মেদিনীপুর হোমের শিশুকে দত্তক ইতালিয়ান দম্পতির
মেদিনীপুরের হোমের শিশু পাড়ি দিল ইতালিতে। ইতালির মিলান শহরের এক দম্পতি দত্তক নিয়েছেন ওই শিশুটিকে। সোমবার জেলাশাসক খুরশিদ আলি কাদেরির তত্ত্বাবধানে সবদিক খতিয়ে দেখে ওই দম্পতির হাতে শিশুটি…
মেদিনীপুর হোমের শিশুকে দত্তক ইতালিয়ান দম্পতির
মেদিনীপুরের হোমের শিশু পাড়ি দিল ইতালিতে। ইতালির মিলান শহরের এক দম্পতি দত্তক নিয়েছেন ওই শিশুটিকে। সোমবার জেলাশাসক খুরশিদ আলি কাদেরির তত্ত্বাবধানে সবদিক খতিয়ে দেখে ওই দম্পতির হাতে শিশুটিকে তুলে দেওয়া হয়। সেইসঙ্গে শিশুটির জন্মের শংসাপত্র থেকে শুরু করে পাসপোর্ট, সমস্ত নথিপত্রও দিয়ে দেওয়া হয় দম্পতির হাতে। এনিয়ে পশ্চিম মেদিনীপুরের হোমের মোট চারজন শিশু পারি দিল বিদেশে।
জেলার শিশু সুরক্ষা দপ্তর সূত্রে জানা গিয়েছে, এই মুহূর্তে দত্তক নেওয়া ওই শিশুটির বয়স আড়াই বছর। সদ্যোজাত অবস্থাতেই শিশুটিকে একটি রেল স্টেশন থেকে উদ্ধার করে পুলিস। তারপর তার ঠাঁই হয় মেদিনীপুরের হোমে। সেখানেই কোলেপিঠে করে মানুষ হচ্ছিল সে। আজ থেকে প্রায় ছ’মাস আগে ইতালির মিলান শহরের বাসিন্দা এলবাস্তো রিবনি ও এলিজাবেথ ফাক্কো ভারতীয় পুত্র সন্তান দত্তক নিতে মনস্থির করেন। সেইমতো, আফা’র (অথোরাইজড ফরেন অ্যাডাপশন অথরিটি) মাধ্যমে তাঁরা ভারতের নারী ও শিশু উন্নয়ন মন্ত্রকের সঙ্গে যোগাযোগ করেন। যাবতীয় কাগজপত্র আপলোড করে রেজিস্টার করেন কেন্দ্রের ‘সেন্ট্রাল অ্যাডাপশন রিসোর্স অথরিটি’র পোর্টালে। শিশু দত্তক নেওয়ার জন্য ভারতের যে কোনও তিনটি রাজ্য নির্বাচন করেন। তার মধ্যে বাংলাও ছিল। সেই সূত্র ধরেই মেদিনীপুরের হোমের এই শিশুটিকে তাঁদের দেখানো হয়। শিশুটিকে দেখেই তাঁদের পছন্দ হয়ে যায়।
জানা গিয়েছে, এলবাস্তো রিবনি পেশায় ইঞ্জিনিয়ার ও এলিজাবেথ ফাক্কো একজন ভিডিও মেকার। কিন্তু তাঁরা হঠাৎ কেন ভারতীয় সন্তান দত্তক নেওয়ার জন্যই আবেদন করলেন? দম্পতির কথায়, ভারতীয়রা অত্যন্ত আবেগপ্রবণ। তাঁরা মানুষকে ভালোবাসতে জানে। মানুষের খেয়াল রাখে, যত্ন করে। তাই ভারতীয় সন্তানের জন্যই আবেদন করেছি। দম্পতির এই কথায় অভিভূত শিশু সুরক্ষা দপ্তরের আধিকারিকরা। জানা গিয়েছে, সোমবার সকালে মেদিনীপুর শহরের ওই হোমে এসে পৌঁছন ইতালিয়ান দম্পতি। তাঁরা দেখা মাত্রই কোলে তুলে নেন শিশুটিকে। শিশুটি যখন হোম ছেড়ে যাচ্ছে, তখন হোমের আয়া, নার্সদের চোখে জল। খেলার সঙ্গীকে হারিয়ে মন খারাপ অন্যান্য শিশুদের।
জেলাশাসক খুরশিদ বলেন, মেদিনীপুরে হোমের শিশু বিদেশে পাড়ি দিচ্ছে। আমরা ওই দম্পতিকে অনুরোধ করছি শিশুটিকে নিজেদের সন্তানের মতোই ভালোবাসতে, যত্ন করতে। আফা নিয়মিত শিশুটির খোঁজ নেবে। বিদেশে শিশুটি কেমন আছে, আমরাও সেই খোঁজ রাখব। জেলাশাসকের সংযোজন, শিশু দত্তক দেওয়ার ক্ষেত্রে পশ্চিম মেদিনীপুর রাজ্যের মধ্যে শীর্ষে রয়েছে। আমরা এনিয়ে আরও প্রচার চালাচ্ছি। অনেকেই জানেন না যে, এখন অনলাইনে আবেদন করে শিশু দত্তক নেওয়া যায়। জেলাশাসক আরও বলেন, হোমের শিশুদের যাতে নতুন করে পরিবার দেওয়া যায়, তার জন্য সবরকম চেষ্টা করছি আমরা। এতে তাদের ভবিষ্যৎ আরও উজ্জ্বল হবে।
No comments