দাম্পত্য অনেকটা দাঁড়িয়ে থাকে পারস্পরিক সম্মানের উপর। বিশ্বায়নের হাত ধরেই স্বামী-স্ত্রী সম্পর্কে এই ‘তুই’ সম্বোধন ঢুকেছিল। দু’জনেই সমান, সমানাধিকার ও সম্পর্কের মধ্যে ঘনিষ্ঠ বন্ধুত্ব— এই কয়েকটি বিষয়ের উপরে ভর করেই বাঙালি তুই-এর ধ্বজা উড়িয়েছিল সম্পর্কের আঙিনায়। তবে মানুষের মন ও তার পরিচর্যা করতে করতে দেখা গিয়েছে, এই তুই বলার মধ্যে ‘সমানাধিকার’-এর বার্তা এলেও পারস্পরিক সম্মান ও সমীহ কম। তুই বলতে বলতে দু’জনেই দু’জনকে অনেকটা ‘টেকেন ফর গ্রান্টেড’ করে ফেলছেন! তুই সম্বোধনে অভ্যস্ত কোনও দাম্পত্য অসুখী হয়ে উঠলে, তাঁদের তুমি-তে ফিরিয়ে দিয়ে ম্যাজিকের মতো উপকার হয়েছে এমন নজিরও রয়েছে। প্রথম প্রথম হয়তো তুমি বলতে অসুবিধা হয়েছে তাঁদের, কিন্তু এর সুদূরপ্রসারী ফল ভালো। আসলে যে কোনও শব্দই মস্তিষ্ক থেকে আসে। সঙ্গে যোগ হয় পারিপার্শ্বিক নানা শর্ত। যে সন্তান বড় হওয়ার সময় বাবা-মাকে তুমি বলতেই দেখেছে, সে তার সঙ্গীকে ‘তুমি’ বলার সময় মনে ও মাথায় প্রচ্ছন্নভাবে বন্ধুত্বের সঙ্গে সম্মানবোধও অনুভর করবে। তার মানে এই নয় যে তুই যাঁরা বলছেন, তাঁরা সম্মান করেন না। কিন্তু শব্দের প্রকাশে সম্মান ও সমীহ বোঝাতে ‘তুমি’-র আবেদন অনেক বেশি। আমার পরামর্শ, দাম্পত্য কোনও সমস্যার মধ্যে দিয়ে গেলে তুই ছেড়ে তুমি-র বর্ম পরা আবশ্যক। কিছু কিছু সময় যে কোনও সম্পর্কেই একটু দূরত্ব ও স্পেস লাগে। তুই বললে সেই দূরত্ব বজায় রাখা যায় না। তাই নড়বড়ে সময়ে ‘তুমি’ বললে তার আবেদন বাড়ে। সম্পর্ক জোড়া লাগতেও সুবিধে হয়।

No comments