পুলিশের জালে গ্রেপ্তার শেখ শাহজাহান?
গ্রেপ্তার শেখ শাহজাহান? সোমবার রাত থেকে এই প্রশ্নেই তোলপাড় গোটা রাজ্য। সন্দেশখালিতে ইডি আধিকারিকদের অভিযান, তাঁদের উপর হামলা, প্রতিরোধের পর একটিই নাম খবরের শিরোনামে—শাহজাহান। কখনও জানা গি…
পুলিশের জালে গ্রেপ্তার শেখ শাহজাহান?
গ্রেপ্তার শেখ শাহজাহান? সোমবার রাত থেকে এই প্রশ্নেই তোলপাড় গোটা রাজ্য। সন্দেশখালিতে ইডি আধিকারিকদের অভিযান, তাঁদের উপর হামলা, প্রতিরোধের পর একটিই নাম খবরের শিরোনামে—শাহজাহান। কখনও জানা গিয়েছে, তিনি হিঙ্গলগঞ্জে, কখনও কুমড়াখালি, কখনও আবার সন্দেশখালিতেই। যাবতীয় এই জল্পনায় লক্ষ্মণরেখা টেনে এদিন রাতে গোয়েন্দা সূত্র ইঙ্গিত দিল, ‘ধরে নিন অপারেশন শেষ।’ তার মানে কি পুলিসের জালে ধরা পড়ে গিয়েছে সন্দেশখালির এই বেতাজ বাদশাহ?
‘প্রতিরোধে’র চারদিন। তারপরও উত্তাপ এতটুকু কমেনি। প্রশাসনের উপর থেকে নিচুতলা পর্যন্ত চাপও তাই ছিল প্রচুর। তার উপর সন্দেশখালি ও বনগাঁয় ইডি আধিকারিকদের আক্রান্ত হওয়ার ঘটনায় জনস্বার্থ মামলা দায়েরের অনুমতি দিয়েছে কলকাতা হাইকোর্ট। সোমবার বিষয়টি নিয়ে প্রধান বিচারপতি টি এস শিবজ্ঞানমের ডিভিশন বেঞ্চের দৃষ্টি আকর্ষণ করেন বিজেপির আইনজীবী সুস্মিতা সাহা দত্ত। মামলা দায়েরের অনুমতি দেন প্রধান বিচারপতি। পাশাপাশি ২০১৯ সালে তিন বিজেপি কর্মীকে খুনের ঘটনাও মাথাচাড়া দিয়েছে এদিন। সেই ঘটনায় পুলিসের চার্জশিটে শাহজাহান শেখ সহ বাকিদের অব্যাহতি দেওয়া হয়েছিল বলে অভিযোগ। পরবর্তীতে সিআইডি যে মামলার তদন্ত করছিল, সেখানে চার্জশিটে নাম থাকলেও পরে শাহজাহান জামিন পেয়ে যান। এদিন এই দু’টি চার্জশিটকে চ্যালেঞ্জ করে হাইকোর্টের দ্বারস্থ হয়েছেন মৃত বিজেপি কর্মীদের পরিবারের সদস্যরা। সিবিআই এবং এনআইএ তদন্তের আর্জি জানিয়ে মামলাও দায়ের হয়েছে।
সূত্রের খবর, মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এই ঘটনার যাবতীয় গতিপ্রকৃতি নিয়েই রীতিমতো বিরক্ত। নাম না করে সন্দেশখালি প্রসঙ্গে এদিন তিনি বিরোধীদের তীব্র সমালোচনাও করেছেন। তাঁর সাফ কথা, ‘আমার সমালোচনা করলে দুঃখ হয় না। তবে বাংলার সমালোচনায় কষ্ট হয়। হুগলির শ্রীরামপুর থানা দেশের মধ্যে সেরার শিরোপা পেয়েছে। কেন্দ্রীয় রিপোর্টেই কলকাতা দেশের সবচেয়ে নিরাপদ শহর। আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি খারাপ থাকলে এই স্বীকৃতি মেলে?’ এদিন তিনি রাজ্য পুলিসের ডিজি রাজীব কুমারকে সন্দেশখালি ইস্যুতে যথাযথ পদক্ষেপ নেওয়ার ব্যাপারে নির্দেশ দিয়েছেন বলেও মুখ্যমন্ত্রীর ঘনিষ্ঠ মহল সূত্রে খবর। গঙ্গাসাগরে রাজীব কুমারের সাংবাদিকদের দেওয়া প্রতিক্রিয়া সেই ইঙ্গিতই দিয়েছে। কারণ ডিজি বলেছেন, ‘যে বা যারাই আইন ভাঙুক, তাদের বিরুদ্ধে কড়া ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’ তার কয়েক ঘণ্টার মধ্যে উত্তর ২৪ পরগনা জেলায় খবর ছড়িয়ে যায়, গ্রেপ্তার হয়েছেন শাহজাহান। রাজ্য পুলিসের তরফ থেকে এই খবরের সত্যতা স্বীকার না করা হলেও, গোয়েন্দাদের শীর্ষমহল জেলা কর্মাধ্যক্ষের গ্রেপ্তারির খবর একেবারে উড়িয়ে দেয়নি। উল্টে তাঁদের সূত্রেই জানা গিয়েছে, এই চারদিনে এলাকাই ছাড়েননি তিনি। ইডির অভিযানের শুরুতে তিনি বাড়িতেই ছিলেন। জমায়েত হয়ে যাওয়ার পর পিছনের দরজা দিয়ে এক অনুগামীর বাইকে চেপে পালিয়ে যান। সন্দেশখালির অন্য বাড়িতে গা ঢাকা দেন তিনি। সূত্রের খবর, নিজের ফোন কোনও এক শাগরেদের হাতে দিয়েই হয়তো হিঙ্গলগঞ্জ থেকে ক্যানিং পর্যন্ত দৌড় করিয়েছেন শাহজাহান। আর নিজে ছিলেন ঘাঁটির আশপাশেই। কোনও না কোনও অনুগামীর বাড়িই ছিল তাঁর এই ক’দিনের আস্তানা। রবিবার রাত দেড়টায় সরবেড়িয়ায় ঢোকেন বলে এলাকায় গুঞ্জন। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক গোয়েন্দা আধিকারিক বলেন, ‘এই খবর নিশ্চিত হওয়ার পরই অপারেশন কনফার্ম করা হয়। বাকিটা সময় মতো জানতে পারবেন।’
No comments