অযোধ্যা আন্দোলনের কারিগর আদবানি হলেও মন্দির প্রতিষ্ঠা করলেন নরেন্দ্র মোদিলালকৃষ্ণ আদবানি অযোধ্যা আন্দোলনের কারিগর হলেও মন্দির প্রতিষ্ঠা করতে পারেননি। রামমন্দিরের উৎসবের মুহূর্ত ভুলে গিয়েছে তাঁকে। এই ভুল নরেন্দ্র মোদি করতে চান …
অযোধ্যা আন্দোলনের কারিগর আদবানি হলেও মন্দির প্রতিষ্ঠা করলেন নরেন্দ্র মোদি
লালকৃষ্ণ আদবানি অযোধ্যা আন্দোলনের কারিগর হলেও মন্দির প্রতিষ্ঠা করতে পারেননি। রামমন্দিরের উৎসবের মুহূর্ত ভুলে গিয়েছে তাঁকে। এই ভুল নরেন্দ্র মোদি করতে চান না। লক্ষ্যে তিনি অবিচল—হিন্দুত্বকে কেন্দ্র করে রাজনীতির কোনও প্রাপ্তিই যেন অধরা না থাকে। ধর্ম-রাজনীতির সর্বোচ্চ শিখর একাই স্পর্শ করে অমর হতে চান মোদি। শুক্লা দ্বাদশী, মৃগশিরা নক্ষত্র এবং সঞ্জীবনী যোগের ত্র্যহস্পর্শ অমরত্ব বরপ্রদান করে। কেন? কারণ এরকমই এক যোগে মন্দার পর্বতের ভার বহন করেছিলেন কুর্ম অবতার। উত্থিত হয়েছিল অমৃত। সোমবার ছিল সেরকমই এক মাহেন্দ্রক্ষণ। দুপুর ১২টা ২৯ মিনিটে সেই শুভক্ষণে বহু প্রতীক্ষিত রামলালার মূর্তিতে প্রাণপ্রতিষ্ঠা করলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। অভিজিৎ মুহূর্ত। ৪৮ মিনিটের লগ্নে ৮৪ সেকেন্ডের মাহেন্দ্রক্ষণ। তার মধ্যেই বাস্তব তাঁর রাজনৈতিক স্বপ্ন। এবং সেই পুজোপাঠের পর মন্দিরপ্রাঙ্গণ থেকেই দেশবাসীকে বুঝিয়ে দিলেন, এটা সূচনা মাত্র। আসছে তাঁর রাজনৈতিক অমরত্বের পরবর্তী ধাপ। রামরাজ্য। মোদি বললেন, নতুন ভারত চলবে রামের নীতিতে, রামের বিচারে, রামের আত্মায়, রামের আদেশে, রামের পথে। আজ থেকে এক নতুন কালচক্র বদলের পর্ব শুরু হল। আবার আসছে নতুন এক ভারত। শক্তিশালী, পবিত্র, বিশুদ্ধ এক রাষ্ট্র। রাম হবেন সেই রাষ্ট্রের চেতনা। মোদি এর থেকে আর কতই বা স্পষ্ট করে বলবেন যে, তাঁর ইঙ্গিত হিন্দুরাষ্ট্রের দিকে?
সমাজের স্মৃতি দুর্বল। সে নতুনের বন্দনা করে। রামমন্দিরের এই উৎসব ও উচ্ছ্বাসও এক সময় স্তিমিত হবে। সেটা মোদি জানেন। তাই তঁার দরকার নতুন কিছু। নতুন উত্তেজনা। নতুন লক্ষ্য। সেটাই রামরাষ্ট্র। হিন্দুরাষ্ট্র। এই স্বপ্ন সফল হলে? মোদির পর নতুন কোনও মোদির জন্মের সম্ভাবনা অঙ্কুরেই বিনাশ হয়ে যাবে। অমরত্বের অধিকারী হবেন নরেন্দ্র মোদি।
অমিতাভ বচ্চন থেকে রজনীকান্ত, শচীন তেন্ডুলকর থেকে মুকেশ আম্বানি। বাস্তবিক তারকা সমাবেশ। কখনও শঙ্কর মহাদেবন ভজন গাইছেন, কখনও সোনু নিগম-অনুরাধা পাড়োয়ালরা মন্ত্রোচ্চারণ করছেন গীতা থেকে। বিনোদন, বাণিজ্য ও রাজনৈতিক জগতের মেগাস্টারদের দীর্ঘক্ষণ অতিথি আসনে বসিয়ে রেখে সোমবারের মেগাস্টার হয়ে থাকার জন্য নাটকীয় ছিল নরেন্দ্র মোদির এদিনের রুটিন। পাঁচটি মণ্ডপ পার হয়ে গর্ভগৃহে ঢোকা, কাশীর প্রধান পুরোহিত আচার্য গণেশ্বর দ্রাবিড় ও গোবিন্দ গিরি মহারাজের হাত থেকে কুশের আংটি পরে গঙ্গাজলে তিনবার শুদ্ধিকরণ—সবেতেই ছিল নিখুঁত মহড়ার প্রতিফলন। কুশের আংটি কেন? কুশই একমাত্র অমৃত ধারণ করতে পারে। কুম্ভমেলায় কুশের আংটি পরে স্নান করতে হয়। মোদির লক্ষ্যও যে তাই! রামমন্দিরের কৃতিত্ব এবং হিন্দু হৃদয়-সম্রাট হওয়ার অমৃত ধারণ।
সিয়াবর রামচন্দ্র কী জয়, তিনবার উচ্চারণ করে মোদি ভাষণ শুরু করলেন। সেও ছিল যথারীতি নাটকীয়। ভাষণে মুগ্ধতা সৃষ্টি তাঁর পাশুপত অস্ত্র। তাই হল। আমাদের রাম এসে গিয়েছেন। এই ছিল প্রথম বাক্য। অযোধ্যাজুড়েই যেন গর্জন উঠল। জয়ধ্বনি হল, জয় শ্রীরাম। বাজপেয়ি নন, আদবানি নন, মুরলীমনোহর যোশি নন, উমা ভারতী নন, অশোক সিংঘল কিংবা বিনয় কাটিহারও নন। মোদির ভাষণে বারংবার উঠে এল দু’টি নাম—আমি এবং রাম। আজকের দিনের জন্য তিনি কী কী করেছেন, কতদিন উপবাস করছেন, কোন কোন তীর্থ দর্শন করেছেন, তার খতিয়ান। আর বললেন, ‘রাম আগুন নয়, রাম উজ্জ্বলতা, রাম বিবাদ নয়, রাম সমাধান। রাম ভারতের বিচার। রাম ভারতের আধার। রাম ভারতের আত্মা।’
রামমন্দির এবং দূরদর্শনে দিনভর শোনা গেল, রঘুপতি রাঘব রাজা রাম। কিন্তু বাদ গেল একটি বাক্য। ঈশ্বর আল্লা তেরো নাম। সেখানে অন্তর্ভুক্ত হয়েছে ‘সীতারাম সীতারাম’। মহাত্মা গান্ধীর প্রিয়তম সম্প্রীতির ভজন সংশোধিত! আজই মোদি বলেছেন, নতুন ভারতের উদয় হল। ঠিক বলেছেন।
No comments