Page Nav

HIDE

Grid Style

GRID_STYLE

Post/Page

Weather Location

Breaking News:

latest

শিখধর্মের প্রবর্তক পরমপূজ্য গুরু নানক জন্মদিন

শিখধর্মের প্রবর্তক পরমপূজ্য গুরু নানক জন্মদিন 
গুরু নানক ১৪৬৯ সালে ভারতের পশ্চিম পাঞ্জাবের তালওয়ান্দি (বর্তমান নাম নানকানা সাহেব) গ্রামে জন্মগ্রহন করেন। গুরু নানকের পিতা মেহেতা কল্যাণ বাই, মাতা ত্রিপতা। পিতা মেহেতা কল্যাণ বাই একজন…

 





শিখধর্মের প্রবর্তক পরমপূজ্য গুরু নানক জন্মদিন 


গুরু নানক ১৪৬৯ সালে ভারতের পশ্চিম পাঞ্জাবের তালওয়ান্দি (বর্তমান নাম নানকানা সাহেব) গ্রামে জন্মগ্রহন করেন। গুরু নানকের পিতা মেহেতা কল্যাণ বাই, মাতা ত্রিপতা। পিতা মেহেতা কল্যাণ বাই একজন সামান্য চাষী, সামান্য কিছু জমিজমা ছিল তাঁর। গাঁয়ের লোক তাঁকে ডাকত মেহেতা কালু বলে। গুরু নানক পিতা মাতার একমাত্র সন্তান।


ছেলেবেলা থেকেই গুরু নানককে নিয়ে দুশ্চিন্তা ছিল পিতামাতার। তার সবকিছুই যেন কেমন অদ্ভুত। আত্মভোলার মতো ঘুরে বেড়ান, সাধু-সন্ন্যাসীদের দেখলেই তাদের কাছে ছুটে যান। নির্জনে বসে থাকেন।


বাবা-মা ভেবেছিল লেখাপড়া করলেই হয়তো সব ঠিক হয়ে যাবে। ৬ বছর বয়সে তাই তাকে পাঠিয়ে দেওয়া হলো গ্রামের পাঠশালায়। সেখানে মাতৃভাষা ছাড়াও শিখেছিলেন ফার্সি ভাষা। তিন বছর পর সংস্কৃত শিক্ষার জন্য তাকে পাঠানো হলো ব্রিজনাথ শর্মা নামে এক পন্ডিতের কাছে। কিন্ত নানকের পাঠ্যবিষয় বাদ দিয়ে ঈশ্বর, ধর্ম আধ্যাত্মিক বিষয়েই ছিল গভীর আগ্রহ। গতানুগতিক পড়াশুনাতে তার কোনো আগ্রহ নেই দেখে বাবা ঠিক করলেন নানককে বাড়ির গরু –ছাগল চরাবার ভার দেবেন।


একদিন নানক ঘুমিয়ে পড়লে তার গরুর পাল ঘুরতে ঘুরতে একজনের ক্ষেতে ঢুকে পড়ল। ক্ষেতের মালিক নালিশ জানালো জমিদারের কাছে। ডাক পড়লো নানকের। নানক জমিদারের কাছে গিয়ে বললেন, আমার গরু কোনো জমির ফসল নষ্ট করেনি। নানকের কথা শুনে জমিদারের লোকজন মাঠে গিয়ে দেখে জমির ফসল যেমন ছিল তেমনই আছে। ক্ষেতের মালিকতো বিস্ময়ে হতবাক।


নানককে এবার ভর্তি করা হলো ফার্সি ভাষার এক মৌলবীর স্কুলে। কিন্তু পড়ায় কোন মন নেই তার। বই-শ্লেট তুলে রেখে নানক মৌলবীকে জিজ্ঞাসা করে ঈশ্বরের কথা, ধর্মের কথা, এই জগৎ সৃষ্টির কথা। অধিকাংশ প্রশ্নেরই কোনো জবাব দিতে পারেন না মৌলবী। ছেলেকে বিষয়মুখী করতে না পেরে মহাভাবনায় পড়ে গেলেন বাবা। 


নানকের বোনের স্বামী জয়রাম ছিলেন সুলতান দৌলত খাঁ লোদীর দেওয়ান। অবশেষে তার সুপারিশে সুলতানের গুদাম ঘরের দেখাশুনার চাকরি পেলেন নানক। যখন কোনো দুঃখী মানুষ আসত তিনি গুদাম থেকে খাবার দান করতেন। নিজে যা মাইনে পেতেন তার অর্ধেকই গরিব-দুঃখী মানুষের পেছনে খরচ করতেন। 


কথিত আছে এক ক্রেতা এসে চাল কিনতে চায়। নানক উচ্চস্বরে গণনা করে চাল মেপে দিচ্ছেন ক্রেতাকে। নানক বলে চলেছেন পরপর সংখ্যা -- "এক-দো -তিন-চার -পাঁচ-ছে-সাত-আট-নও-দশ-এগারা-বারা-তেরা"।

'তেরা' -- বলতেই তাঁর ভাবাবস্হা হয়। তারপর যত কুনকে চাল দেন না কেন, গদ-গদ কন্ঠে নানক বলতে থাকেন, -- "তেরা তেরা তেরা -- সবহী তেরা -- সবহী তেরা"।


কিন্তু নানকের এই সেবার কাজকে ভালোভাবে দেখত না কিছু মানুষ। তারা সুলতানের কাছে গিয়ে অভিযোগ জানাল, নানক গুদামের মাল বিলেয়ে দিচ্ছে। সুলতান কয়েকজন কর্মচারীর উপর তদন্তের ভার দিলেন। সবকিছু পরীক্ষা করে দেখা গেল গুদামের সব মাল হিসেব মতোই আছে।


এদিকে নানক কাজকর্মে মন দিয়েছে জেনে তার বাবা নানকের বিয়ের ব্যবস্থা করলেন। মেয়ের নাম সুলখানি। এই সুলখানির গর্ভে নানকের দুটি সন্তান জন্ম হয়-শ্রীচাঁদ ও লক্ষ্ণীদাস। 


একদিন খুব সকালে নানক নদীতে স্নান করতেই তার অন্তরে এক অদ্ভুত অনুভূতি জেগে উঠল। নিজের অজান্তেই ছুটে গেলেন কিছুদূর একটি পাহাড়ের দিকে। সেখানে পাহাড়ের গুহায় বসে ধ্যানে মগ্ন হয়ে গেলেন। ভুলে গেলেন ঘর-বাড়ি, সংসার ও স্ত্রী-পুত্র। তিনদিন তিনরাত্রি কেটে গেল। অবশেষে তিনি ঈশ্বরের অস্তিত্ব উপলব্ধি করলেন নিজ অন্তরে।


প্রায় কুড়ি বছর ধরে নানক দেশে দেশে তার ধর্মপ্রচার করেছিলেন। পাঁয়ে হেটে, বনজঙ্গল, নদী-নালা, কত মরুভূমির রুক্ষ প্রান্তর, পাহাড়-পর্বত পেরিয়ে তাকে চলতে হতো। যেখানেই তিনি যেতেন, ফুলের সৌরভের মতো মানুষ তার প্রতি আকৃষ্ট হতো। তিনি তাদের বলতেন, ঈশ্বর এক অদ্বিতীয়।


গুরু নানক একেশ্বরবাদের বাণী নিয়ে সারা ভারত ভ্রমণের সময় ১৫০৮ সালে একবার পুরীতে এসেছিলেন। তাঁর সঙ্গে ছিলেন মারদানা নামে এক ভক্ত। মারদানা এসেছিলেন পুরীতে। তিনি তখন ছিলেন ক্ষুধার্ত। কিন্তু অহিন্দু বলে তাঁদের ঢুকতে দেওয়া হয়নি জগন্নাথ মন্দিরে। মারদানার সঙ্গে নানকও মন্দির থেকে ফিরে চলে এলেন সমুদ্রের পাড়ে।


মারদানা তো শুকনো মুখে বসে আছেন। গুরুর কাছে অনুযোগ করছেন‚ এমন জায়গায় তাঁকে নিয়ে এসেছেন তিনি‚ যেখানে মন্দিরে গিয়ে মহাপ্রসাদ পাওয়া যাবে না। স্মিত হেসে গুরু নানক জানালেন‚ চিন্তা না করতে।


কিছুক্ষণের মধ্যে দেখা গেল‚ এক সৌম্যদর্শন ব্রাহ্মণ এসে বালির উপরে তাঁদের দুজনকেই খাবার দিয়ে গেলেন। সোনার থালাবাসনে সুন্দর করে পরিবেশিত। হতবাক মারদানা হাপুস হুপুস করে খেতে লাগলেন।


এদিকে পরের দিন ভোরে পুরীর মন্দিরে হৈচৈ কাণ্ড। খোয়া গেছে জগন্নাথদেবের মহাপ্রসাদের সোনার থালাবাসন। কোথাও খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। সংবাদ গেল পুরীর রাজার কাছে।


তাঁর তখন মনে এল গত রাতে দেখা এক অদ্ভুত স্বপ্নের কথা। সেখানে আবির্ভূত হয়েছিলেন স্বয়ং জগন্নাথদেব। তিনি এসে রাজাকে বলছেন‚ তাঁর সোনার বাসন আছে সমুদ্রের পাড়ে এবং বাসনের কাছে যাঁরা আছেন তাঁদের যেন সমাদরে মন্দিরে নিয়ে যাওয়া হয়।


লোক লশকর নিয়ে রাজা স্বয়ং গেলেন সমুদ্রের পাড়ে। বিস্মিত হয়ে দেখলেন সত্যি সেখানে পড়ে আছে জগন্নাথদেবের সোনার বাসনপত্র। তাতে লেগে আছে মহাপ্রসাদের অংশ। বাসনের কাছেই ধ্যানমগ্ন এক বৃদ্ধ।


পুরীর রাজা অপেক্ষা করতে লাগলেন। ধ্যানভঙ্গ হতে রাজাকে দেখতে পেলেন গুরু নানক। তিনি জানালেন কীভাবে মন্দির থেকে প্রত্যাখ্যাত হয়েছেন তাঁরা। তারপর জানালেন কীভাবে এক সৌম্যদর্শন ব্রাহ্মণ এসে দিয়ে গেছেন ওই প্রসাদ।


রাজামশাইয়ের বুঝতে আর কিছু বাকি থাকল না। তিনি বুঝলেন স্বয়ং জগন্নাথদেব এসে ওই প্রসাদ দিয়ে গেছেন অভুক্তদের। তারপর স্বপ্নাদেশ দিয়েছেন রাজাকে।


রাজা বুঝলেন ওই ধ্যানমগ্ন ব্যক্তি কোনও দিব্যপুরুষ। তিনি তখন মহা সমাদরে গুরু নানক ও মারদানাকে নিজের প্রাসাদে নিয়ে গেলেন। তারপরে মন্দিরে। কথিত‚ শিখ ধর্মের বিখ্যাত আরতি ‘গগন মে থাল‘ পুরীতে বসেই রচনা করেছিলেন গুরু নানক।


সেই ঐতিহ্য আজও প্রবহমান। পুরীর মন্দিরে আসেন বহু শিখ পুণ্যার্থীরা। অন্য অহিন্দুদের জন্য এই মন্দিরের দরজা বন্ধ হলেও গুরু নানকের অনুগামীদের জন্য অবারিত দ্বার।


একবার নানক স্থির করলেন, মুসলমানদের দুই পবিত্র তীর্থস্থান মক্কা আর মদিনায় যাবেন। নানকের সঙ্গী হন পীর সৈয়দ আহমেদ হাসান ও পীর জালালউদ্দীন। এরা মুসলামান হলেও নানকের আধ্যাত্বিক শক্তি দেখে মুগ্ধ হয়েছিলেন। নানকের পরনে মুসলমান দরবেশের পোষাক। মক্কা-মদিনা হয়ে নানক যান প্যালেষ্টাইন।


বহু দিন নিজের স্বদেশভূমি ত্যাগ করে এসেছেন এবার ফেরার পথ ধরলেন নানক। পথ চলতে চলতে নানক নির্জন প্রান্তরে এসে পৌঁছলেন। দীর্ঘ পথশ্রমে তৃষ্ণার্ত হয়ে পড়েছিলেন তিনি। এক শিষ্যকে বললেন, দেখতো কাছাকাছি কোথাও জল আছে কিনা।


শিষ্য গিয়ে দেখে কাছের গ্রামে একটা পুকুর রয়েছে। কিন্তু পুকুরে এক ফোটা জল নেই। শিষ্য ফিরে এসে সব কথা বলতেই নানক বললেন, গুরুর নাম করে সেখানে আবার যাও জল পাবে।


এবার পুকুরে যেতেই শিষ্য বিস্ময়ে হতবাক, সমস্ত পুকুর জল আর জল, কি অপূর্ব সে জলর স্বাদ। ঠিক যেন অমৃত। লোকে তার নাম দিল অমৃত সায়র। আর তার থেকেই অমৃতসর কথাটির উৎপত্তি। ১৮০২ সালে মহারাজ রঞ্জিত সিং ওই পুকুর সংস্কার করে স্বর্ণমন্দির স্থাপন করেন। এই স্বর্ণমন্দির শিখদের এক পবিত্র তীর্থ।


গুরু নানক একবার তার শিষ্যদের নিয়ে নদীর ধার ধরে বেড়াতে বেরিয়েছিলেন। গুরু আগে হাঁটছেন, শিষ্যরা পিছনে। গুরু ক্লান্তিহীন ভাবে হাঁটছেন তো হাঁটছেনই — শিষ্যরা যেন পারছেন না। ক্ষুধায়, তৃষ্ণায়, ক্লান্তিতে তাঁরা অবসন্ন হয়ে পড়েছেন। দিনের শেষে অপারগ হয়ে শিষ্যেরা গুরু নানককে বললেন তাঁদের অসামর্থ্যের কথা — ক্ষুধা-তৃষ্ণার কথাও।


গুরু নানক শুনে যেন ব্যস্ত হয়ে পড়লেন আর তাড়াতাড়ি নদীর ধারে একটি গাছের তলায় সকলকেই বিশ্রাম নিতে বললেন। বিশ্রামের ব্যবস্থা তো হলো কিন্তু আহার্য কোথায় ? সবাই গুরুর মুখের দিকে তাকিয়ে, গুরু কিন্তু উদাসীন।


হঠাৎ দেখা গেল নদীর স্রোতে একটি কুকুরের গলিত মৃতদেহ ভাসতে ভাসতে যাচ্ছে। গুরু নানক বলে উঠলেন 'ওই মৃত পশুটিকে নিয়ে এসো আর ওটাই আমাদের আজকের আহার্য হবে।'


দূর থেকেই যে জিনিসটার দুর্গন্ধ উঠছিল — তাকে আনাই তো দুর্বিষহ, আবার গুরু আজ্ঞায় ওটাকেই খেতে হবে — এই ভয়ে কেউই আর অগ্রসর হোল না। গুরু নানক সকল শিষ্যের দিকেই দৃষ্টিপাত করতে লাগলেন আর একে একে সবাই মস্তক অবনত করতে থাকল।


শেষকালে গুরুদেব অঙ্গদের দিকে দৃষ্টিপাত করতেই অঙ্গদ বিনা দ্বিধায় উঠে পড়লেন। গুরুদেবের চরণ বন্দনা করে অনায়াসে নদীতে নেমে সেই পূতি-গন্ধময় শব তুলে আনলেন গুরুর নিকট। দুর্গন্ধে বাকি শিশুরা তো নাকে কাপড় দিয়ে সরেই গেলেন খানিকটা।


গুরুদেব অঙ্গদকে আদেশ করলেন — 'আহার্য সমানভাবে ভাগ করো'। অঙ্গদ আদেশ মাত্রই কৃপাণ বের করে 'ওয়া গুরুজিকে ফতে' বলেই মারলেন কোপ। কোপ মারার সাথে সাথেই কোথায় দুর্গন্ধ ?


দেখা গেল একটি সুন্দর পাত্রে রক্ষিত আছে সুগন্ধী গরম ‘সুরুয়া’ (এক ধরনের সুজির মত পায়েস যা পাঞ্জাবি লোকেরা খেতে খুব ভালোবাসে) !

নানক বাকি শিষ্যদের খাদ্যে অংশগ্রহণে আহ্বান জানালেন। লজ্জিত বাকি ভক্তরা বুঝলেন যে, গুরুজী কেন অঙ্গদকে বেশি ভালোবাসেন। তাঁর তুলনায় তাঁদের গুরুভক্তি বা যোগ্যতা সত্যিই নগণ্য। এই ভাবেই পরবর্তী গুরু হিসাবে অঙ্গদকে মেনে নিতে বাকিদের কোন অসুবিধা হলো না।

১৫৩৯ সালের কথা - নানক বুঝতে পেরেছিলেন তার জীবনের কাল শেষ হয়ে এসেছে। তিনি সে কথা বলতেই দলে দলে তার শিষ্যরা এসে উপস্থিত হলো। এদের মধ্যে যেমন ছিল হিন্দু তেমনি ছিল মুসলমান। নানক বুঝতে পেরেছিলেন তার দেহ সৎকার করা নিয়া হিন্দু মুসলমানের মধ্যে বিবাদ দেখা দেবে। তাই দুই দলের শিষ্যদের ডেকে বললেন, তোমরা ফুল নিয়ে এসে আমার দুপাশে রাখ। যাদের ফুল সতেজ থাকবে তারাই আমার দেহের সৎকারের অধিকারী হবে। এবার তোমরা প্রার্থনা শুরু কর।

সমস্ত রাত ধরে চলল প্রার্থনা, ভজন, নামগান। ভোরবেলায় দরজা খুলতেই সকলে দেখল নানকের দেহ নেই। সেখানে রয়েছে রাশিরাশি তাজাফুল। সব মিলেমিশে একাকার হয়ে গিয়েছে। এইভাবে মৃত্যুর মধ্যেও মানুষের মিলন ঘটিয়ে গেলেন গুরু নানক।

গুরু নানকের কয়েকটি বাণী --

  গরিব মানুষদের কখনও ভুলবে না।

সমাজে ধনী-গরিব বৈষম্য আজও যেমন প্রবল ভাবে আছে, আজ থেকে প্রায় ৫০০ বছর আগেও ছিল। তিনি বলতেন, ঈশ্বর মানুষের ধর্ম দেখেন না। তার জাতি দেখেন না, ধনী–দরিদ্র দেখেন না, তার চোখে সকলেই সমান। তিনি শুধু বিচার করেন মানুষের কর্ম। যে মানুষ যেমন কাজ করবে সে তেমনি ফল ভোগ করবে।

  ভগবান এক।

একটাই ধর্ম, তা হল মানব ধর্ম। গুরু নানকের কথায়, 'হিন্দু, মুসলিম বলে কিছু নেই।' গুরু নানক হরিদ্বার সফরে গিয়ে দেখেন, গঙ্গার জলে নেমে মানুষ সূর্ষের দিকে মুখ করে জলাঞ্জলি দিচ্ছেন। তাঁদের বিশ্বাস, পূর্ব দিকে স্বর্গের দ্বার রয়েছে। গুরু নানক গঙ্গার জল নিয়ে পশ্চিমে জলাঞ্জলি দিতে শুরু করলেন। অনেকেই হাসাহাসি শুরু করে দিলেন। কেউ কেউ রেগেও গেলেন। তখন নানকের উত্তর ছিল, যদি তোমাদের ছেটানো গঙ্গা জল স্বর্গে যেতে পারে, তাহলে আমার পশ্চিমে ছেটানো গঙ্গাজল কেন পঞ্জাব যাবে না। পঞ্জাব তো স্বর্গের থেকে কাছে।

  নারী-পুরুষ সমান সমান।

তিনি দেখেছিলেন, কোনও মন্দির বা মসজিদে মেয়েদের ঢুকতে দেওয়া হয় না। মনে খুব আঘাত পেয়েছিলেন। তিনি শিখ সম্প্রদায়ের মহিলাদের মন্দিরে যাওয়ার অনুমতি দিয়েছিলেন। 


  উদার হও।

মনকে উদার হওয়ার বার্তা দিয়েছিলেন নানক। বলেছিলেন, জঙ্গলের মধ্যে ঢুকলে আলোর সন্ধান পাবে না। তাই উদার হও।


  জীবনের ৫ শত্রু।

জীবনে ৫টি শত্রুকে চিহ্নিত করেছিলেন গুরু নানক। অভিমান, রাগ, লোভ, সংযুক্তি ও আকাঙ্খা। 


সঠিক গুরু নির্বাচন কর।

জীবনের সঠিক পথের জন্যই গুরুর প্রয়োজন। নানক বলেছিলেন, তীর্থ ভ্রমণের থেকে ভালো জীবনে সঠিক পথে এগিয়ে যাওয়া।


স্বাবলম্বী হও।

নিজের কাজ নিজে করো। কারও সাহায্য ছাড়াই কাজ করার চেষ্টা করো।


কুসংস্কারকে দূর হঠাও।

কোনও কুসংস্কারকে প্রশ্রয় দিও না। কারণ কুসংস্কার মানসিক ভীতি তৈরি করে। জীবনকে অন্ধকারে ঠেলে দেয়। সারল্যই সৌন্দর্য।


শিখ সম্প্রদায়ের মানুষের জন্য গুরু নানক মাত্র ৩টি শপথ নিতে বলেছিলেন -- 

১.  বন্ধ চাকো।  

অর্থাৎ সকলের সঙ্গে মেলামেশা করো। 

২.  কিরাত করো ও নাম জাপনা।  

অর্থাৎ সৎ জীবন যাপন কর, ঈশ্বরের নামকর।

৩.  ভ্রমণ করো।    

মানসিক বিকাশের জন্য ভ্রমণের বিকল্প নেই। দেশ-বিদেশে ঘুরে বেড়াও।

ভারত ছাড়াও বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তে শিখ সম্প্রদায়ের মানুষ গুরু নানকের অমূল্য বাণী ও তাঁর আধ্যাত্মিক জীবনকে স্মরণ করেন। আসল গুরু তো তিনিই, যিনি অন্ধকার থেকে টেনে তোলেন। জীবনযাপনের সঠিক পথ দেখিয়ে দেন। পবিত্র ও সৎ ভাবে বাঁচার প্রেরণা দেন। প্রকৃত গুরুর মতোই গুরু নানকও শিখিয়েছিলেন কী ভাবে বদ্ধ সংসারেও মুক্তির পথ খুঁজে পাওয়া যায়। তাঁর সেই বাণী, 'ঈশ্বর আর মানুষ আলাদা নয়। মানুষকে ভালোবাসলেই ঈশ্বরকে পাওয়া যায়।'

No comments