Page Nav

HIDE

Grid Style

GRID_STYLE

Post/Page

Weather Location

Breaking News:

latest

স্তন ক্যানসার সচেতনতা দিবস :

স্তন ক্যানসার সচেতনতা দিবস : কিছু বিষয়ে লজ্জা করতে হয় না। চিকিৎসাশাস্ত্র বলছে, যে কোনো নারীই স্তন ক্যানসারে আক্রান্ত হতে পারেন। নারীদের মাঝে এই রোগটিকে এড়িয়ে যাওয়ায় লজ্জা প্রাধান্য পেলেও, পুরুষদের অনেকেই নিজেদের স্তন ক্যানসার হয়…

 




 স্তন ক্যানসার সচেতনতা দিবস : 

কিছু বিষয়ে লজ্জা করতে হয় না। 

চিকিৎসাশাস্ত্র বলছে, যে কোনো নারীই স্তন ক্যানসারে আক্রান্ত হতে পারেন। নারীদের মাঝে এই রোগটিকে এড়িয়ে যাওয়ায় লজ্জা প্রাধান্য পেলেও, পুরুষদের অনেকেই নিজেদের স্তন ক্যানসার হয়েছে, সেটা বিশ্বাসই করতে নারাজ। এমন অভিজ্ঞতার কথা অহরহই শোনা যায় ক্যানসার চিকিৎসকদের কাছে।

এর ওপর আছে ক্যানসার চিকিৎসার নানা বিড়ম্বনা। অর্থনৈতিক উন্নয়নের সঙ্গে সঙ্গে দেশে ক্যানসারের সব ধরণের চিকিৎসা বিদ্যমান থাকলেও তার সুব্যবস্থাপনা নিয়ে আছে বিস্তর প্রশ্ন। এছাড়াও ব্যয়বহুল এসব চিকিৎসায় হিমশিম খেতে হয় মধ্যবিত্ত থেকে নিম্নবিত্ত মানুষের। তার উপর সত্যিকার অর্থেই কোথায় ভালো একটু চিকিৎসা পাবেন, সেই তথ্য নিয়েও আছে হাজারও বিভ্রান্তি। আর এসব বিবেচনায় ক্যানসার মানেই ভোগান্তির এক দীর্ঘ অধ্যায়।

আর সে কারণেই একটু নির্বিঘ্নে বেঁচে থাকার জন্য আমাদের মতো স্বাস্থ্য ব্যবস্থার দেশে ক্যানসার প্রতিরোধ ছাড়া আর কোনো সুখকর উপায় নেই। শরীরের ভেতরের ক্যানসারগুলো তো বুঝতে সমস্যা হয়, কিন্তু স্তন ক্যানসারের লক্ষণগুলো উঁকি দেয় শরীরের বাইরেই। শুধু চাই একটু সচেতনতা, আর একটু সতর্কতা।

আর এই সতর্কতা চাই নারী পুরুষ সবারই! অবাক হওয়ার কিছু নেই কারণ, পুরুষরাও এখন স্তন ক্যানসারে আক্রান্ত হচ্ছেন। আমাদের দেশে প্রতিনিয়তই বাড়ছে স্তন ক্যানসারে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা। নারী-পুরুষ মিলে তা ৮.৩%। স্তন ক্যানসার সচেতনতা নিয়ে কাজ করে এমন সংগঠনগুলোর উদ্যোগে ২০১৩ সালে সচেতনতার কাজ শুরু হয়। বেসরকারিভাবে ১০ অক্টোবর স্তন ক্যানসার সচেতনতা দিবস পালন শুরু করে।

আপনি কি জানেন স্তন ক্যানসার যদি প্রাথমিক পর্যায়ে দ্রুত শনাক্ত করা যায়, তাহলে পুরোপুরি এর নিরাময় সম্ভব? আর সেজন্য বাড়িতে বসে নিজেই নিজের স্তন পরীক্ষা করতে পারবেন। আর ২০ বছর বয়স থেকেই নিজে স্তন পরীক্ষা করার পরামর্শ দিয়ে থাকেন চিকিৎসকেরা। আজকাল ইউটিউবে কীভাবে সেটি করবেন, তার দেশ-বিদেশের নানান ভিডিও আছে বিস্তর। নিজের মুঠোফোন দেখেই সেটি সম্ভব। কিন্তু তারপরও নিস্তার কই! আমাদের তো অনেক লজ্জা! কখনও নিজের কাছে লজ্জা, কখনও পরিবার-পরিজন, কখনও সমাজ কতজনের জন্য যে আমাদের লজ্জা বরাদ্দ তার ইয়ত্তা নেই।

একজনের জীবনের অভিজ্ঞতা থেকেই যদি বলি, তাঁর মা মারা গেছেন ওভারিয়ান ক্যানসারে। ওভারিতে ছোট্ট একটা সিস্ট ছিল আর সেটিই একসময় পরিণত হয়েছে ক্যানসার টিউমারে। প্রথম কয়েকমাস তো লজ্জাতেই বলেননি কাউকে। তারপর সেটি চিকিৎসকের কাছে ধরা পড়লে চলে আরও দুই মাস মেডিসিনে তাকে ঘায়েল করার চেষ্টা। কিন্তু ততক্ষণে যা হবার, তাই হয়েছে, টিউমার পরিণত হয়েছে ক্যানসারে। সেটি ফেলেও রক্ষা হয়নি। সাড়ে তিন বছরের অবর্ণনীয় লড়াই শেষে অকালেই তিনটি সন্তানকে অনাথ করে চলে যেতে হয়েছে চিরতরে।

জীবন থেমে থাকেনি। তারা ঠিকই পথ চলছে। কিন্তু মাথার উপর থেকে ছায়াটাই শুধু হারিয়ে গেছে। শতপ্রাপ্তির মাঝেও তাদের কোথায় যেন একটা শূন্যতা সবকিছু গ্রাস করে ফেলে। আর তাই সবার কাছে করজোরে মিনতি করি- কিছু বিষয়ে লজ্জা করতে নেই। নিজে স্তন পরীক্ষা করুন। স্তন ক্যানসার থেকে দূরে থাকুন। পরিবার পরিজন নিয়ে একটি নির্মল সুন্দর জীবন কাটান।

স্তন ক্যানসার থেকে বাঁচুন  !! 

আজ পালিত হচ্ছে জাতীয় ক্যানসার সচেতনতা দিবস। এই দিনটি পালনের উদ্দেশ্যই হল দ্রুত এই মারণরোগের নির্ধারণ এবং চিকিৎসা। বেশ কিছু ক্যানসার রয়েছে যা ঠিক সময় ধরা পড়লে সম্পূর্ণ সেরে ওঠা সম্ভব। যার মধ্যে অন্যতম হল স্তন ক্যানসার। যা মহিলাদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি দেখা যায়। 

স্তন ক্যানসার নিয়ে আলোচনায় বিশিষ্ট ক্যানসার বিশেষজ্ঞ ডাঃ অরুন্ধতী চক্রবর্তী। লিখেছেন শর্মিষ্ঠা ঘোষ চক্রবর্তী। 

গত শতকের আশি-নব্বইয়ের দশকের সময়সীমায় সার্ভাইকাল বা জরায়ুর মুখের ক্যানসার ছিল মহিলাদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি। তারপর ট্রেন্ড বদল হয়েছে এবং ধীরে ধীরে সেই জায়গায় এসছে স্তন ক্যানসার। আমাদের দেশে মহিলাদের যতগুলো ক্যানসার হয়, তার মধ্যে ২৫ থেকে ২৭ শতাংশই স্তন ক্যানসার। এদেশে প্রতিবছর একলক্ষ পঞ্চাশ হাজার স্তন ক্যানসার আক্রান্ত রোগী পাওয়া যায়। এর নির্দিষ্ট কারণ জানা নেই। তবে বলা যেতে পারে, এখন মহিলারা বেশির ভাগ কর্মরত, তাঁদের দেরিতে বিয়ে হয়। দেরিতে বাচ্চা হয়, যাকে বলে লেট প্রেগনেন্সি, ফলে বেশির ভাগ মা শিশুর জন্মের পর আর ব্রেস্টফিড করাতে পারছে না বা চাইছেন না। এর ফলশ্রুতি হিসেবে স্তন ক্যানসার অনেকটা বেড়ে গেছে। সেই সঙ্গে স্থূলতা, অ্যালকোহল নেওয়া, জেনেটিক ইত্যাদি কারণও আছে।

সার্ভাইকাল, ওরাল এবং ব্রেস্ট ক্যানসার এই তিনটে মহিলাদের খুব কমন তিনটি ক্যানসার। যার মধ্যে এদেশে এবং বিদেশে স্তন ক্যানসারের পরিসংখ্যান অনেক বেশি।

কেন হয় স্তন ক্যানসার ? 

স্তনের মধ্যে থাকা ডাক্টস বা লোবিউলস আচ্ছাদিত ইপেথেলিয়াম থেকে উদ্ভূত হয় এবং এই ক্যানসার ডাক্টাল বা লোবুলার কারসিনোমা হিসেবে শ্রেণিবদ্ধ। আরও অনেক ধরনের স্তনের ক্যানসার রয়েছে, তবে বেশিরভাগই ডাক্ট এবং লোবিউল থেকেই হয়।

লক্ষণ : 

একদম ব্যথাহীন মাংসপিণ্ড বা পেইনলেস লাম্প দেখা যায়। যার ফলে অনেকেই এটাকে গুরুত্ব দেন না, ফল মারাত্মক হয়।

অনেকসময় দেখা যায় লাম্পটা হয়তো স্তনে নেই পরিবর্তে অ্যাকজিলা বা বগলের নিচে রয়েছে। অ্যাকজিলাতে ব্রেস্টের কিছু টিস্যু ছড়িয়ে যায় ফলে ওখানেই লাম্পটা হয়।


কী করে বুঝবেন  ? 


স্তনের আকৃতিগত পরিবর্তন।

স্তনের চারপাশে লাল রাশ, ফুসকুড়ি।

স্তনবৃন্ত থেকে রক্ত বা রস নিঃসরণ হওয়া।

অনেক ক্ষেত্রেই স্টেজ ফোরে গিয়ে স্তন ক্যানসার ধরা পড়ে। দেখা গেল, অসম্ভব মাথার যন্ত্রণা, খুব বমি বমি ভাব, কোমরের ব্যথা কমছেই না, কনভালশন হচ্ছে। ব্রেনে একটা টিউমার রয়েছে। সেটা বায়োপসি করে দেখা গেল ক্যানসার, কিন্তু তার শিকড়টা কোথায় খুঁজতে গিয়ে ধরা গেল যে, স্তন থেকেই এর সূত্রপাত হয়েছে, সেখান থেকে ব্রেনে। এটাকে বলে মেটাস্টেটিক অর্থাৎ প্রাইমারিটা ব্রেস্ট ছড়িয়ে গেছে ব্রেনে।

আবার প্রচণ্ড কাশি হচ্ছে কিছুতেই কমছে না। সেখানে অনেক পরীক্ষা-নিরীক্ষার পর দেখা গেল স্তন ক্যানসার কিন্তু ছড়িয়ে গেছে লাং-এ। এইভাবে লিভারেও হয়।

স্তন ক্যানসার মেয়েদের মধ্যে বেশি হলেও পুরুষের মধ্যেও দেখা যায়। পুরুষের স্তন ক্যানসার খুব রেয়ার, তবে লক্ষণ একই।

বয়ঃসীমা : 

বিদেশে ষাটোর্ধ্ব মহিলাদের মধ্যে স্তন ক্যানসার বেশি হয়, কিন্তু এদেশে বা যে কোনও ডেভেলপিং কান্ট্রিতে অনেকটা আগে স্তন ক্যানসার দেখা দেয়। ৪০ বছরের পর থেকেই স্তন ক্যানসার হয়।

যখনই এটা কমবয়সে হয়, তখনই এর রিস্ক ফ্যাক্টর অনেক বেড়ে যায়।

কেন স্তন ক্যানসার বেশি  ? 

আমাদের দেশে স্তন ক্যানসারের আক্রান্তরা স্টেজ ওয়ানে খুব কম আসে, মাত্র আট থেকে দশ শতাংশ। বিদেশে তিরিশ থেকে পঞ্চাশ শতাংশের শুধু স্টেজ ওয়ানেই রোগটা ধরা পড়ে যায়, ওরা এতটাই সচেতন। এখানে চট করে কেউ স্তন ক্যানসার নিয়ে ভাবতে চায় না। সচেতনতার অভাব।

খুব খরচসাপেক্ষ চিকিৎসা সঙ্গে সামাজিক ভয় ও চাপ থাকে, তাই সহজে কেউ পরীক্ষা করাতে চায় না। লুকিয়ে রাখে। ফলে শেষমুহূর্তে ধরা পড়ে, সুস্থ হওয়ার সম্ভাবনা থাকে না।

স্তন ক্যানসার কিউরেবল। স্টেজ ওয়ানে ধরা পড়লে ৯৫ শতাংশ রোগী সম্পূর্ণ সুস্থ হয়ে যায়। স্টেজ টুতে ৭০ শতাংশ, স্টেজ থ্রিতে ৫০ শতাংশ, স্টেজ ফোরে সেটা আরও কমে গিয়ে দাঁড়ায় ২০ শতাংশ। কিন্তু ক্যানসার স্ক্রিনিংও এখানে খুব কম, সেলফ এগজামিনেশন অফ ব্রেস্ট বিষয়টা অর্ধেক মহিলা জানেন না বা জানলেও করেন না, ফলতঃ রোগটা হাতের বাইরে চলে যাচ্ছে।

সেলফ এগজামিনেশন :

তিরিশ থেকে পঁয়ত্রিশ এর ঊর্ধ্বে পিরিয়ডের সাতদিন পরেই প্রতি মাসে সেলফ ব্রেস্ট এগজামিন জরুরি। কিংবা ক্লিনিক্যাল ব্রেস্ট এগজামিনেশন, যাকে বলা হয় সিবিই। সেটা হল-  প্রতি দু’বছর অন্তর ফ্যামিলি ফিজিশিয়ানকে দিয়ে পরীক্ষা করানো। বিশেষ করে যাঁদের পরিবারে স্তন ক্যানসারের ইতিহাস আছে, তাঁদের অনেক বেশি সতর্ক হতে হবে।

পরীক্ষা-নিরীক্ষা : 

স্তন ক্যানসারের জন্য ম্যামোগ্রাফি করতে হবে। ৪০-এর পরে প্রতি দু’বছর অন্তর ম্যামোগ্রাফি করা উচিত। আল্ট্রাসাউন্ড ব্রেস্টও খুব কার্যকরী একটি পরীক্ষা।

নিজে সচেতন হোন : 

আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে নিজে স্তনে কোনও লাম্প আছে কিনা, পরীক্ষা করুন। পিরিয়ডের সাতদিন পর বা যাঁদের মেনোপজ হয়ে গেছে, তাঁদের মাসের প্রথম রবিবার ধরে সেলফ এগজামিনেশন করতে হবে। শুয়ে পরীক্ষা করলে কাঁধের তলায় একটা বালিশ রাখুন। ডান হাত দিয়ে বামদিকে স্তন, একইভাবে বাঁহাত দিয়ে ডানদিকের স্তন পরীক্ষা করতে হবে হাতের তালুর সাহায্যে। চেপে চেপে অনুভব করতে হবে, কোনও লাম্প আছে কি না। শুধু স্তন নয়, বগলের নিচটাও নিজেকেই পরীক্ষা করতে হবে।

চিকিৎসা : 

স্তন ক্যানসারের ক্ষেত্রে সাজার্রি, রেডিথেরাপি, কেমোথেরাপি, হরমোন থেরাপি এই সব ধরণের চিকিৎসাই রয়েছে। এখন আরও উন্নত হয়েছে চিকিৎসা পদ্ধতি। তাই ছোট লাম্প প্রথম স্টেজে ধরা পড়লে ম্যাসটেকটমির পরিবর্তে লাম্পেকটমি করা হয়। তারপর রেডিয়েশন দেওয়া হয়। তবে প্রথম স্টেজে ধরা পড়লে এটা সম্ভব। এখন স্তন ক্যানসার চিকিৎসা অনেক উন্নত।

স্তনের নিচে হৃদযন্ত্র এবং নিচে ফুসফুস সবই থাকে, ফলে রেডিয়েশন দেবার সময় ডোজ যাতে বেশি না যায়, সেজন্য নানা উন্নত ব্যবস্থা এসেছে যা করলে হার্ট বা লাং সুরক্ষিত থাকে। রোগীকে রেডিয়েশন দেবার পরে এখন একদম বোঝা যায় না যে, তার ট্রিটমেন্ট চলছে।

এখন সিম্পল ম্যাসটেকটমি করা হয়। তবে এর কিছু সমস্যা আছে। এটা করার সময় বগলের তলায় অ্যাগজেলরি নোডসগুলো বের করে বাদ দেওয়া হয়। এর ফলে হাত ফুলে যায়, লিম্ফিডিমা হবার সম্ভাবনা থাকে, মহিলাদের একটা মানসিক চাপ হয়। তাই আর্লি ধরা পড়া জরুরি। তবে ম্যাসটেকটমি করেও বহুবছর সুস্থ ভাবে বেঁচে থাকেন।

এখন ব্রেস্ট ক্যানসার চিকিৎসা এতটা উন্নত যে, স্টেজ ফোরে ধরা পড়লেও এখন লাইফ স্প্যান বাড়ানো সম্ভব হচ্ছে।

No comments