মোদি সরকারের সবথেকে উচ্চাভিলাষী প্রকল্প ভারতমালা বিশ বাঁও জলে
প্রয়াত প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী অটলবিহারী বাজপেয়ির স্বপ্ন ছিল সোনালি চতুর্ভুজ। ঠিক একই কায়দায় প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ঘোষণা করেছিলেন সাধের প্রকল্প ভারতমালা। দেশজুড়ে …
মোদি সরকারের সবথেকে উচ্চাভিলাষী প্রকল্প ভারতমালা বিশ বাঁও জলে
প্রয়াত প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী অটলবিহারী বাজপেয়ির স্বপ্ন ছিল সোনালি চতুর্ভুজ। ঠিক একই কায়দায় প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ঘোষণা করেছিলেন সাধের প্রকল্প ভারতমালা। দেশজুড়ে রাস্তা ও হাইওয়ে নির্মাণের মেগা প্রজেক্ট। তার অধীনেই দিল্লি থেকে গুরুগ্রাম ১৪ লেনের এক্সপ্রেসওয়ে গড়ছে সড়ক পরিবহণ মন্ত্রক। সেটি নির্মাণে কিমি প্রতি ১৮ কোটি টাকা ব্যয় হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু বাস্তবে খরচ দেখানো হয়েছে কিমি পিছু প্রায় ২৫১ কোটি টাকা। এটা কীভাবে সম্ভব? প্রশ্ন তুলেছে দেশের শীর্ষ অডিট সংস্থা কম্পট্রোলার অ্যান্ড অডিটর জেনারেল (ক্যাগ)। কয়েকমাস আগেই ভারতমালা প্রকল্পের এমন বেশ কিছু আর্থিক অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ তারা সামনে আনে। তাতে প্রবল চাপে পড়েছিল মোদি সরকার। সেই চাপ ভারতমালা প্রকল্পের আরও একঝাঁক সঙ্কট হাজির। ন্যাশনাল হাইওয়ে অথরিটির দীর্ঘসূত্রিতা, অনিয়ম এবং ব্যর্থতায় খরচের বহর ক্রমে বেড়েই চলেছে। সরকারি সূত্রের খবর, বিপুল আর্থিক বোঝার জেরে ভারতমালা প্রকল্প বস্তুত বন্ধ করে দেওয়ার পথে হাঁটতে চলেছে কেন্দ্র। বলা হচ্ছে, বিকল্প অন্য প্রকল্প আবার হাতে নেওয়া হবে। কিন্তু চলতি প্রকল্পটি আর এগিয়ে নিয়ে যাওয়া হবে না।
২০১৭ সালে ভারতমালার প্রথম পর্যায়ে ৩৮ হাজার কিমি রাস্তা নির্মাণের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। সামগ্রিক ব্যয় ধরা হয়েছিল ৫ লক্ষ কোটি টাকা। তা ইতিমধ্যেই দ্বিগুণ হয়ে গিয়েছে। প্রায় ১১ লক্ষ কোটি টাকা খরচ হবে এই প্রকল্প শেষ করতে। কোথা থেকে আসবে এই টাকা? তার উপর এখনও পর্যন্ত ২৫ হাজার কিমির বেশি প্রকল্প অনুমোদনই হয়নি। বিগত বছরে সাড়ে ৫ হাজার কিমি অনুমোদিত হয়েছিল। কথা ছিল চলতি আর্থিক বছরে ১২ হাজার ৫০০ কিমি নতুন সড়ক প্রকল্পে অনুমোদন দেওয়া হবে। হয়েছে মাত্র ২,৫৯৫ কিমি, যার কাজ শুরুই হয়নি। এবার আস্তে আস্তে কমিয়ে আনা হচ্ছে অনুমোদন প্রক্রিয়া। কারণ, অর্থমন্ত্রক আর এই বোঝা টানতে রাজি নয়। সম্প্রতি ন্যাশনাল হাইওয়ে অথরিটি তথা সড়ক পরিবহণ মন্ত্রককে তারা বলেছে, কোনও নতুন কাজ যেন শুরু করা না হয়। আবার ক্যাবিনেট কমিটির অনুমোদন না পাওয়া পর্যন্ত জমি অধিগ্রহণ নিয়েও অগ্রসর হওয়ার দরকার নেই। সোজা কথায়, ভারতমালা প্রকল্পের রাশ টেনে ধরা হচ্ছে। কারণ, ১১ লক্ষ কোটি টাকার বিপুল চাপ নিতে পারবে না সরকার। সেই সংস্থানই নেই।
২০১৭ সালে বলা হয়েছিল, ৫ বছরে সমাপ্ত হবে এই প্রকল্প। সেখানে পাঁচ বছরে অর্ধেকও সড়ক নির্মাণ হয়নি। ইতিমধ্যেই এই প্রকল্প শেষের সময়সীমা ২০২৮ সাল পর্যন্ত সম্প্রসারণ করা হয়েছে। কিন্তু কাজের যা হাল, তাতে আগামী পাঁচ বছরের মধ্যে তা সম্পূর্ণ হওয়ার কোনও সম্ভাবনা নেই। এখনও পর্যন্ত ১৫ হাজার কিমি এক্সপ্রেসওয়ে ও হাইওয়ে নির্মিত হয়েছে। মন্ত্রকের টার্গেট ছিল, প্রতিদিন প্রথমে ৫০ কিমি এবং তারপর ১০০ কিমি হাইওয়ে নির্মাণ করার। কিন্তু সেই লক্ষ্যমাত্রা শুরু থেকেই মুখ থুবড়ে পড়েছে। ১০ লক্ষ কোটি টাকার বিদেশি ঋণের জন্য আবেদন করার কথা ভেবেছে সরকার। কিন্তু বর্তমানে বিদেশি ঋণের বোঝা এত বেশি যে তা পাওয়া সহজ নয়। তার উপর শিথিল পারফরম্যান্সের জন্য ভারতমালা প্রকল্পের প্রকল্পের রেটিং কমে গিয়েছে। কোনও প্রকল্পের রেটিং উন্নত না হলে ঋণ পাওয়া যায় না। অতএব, মোদি সরকারের সবথেকে উচ্চাভিলাষী প্রকল্প ভারতমালা বিশ বাঁও জলে।
No comments