Page Nav

HIDE

Grid Style

GRID_STYLE

Post/Page

Weather Location

Breaking News:

latest

শরীর ভালো রাখতে কি করবেন

শরীর ভালো রাখতে কি করবেন 
তিনদিন টানা জ্বর। সঙ্গে অসহনীয় গাঁটে ব্যথা। রক্ত পরীক্ষায় ডেঙ্গুর নমুনা মিলল। বন্ধু পরিজন, অফিসের সহকর্মী সকলেই খোঁজ নেওয়ার মাঝে বলছেন, ‘বেশি করে জল খেও,’ কেউ বা বলছেন, ‘বেশি জল খেও না, এই রোগে পেট ফুলে য…

 


শরীর ভালো রাখতে কি করবেন 


তিনদিন টানা জ্বর। সঙ্গে অসহনীয় গাঁটে ব্যথা। রক্ত পরীক্ষায় ডেঙ্গুর নমুনা মিলল। বন্ধু পরিজন, অফিসের সহকর্মী সকলেই খোঁজ নেওয়ার মাঝে বলছেন, ‘বেশি করে জল খেও,’ কেউ বা বলছেন, ‘বেশি জল খেও না, এই রোগে পেট ফুলে যায়।’ ধন্দে পড়ছেন রোগী ও তাঁর পরিজনরা।

বাস্তব চিকিৎসাবিজ্ঞান কী বলছে? সে বলে, জল খেতে হবে পর্যাপ্ত। সঙ্গে খেতে হবে ওআরএস। অবশ্য হাসপাতালে থেকে চিকিৎসা হলে ডেঙ্গুর কারণে রোগীর শরীরে তরলের যে ঘাটতি দেখা যায়, তা মেটাতে নানা আইসোটোনিক ফ্লুইডও স্যালাইনের মাধ্যমে দেওয়া হয়।


কেন তরল?

ডেঙ্গু হলে শরীরের তাপমাত্রা খুব বেড়ে। সেই ভারসাম্য রক্ষা করার জন্য শরীরের বাইরে থেকে জল দেওয়ার প্রয়োজন পড়ে। এছাড়া জ্বর বেড়ে গেলে ও শরীরে জলের পরিমাণ কমে গেলে রক্তের লোহিত রক্তকণিকার ঘনত্ব বেড়ে যায়। এ থেকেই রক্তচাপ বেড়ে যেতে পারে। ফলে ডেঙ্গির শকে চলে যান রোগী। তখন শরীরের অভ্যন্তরীণ নানা অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ ঘায়েল হতে থাকে। এছাড়া আরও একটি ভয়ানক পরিস্থিতি ডেঙ্গির শকের সময়ে দেখা যায়। অনেক রোগীর ক্ষেত্রে ছোট ছোট রক্তজালিকা থেকে জল বেরিয়ে নানা টিস্যুতে গিয়ে জমে যায়। সেই কারণেই পেট, পা ফুলে যায়। এ থেকেও শরীরের অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ নষ্ট হতে থাকে। যাকে আমরা বলি ‘মাল্টি অর্গ্যান ফেলিওর’। তাই এই সময় শরীরে পর্যাপ্ত জলের প্রয়োজন। 


ওআরএস-এর ভূমিকা

ওরাল রিহাইড্রেশন সলিউশন বা ওআরএস হল সোডিয়াম, পটাশিয়াম, নুন ও গ্লুকোজের মিশ্রণ। শরীরের ইলেকট্রোলাইট ব্যালেন্স ধরে রাখে এই মিশ্রণ। ওআরএস শরীরে এনার্জি বাড়ায়। বাড়িতে থাকলে ডেঙ্গুর রোগীকে অবশ্যই জলের পাশাপাশি ওআরএস দিন। 


জল কতটুকু, ওআরএস কতটা

শরীরে যেন কোনও ভাবে জলের অভাব না হয়। তবে একটানা জল বা ওআরএস একজন রোগী খেতে পারে না। তাই জল ও ওআরএস মিলিয়ে মিশিয়ে খাওয়াতে হবে। শিশুদের ক্ষেত্রেও একই নিয়ম। তবে রোগীর রক্তের ঘনত্ব কতটা, রোগী কী মাত্রায়  সচেতন রয়েছে, মূত্রের পরিমাণ কী, এগুলোর উপর নির্ভর করে চিকিৎসক ঠিক করে দেবেন কোন রোগীর কতটা তরল প্রয়োজন। সাধারণত, পর্যাপ্ত জল পানের নিদানই দেওয়া হয়। তাই জলের অভাব যেন না হয়, সেদিকে খেয়াল রাখুন। যে রোগী ওআরএস ভালোবাসেন, তিনি ওআরএস বেশি খাবেন, যিনি দিনভর ওআরএস খেতে পারেন না তিনি জল বেশি করে খাবেন। রক্তজালকগুলি থেকে জল চুঁইয়ে বেরিয়ে যাওয়ার কারণে শরীরে এনার্জি কমে, গ্লুকোজের ঘাটতিও দেখা যায়। ওআরএস সেক্ষেত্রে অনেকটা সামাল দিতে পারে। তাই ডেঙ্গু হলে পর্যাপ্ত জল এবং ওআরএস যেন রোগীর ডায়েটে থাকে।

 

কলকাতা এবং সারা পশ্চিমবাংলা জুড়ে কমবেশি ডেঙ্গু জ্বর হচ্ছে। কয়েক সপ্তাহ ধরে এই জ্বরে আক্রান্তের সংখ্যা বাড়ছে। এই জ্বর নিয়ে সবার মতো চিকিৎসকরাও চিন্তিত। কারণ কিছু কিছু ক্ষেত্রে ডেঙ্গু প্রাণহানির কারণ হিসেবে প্রতিপন্ন হচ্ছে।

ডেঙ্গু জ্বর একটি ভাইরাস জনিত রোগ। এই ভাইরাসের চারটি সাব টাইপ আছে। বিশেষজ্ঞরা শুধু বলতে পারবেন কোনও সেরো টাইপের জন্য বর্তমানকালের এই ডেঙ্গু জ্বর হচ্ছে। ডেঙ্গু ভাইরাস ছড়ায় একধরনের মশা যার নাম এডিস ইজিপ্টাই এবং তার কিছু প্রজাতি। এই মশা যাতে বংশ বৃদ্ধি করতে না পারে তার জন্য সরকারিভাবে চলছে নিরন্তর প্রচেষ্টা।

ডেঙ্গুর কোনও নির্দিষ্ট চিকিৎসা নেই। চিকিৎসকরা চেষ্টা করেন ডেঙ্গুর মুখ্য লক্ষণ জ্বর নিয়ন্ত্রণ করতে। ডেঙ্গুতে একটু বেশি জ্বর আসে। সঙ্গে থাকে মাথা ব্যথা, চোখে ব্যথা, শরীরের মাংসপেশিতে, হাড়ে হাড়ে ব্যথা। চিকিৎসকরা চেষ্টা করেন জ্বরের সঙ্গে এই উপসর্গগুলোকেও সমান গুরুত্ব দিয়ে রোগীর লক্ষণগুলোকে কমিয়ে ফেলতে। এই উপসর্গগুলো ৫ থেকে ৭ দিন থাকে।

কিন্তু আসল সমস্যা হল যখন জ্বর কমতে থাকে, উপসর্গ কমতে শুরু করে। যে অবস্থাকে আমরা রিকভারি স্টেজ বলে জানি। কিছু কিছু ক্ষেত্রে এই সময়ই সব ধরনের জটিলতা সৃষ্টি হয়। এই সময়ে রোগীকে প্রয়োজনে হাসপাতালে ভর্তি করে নিরন্তর পর্যবেক্ষণে রাখতে হয়। কারণ এই সময়ই রক্তে প্লেটলেট কমতে থাকে। তবে সবার ক্ষেত্রেই এমন হয় না। কোনও কোনও ক্ষেত্রে দাঁতের মাড়ি দিয়ে রক্তক্ষরণ, নাক দিয়ে রক্ত পড়া, মুখ দিয়ে রক্ত আসা, কালো পায়খানা হওয়া, চামড়ায় হেমোরেজিক স্পট দেখা দিতে পারে। লক্ষণগুলোর দিকে নজর রাখতে হবে। প্রশ্ন হল হোমিওপ্যাথি ওষুধ দিয়ে ডেঙ্গু চিকিৎসা করা যাবে কি না? উত্তর হল হ্যাঁ, করা যায়।

জ্বর নিয়ে প্রচুর মানুষ আমাদের হাসপাতালে আসছেন। জ্বরের শুরুর দিনগুলোতেই রোগীর এনএস১ অ্যান্টিজেন, ডুয়েল ম্যালেরিয়া এবং কিছু রক্ত পরীক্ষা করিয়ে নেওয়া হচ্ছে যাতে রোগের গতি প্রকৃতি বোঝা যায়। পরবর্তীকালে আরও কিছু রক্ত পরীক্ষা করাতে হচ্ছে।

হাসপাতালে ভর্তি রেখেও ডেঙ্গু রোগীর চিকিৎসা হচ্ছে। যদিও হোমিওপ্যাথি ওষুধ ব্যক্তি নির্ভর তবু কিছু কিছু হোমিওপ্যাথি ওষুধ যেমন বেলেডোনা ৩০, ফেরাম ফস ৬X, ক্যালি মিউর ৬X, রাস টক্স ৩০, আর্স আলব ৩০ অত্যন্ত কার্যকরী। প্লেটলেট কমতে থাকলে ক্রোটালাস হোরিডাসের উপর প্রধান গুরুত্ব দেওয়া যেতে পারে।

ডেঙ্গু রোগী চেনার আরও একটি উপায় হচ্ছে যে জ্বর থাকাকালীন পর্যায়ে সঙ্গে ত্বকে একটা লাল আভা দেখা যায়। যে লাল আভা আঙুল দিয়ে চাপ দিলে সাদা হয়ে যায়, আবার চাপ সরিয়ে নিলেই লাল আভা ফিরে আসে। এটাই ডেঙ্গু র‌্যাশ। এই র‌্যাশ মারাত্মক চুলকাতে পারে। এই র‌্যাশ-এর সময় জ্বরের সঙ্গে মাত্রাতিরিক্ত মাংসপেশিতে ব্যথা থাকলে রাস টক্স ৩০ খাওয়া যেতে পারে।

মনে রাখতে হবে ডেঙ্গুর ৪টি সেরোটাইপই মানুষের প্রাণ নেওয়ার ক্ষমতা রাখে। জ্বর কমে যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে যখন রোগী স্বস্তি বোধ করেন, চিকিৎসকের ভূমিকা ও দায়িত্ব তখন আরও বেড়ে যায়। প্রতিদিন প্লেটলেট কমছে কি না জানা দরকার। হেমারেজ হচ্ছে কি না তাও জানা প্রয়োজন। আবার প্লেটলেট কমে যাওয়া মানে, জীবনহানি হবে এমনও কোনও ব্যাপার নেই।

সবচাইতে বিপজ্জনক হচ্ছে, যখন ডেঙ্গু রোগী ব্লাড প্রেশার কমতে থাকে, শ্বাসকষ্ট হয়, শরীরের বিশেষ কতকগুলো জায়গায় জল জমতে শুরু করে ও হঠাৎ রোগীর প্রাণ নিয়ে টানাটানি পড়ে যায়। এই অবস্থাই হল ডেঙ্গু শক সিনড্রোম। 

তাই ডেঙ্গু চিকিৎসায় একনিষ্ঠ পর্যবেক্ষণ প্রয়োজন, রোগের গতি প্রকৃতি ও জটিলতা সম্পর্কে ধারণা থাকাও দরকার।

No comments