উপযুক্ত তথ্যপ্রমাণের অভাবে ফাঁসির সাজা মকুব করে দু’জনকেই আমৃত্যু কারাদণ্ডের নির্দেশ দিয়েছে আদালত
নিম্ন আদালতে দেওয়া ফাঁসির সাজা রদ হয়ে গেল হাইকোর্টে! ২০১৩ সালের ৭ জুন উত্তর ২৪ পরগনার কামদুনিতে এক কলেজছাত্রীকে গণধর্ষণ ও হত্যার ঘটন…
উপযুক্ত তথ্যপ্রমাণের অভাবে ফাঁসির সাজা মকুব করে দু’জনকেই আমৃত্যু কারাদণ্ডের নির্দেশ দিয়েছে আদালত
নিম্ন আদালতে দেওয়া ফাঁসির সাজা রদ হয়ে গেল হাইকোর্টে! ২০১৩ সালের ৭ জুন উত্তর ২৪ পরগনার কামদুনিতে এক কলেজছাত্রীকে গণধর্ষণ ও হত্যার ঘটনায় তোলপাড় হয়েছিল রাজ্য। শুক্রবার সেই সংক্রান্ত মামলার রায় ঘোষণা করে কলকাতা হাইকোর্ট। উপযুক্ত তথ্যপ্রমাণের অভাবে সইফুল আলি এবং আনসার আলির ফাঁসির সাজা মকুব করে দু’জনকেই আমৃত্যু কারাদণ্ডের নির্দেশ দিয়েছে বিচারপতি জয়মাল্য বাগচি ও বিচারপতি অজয়কুমার গুপ্তর ডিভিশন বেঞ্চ। ফাঁসির সাজা দেওয়া হয়েছিল আর এক দোষী সাব্যস্ত আমিন আলিকেও। তাকে মুক্তির নির্দেশ দিয়েছে ডিভিশন বেঞ্চ। শুধু তাই নয়, নিম্ন আদালতে আমৃত্যু কারাদণ্ডে দণ্ডিত ইমানুল ইসলাম, আমিনুর ইসলাম এবং ভোলানাথ নস্করকে মুক্তির নির্দেশ দিয়েছে আদালত। হাইকোর্টের এহেন নির্দেশে স্বভাবতই হতাশ কামদুনিবাসী। বহু প্রতীক্ষিত রায় শুনতে এদিন আদালতে এসেছিলেন কামদুনি আন্দোলনের মুখ টুম্পা কয়াল ও মৌসুমি কয়াল সহ অনেকে। রায়ের পর আদালত চত্বরেই তাঁরা কান্নায় ভেঙে পড়েন। এই নির্দেশ চ্যালেঞ্জ করে সুপ্রিম কোর্টে যাওয়ার কথা জানিয়েছেন নির্যাতিতার পরিবারের আইনজীবী শীর্ষেন্দু সিংহ রায়। প্রয়োজনে নির্ভয়া-কাণ্ডের আইনজীবীর সাহায্য নেওয়া হবে বলে জানান টুম্পা, মৌসুমিরা।
রাজ্য পুলিসের পর এই ঘটনার তদন্তের ভার যায় সিআইডির হাতে। মোট ন’জনকে অভিযুক্ত দেখিয়ে চার্জশিট পেশ করে তদন্তকারী সংস্থা। ২০১৬ সালের ৩০ জানুয়ারি মূল অভিযুক্ত সইফুল আলি মোল্লা, আনসার মোল্লা এবং আমিন আলিকে ফৌজদারী দণ্ডবিধির ৩৭৬ এ, ৩৭৬ ডি, ৩০২, ১২০ বি এবং ২০১ ধারায় দোষী সাব্যস্ত করে ফাঁসির সাজা শোনান নগর দায়রা আদালতের বিচারক সঞ্চিতা সরকার। সেই সঙ্গে ৩৭৬ ডি, ১২০ বি এবং ২০১ ধারায় দোষী সাব্যস্ত ইমানুল ইসলাম, আমিনুল ইসলাম এবং ভোলানাথ নস্করকে আমৃত্যু কারাবাসের সাজা দেন তিনি। বিচার চলাকালীন গোপাল নস্কর নামে এক অভিযুক্তের মৃত্যু হয়। তথ্যপ্রমাণের অভাবে মুক্তি পায় অন্য দুই অভিযুক্ত রফিক গাজি এবং নুর আলি।
ওই নির্দেশ চ্যালেঞ্জ করে হাইকোর্টের দ্বারস্থ হয়েছিল সাজাপ্রাপ্তরা। সেই মামলারই এদিন রায় দেয় হাইকোর্ট। ডিভিশন বেঞ্চ জানিয়েছে, নিম্ন আদালতে আমৃত্যু কারাদণ্ডে দণ্ডিত ইমানুল ইসলাম, আমিনুর ইসলাম এবং ভোলানাথ নস্করের ক্ষেত্রে ৩৭৬ডি ধারায় অপরাধ প্রমাণ হয়নি। আইনের যে ধারায় তারা দোষী সাব্যস্ত হয়েছে, তাতে সর্বোচ্চ সাজার মেয়াদ সাত বছর। ইতিমধ্যে তারা ১০ বছর জেলবন্দি রয়েছে। তাই তাদের মুক্তি দেওয়া হচ্ছে। সইফুল এবং আনসারকে ফাঁসির সাজা দেওয়ার ক্ষেত্রে ধর্ষণ ও খুনের পিছনে পূর্ব পরিকল্পনার তত্ত্বকে গুরুত্ব দিয়েছিল নিম্ন আদালত। কিন্তু এই পূর্ব পরিকল্পনার কোনও প্রমাণ মেলেনি। তাই তাদের ফাঁসির সাজা মকুব করা হচ্ছে। আমিন আলির বিরুদ্ধেও তথ্যপ্রমাণ নেই বলে জানিয়েছে হাইকোর্ট।
No comments