Page Nav

HIDE

Grid Style

GRID_STYLE

Post/Page

Weather Location

Breaking News:

latest

সুন্দরবনের লুপ্ত-প্রায় এক লৌকিক দেবতা হলেন আটেশ্বর

সুন্দরবনের লুপ্ত-প্রায় এক লৌকিক দেবতা হলেন আটেশ্বর। বিশাল এই ভারতবর্ষে  এক দেবতাই যেমন ভিন্ন ভিন্ন রূপে  নানা জায়গায় পূজিত হোন তেমনই অনেকসময় এক জেলায় পূজিত দেবতা অন্য জেলায় পরিচিতি লাভ করেন অপদেবতারূপে। আটেশ্বর/ আট কিংবা আট-মুনসী…

 



সুন্দরবনের লুপ্ত-প্রায় এক লৌকিক দেবতা হলেন আটেশ্বর। বিশাল এই ভারতবর্ষে  এক দেবতাই যেমন ভিন্ন ভিন্ন রূপে  নানা জায়গায় পূজিত হোন তেমনই অনেকসময় এক জেলায় পূজিত দেবতা অন্য জেলায় পরিচিতি লাভ করেন অপদেবতারূপে। আটেশ্বর/ আট কিংবা আট-মুনসী হলেন তেমনই এক দেবতা।


ভারতবর্ষের  চব্বিশ পরগনা জেলার সুন্দরবন অঞ্চলে মানুষের বিশ্বাস আটেশ্বর হলেন  অরণ্যরক্ষক ও পশুদের দেবতা। সুন্দরবনের মৌলে, বাইলিয়া আর চাষীরা তাই বনে ঢুকবার আগে দক্ষিণরায়, বনবিবির মতো আটেশ্বরের পূজা করেন। এ দেবতার গাত্রবর্ণ ফিকে সবুজ,ঠোঁটের উপর থাকে এক জোড়া গোঁফ এবং  মাথাভর্তি বড় বড় বাবরী চুল। তাঁর পরণে থাকে হলদে রঙ্গের  কাপড় ,মাথায় পাগড়ি এবং  ডান হাতে ধরা থাকে একটি মুগুর।সুন্দরবনে বহুল প্রচলিত  কাঁটা বসানো এই মুগুরকে বলা হয়  কাঁটা মুগুর/ছাঁটা মুগুর । সুন্দরবনের স্থানীয় বাঘ শিকারীরা সাধারণত এই কাঁটা মুগুর নিয়ে শিকারে যায়। এছাড়া চব্বিশ পরগনা জেলার  নানা জায়গায় রয়েছে আটেশ্বরের থান। তবে সব থানে আটেশ্বরের মূর্তি নেই। অনেক জায়গায় তিনি প্রাচীন আরণ্যক সমাজের রীতিতে মাটির স্তূপ হিসেবে পূজিত হন।গ্রামবাসীর বিশ্বাস যেখানে আটেশ্বরের থান আছে,সেখানে তিনি বনের হিংস্র পশু থেকে পোষা গৃহপালিত পশুদের রক্ষা করেন।


অপরদিকে, মেদিনীপুরের কাঁথি অঞ্চলে মানুষের বিশ্বাস আটেশ্বর হলেন অপদেবতা, তিনি গাছে থাকেন।তবে কখনো কারো উপর ক্ষুব্ধ হলে তিনি মানুষের দেহ ধরে তার সাথে দেখা করতে আসেন এবং রাতেরবেলা নিশির ডাক ডাকেন। সেই ডাক শুনে যদি গৃহস্ত সাড়া দিয়ে ঘরের বাইরে আসে তাহলে  দুরারোগ্য ব্যধিতে ভুগে দু-এক দিনেই মারা যাবে সে।  মেদিনীপুরে আটেশ্বরের কোনো মূর্তি প্রচলিত নেই। এখানে মানুষের বিশ্বাস আটেশ্বর গাছে থাকেন।  যে গাছে আটেশ্বর আছেন বলে বিশ্বাস করা হয় সেই গাছকেই মানুষ পুজা করে যাতে আটেশ্বর সন্তুষ্ট থাকেন।  মেদিনীপুরেরই কোনো কোনো জায়গায় কন্ধকাটা ভূতকে আট বা আটেশ্বরের রূপ ধরে নেয় পল্লীবাসীরা। তাদের বিশ্বাস যে আট জলের মধ্যে থাকেন।তাই জেলেরা মাছ ধরতে যাবার আগে আটের পূজা দিয়ে যান।


এভাবেই মেদিনীপুরে আটেশ্বর পূজিত হোন অপদেবতারূপে; যেনো তিনি কারো ক্ষতিসাধন না করেন।আবার অপরদিকে সুন্দরবনে আটেশ্বর পূজিত হচ্ছেন দেবতারূপে, কারণ হিংস্র পশু থেকে বনাকীর্ণ গ্রামবাসীকে পরম মমতায় রক্ষা করে রাখেন তিনি । সুন্দরবনের অনেক অঞ্চলেই আটেশ্বর রূপান্তরিত হয়েছে শিব বা শিবপুত্রে। যেমন, সুন্দরবনের কাকদ্বীপে আটেশ্বর মন্দিরে যে মূর্তি পূজিত হয় তা মূলত শিবের মূর্তি। এখানে আটেশ্বরের প্রকৃত মূর্তি অতীতে ছিল কিনা জানা যায় না, কিন্তু বর্তমানে শিবের মূর্তিই বিরাজমান। প্রতি বছর সেখানে মাঘী পূর্ণিমায় জাঁকজমক সহকারে পুজো হয়। পূজায় কোনো পুরোহিত প্রয়োজন হয়না, সাধারণ মানুষই পূজা দেন। পূজা শেষে আগুনে গোটা শোলমাছ পুড়িয়ে ভাতের সঙ্গে নৈবেদ্য হিসেবে কলাপাতায় সাজিয়ে পাশের কোনও ঝোপে রেখে আসতে হয়। রাখার পর পেছন ফিরে দেখার নিয়ম নেই।স্থানীয় মানুষের বিশ্বাস, সবাই চলে গেলে আটেশ্বর এসে নৈবেদ্য গ্রহণ করেন।


ভারতবর্ষে নানা জনের কাছে শিবের নানারূপ। ধ্যানমগ্ন যোগী মহাদেবকে  মানুষ আপন করে নিয়েছেন নিজের জীবিকা, জীবনযাত্রার সাথে আপন করে নিয়ে ।কখনো শিব এসেছেন পালাগানে চাষিরূপে,  কখনো মাকাল ঠাকুররূপে এসেছেন জেলেদের কাছে আবার কখনো আটেশ্বরে রূপে কাঁটা মুগুর হাতে হয়ে গিয়েছেন সুন্দরবনের বনরক্ষক।  ভারতবর্ষের পল্লীসমাজে এভাবেই দেবতারা মিশে গিয়েছেন মানুষের মাঝে এক হয়ে ।


No comments