প্রতিপদেই শুরু মহিষাদল রাজবাড়ির দুর্গাপুজো, প্রাচীন রীতিমতো জাঁকজমকপূর্ণ পুজার শুভারম্ভ প্রতিপদে ঘট স্থাপনের মধ্য দিয়ে শুরু হল মহিষাদল রাজবাড়ির দুর্গাপুজো। প্রায় ২৫০ বছরের বেশি প্রাচীন ঐতিহ্যবাহী দুর্গাপুজো দেখতে আজও ভিড় জমান দূর…
প্রতিপদেই শুরু মহিষাদল রাজবাড়ির দুর্গাপুজো, প্রাচীন রীতিমতো জাঁকজমকপূর্ণ পুজার শুভারম্ভ
প্রতিপদে ঘট স্থাপনের মধ্য দিয়ে শুরু হল মহিষাদল রাজবাড়ির দুর্গাপুজো। প্রায় ২৫০ বছরের বেশি প্রাচীন ঐতিহ্যবাহী দুর্গাপুজো দেখতে আজও ভিড় জমান দূরদূরান্তের পাশাপাশি স্থানীয় বাসিন্দারা। প্রতিমা দর্শন করতে আসেন ভিন রাজ্য, ভিন জেলার দর্শনার্থীরাও। রাজত্ব ঘোচার সঙ্গে সঙ্গেই কামান দাগা, যাত্রাপালা, মন মন জালের ভোগ বন্ধ হলে নিষ্ঠা ও নিয়ম মেনেই হয় পুজো।
প্রতিপদ থেকেই শুরু হল প্রাচীন মহিষাদল রাজবাড়ির পুজো। জৌলুস, আড়ম্বর- আয়োজন কম। কিন্তু রীতির বদল ঘটেনি। নিয়ম মেনেই প্রতিপদে ঘট স্থাপনের মধ্য দিয়ে শুরু হল মহিষাদল রাজবাড়ির দুর্গাপুজো। প্রায় ২৫০ বছরের বেশি প্রাচীন ঐতিহ্যবাহী দুর্গাপুজো দেখতে আজও ভিড় জমান দূরদূরান্তের পাশাপাশি স্থানীয় বাসিন্দারা। প্রতিমা দর্শন করতে আসেন ভিন রাজ্য, ভিন জেলার দর্শনার্থীরাও।
মহিষাদলের রানি জানকির আমলে মহিষাদল রাজবাড়ির দুর্গাপুজো শুরু হয়। সেই সময় থেকেই মহিষাদল রাজবাড়ির ঠাকুরদালানে দুর্গাপুজো হয়ে আসছে। মহিষাদল রাজবাড়ির বর্তমান প্রজন্ম হিসাবে রাজবাড়ি দেখাশোনা করে থাকে শংকর প্রসাদ গর্গ ও হরপ্রসাদ গর্গ। এ প্রসঙ্গে এই রাজবাড়ির বর্তমান প্রজন্মের সদস্য হরপ্রসাদ গর্গ বলেন, ‘‘মহালয়ার পরের দিন রাজবাড়ির দুর্গামণ্ডপ লাগোয়া অশ্বত্থ গাছের তলায় ন’টি ঘট ওঠে। আজ থেকে প্রতিদিনই ঘটপুজো হবে। সপ্তমী থেকে মূর্তি পুজো হবে। প্রতিমার একপাশে ঘট, অন্যপাশে ধান রাখা হয়। এই দুর্গাপুজো করার পরই শুষ্ক গ্রামে ধান ফলেছিল। তাই ভালো ফসলের আশায় আজও দেবীর পাশে ধান রাখা হয়।’’ পুজোয় ১০৮টি নীল পদ্ম দেওয়ার চল থাকলেও কালক্রমে তা এখন হয় না। এখন স্থানীয় ফুল দিয়ে মায়ের পুজো হয়। পুজোর দিনগুলিতে ঠাকুরদালানেই যাত্রা হত। রাজবাড়ির মহিলারা পর্দার আড়াল থেকে যাত্রা দেখতেন। পুজোর দিন অনুযায়ী ভোগ রান্না হত। যেমন ষষ্ঠীতে ছয় মন, সপ্তমীতে সাত মন, অষ্টমীতে আট মন, নবমীতে নয় মন চালের প্রসাদ তৈরি করে বিতরণ করা হত। নবমীতে কামান দেগে রাজবাড়ি সহ আশপাশের এলাকার পুজো মণ্ডপে সন্ধিপুজো শুরু হত। দশমীতে বড় নৌকায় করে শোভাযাত্রা রাজবাড়ির সামনে দিয়ে বয়ে যাওয়া হিজলি টাইডাল ক্যানেল হয়ে গেঁওখালিতে রূপনারায়ণ নদে প্রতিমা বিসর্জন হত। এখন সে সবই অতীত। রাজত্ব ঘোচার সঙ্গে সঙ্গেই যাত্রাপালা বন্ধ হয়েছে। পুজোর দিনগুলিতে অবশ্য এখনও ভোগ রান্না করা হয়। কিন্তু তা যৎসামান্য।
এদিকে সরকার কামান দাগায় নিষেধাজ্ঞা জারি করায় সেটাও ইতিহাসের খাতায় চলে গিয়েছে। এখন কামান দাগার পরিবর্তে আতসবাজির রোশনাইয়ের মধ্যে দিয়ে সন্ধিপুজো করা হয়। বিসর্জনের শোভাযাত্রাও অতীত। রাজবাড়ি লাগোয়া রাজদিঘিতেই প্রতিমা বিসর্জন দেওয়া হয়। বিধায়ক সহ মহিষাদলের স্থানীয় প্রশাসনের উদ্যোগে এ বছরেও পুজোর প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে।
বিধায়ক তহবিলের অর্থে মহিষাদল রাজবাড়ির ঠাকুরদালানের ভগ্ন আটচালা নির্মাণের কাজ হয়েছে। পাশাপাশি সরকারি সাহায্যে ভগ্ন রামবাগ প্যালেস নির্মাণের কাজ চলছে। পুজোয় আগত দর্শনার্থী বা পর্যটকদের পরিষেবা দিতে রাত্রি যাপনের ব্যবস্থা রয়েছে। তবে তার জন্য মূল্য দিতে হবে। মহিষাদল ফুলবাগ রাজবাড়িতে যেমন সংগ্রহশালা রয়েছে তেমনই চা বা কফিতে চুমুক দিয়ে সময় কাটানোর জন্য ফুলবাগ ক্যাফে চালু করা হয়েছে। পাশাপাশি রাজবাড়ির সম্বন্ধে জানতে হলে রাজ পরিবারের সদস্যদের লেখা ‘মহিষাদল রাজবাড়ির ইতিকথা’ নামক একটি পুস্তিকা সংগ্রহ করা যাবে অর্থের বিনিময়ে। রাজবাড়ির পুজো দেখতে আর রাজবাড়ির অপরূপ পরিবেশের মজা নিতে আসতেই হবে মহিষাদলে।
এদিন রাজবাড়ীর কুলদেবতা গৌপাল জিউ মন্দিরের পাশে পূজার্চনা করে ঘট নিয়ে আসা হয় ঠাকুর দালানে। সেখানেই নিয়ম মেনেই শুরু হয় পুজো।
আগে বাড়ির পরিবারের সদস্যরা ঘেরাটোপে মধ্যে থাকতেন। কিন্তু বর্তমান সময়ে আত্মিয় পরিজন, প্রজা, প্রতিবেশীদের নিয়ে পুজোর কয়েকটা দিন মজা করে কাটে বলে জানান রাজ পরিবারের সদস্য দেবযানী গর্গ ও রুদ্রপ্রসাদ গর্গ।
No comments