নতুন করে তৈরি হবে ভোটার ও আধার কার্ডস্বাভাবিক জীবন কি আবার বিপর্যস্ত হতে চলেছে? আবার দাঁড়াতে হবে অন্তহীন লাইনে? ৭৬ বছরের স্বাধীন দেশের জীবনযাপনের প্রতি পদক্ষেপে জড়িয়ে আছে ‘ইন্ডিয়া’ নামটি। আর আজ সেই ‘ইন্ডিয়া’র অস্তিত্ব মুছে ফেলার …
নতুন করে তৈরি হবে ভোটার ও আধার কার্ড
স্বাভাবিক জীবন কি আবার বিপর্যস্ত হতে চলেছে? আবার দাঁড়াতে হবে অন্তহীন লাইনে? ৭৬ বছরের স্বাধীন দেশের জীবনযাপনের প্রতি পদক্ষেপে জড়িয়ে আছে ‘ইন্ডিয়া’ নামটি। আর আজ সেই ‘ইন্ডিয়া’র অস্তিত্ব মুছে ফেলার উদ্যোগ শুরু হতেই দেশজুড়ে শুরু হয়েছে হাজারো জল্পনা এবং আতঙ্ক। ফিরে আসছে পাঁচ বছর আগের দুঃস্বপ্ন। নোট বাতিলের। প্রতিটি টাকায় মুদ্রিত থাকে রিজার্ভ ব্যাঙ্ক অব ইন্ডিয়া। তাহলে কি আবার টাকা বাতিল হবে? সত্যিই যদি সংবিধান থেকে ‘ইন্ডিয়া’ মুছে ফেলা হয়, তাহলে তো নামটিরই কোনও সরকারি বৈধতা থাকবে না। সেক্ষেত্রে শুধু টাকা থেকে ‘ইন্ডিয়া’ সরালেই কাজ শেষ হবে না, চিরতরে বাতিল হয়ে যাবে রিজার্ভ ব্যাঙ্ক অব ইন্ডিয়া নামটিও। রয়ে যাবে ভারতীয় রিজার্ভ ব্যাঙ্ক, যা এখন টাকায় হিন্দিতে মুদ্রিত। তাহলে কি সেটাই আগামী দিনে ইংরেজিতে মুদ্রিত হয়ে নতুন টাকা আসবে? আর লাইন তো শুধু নোটেই শেষ হয়ে যাবে না! আধার, প্যান, ভোটার, পাসপোর্ট—সর্বত্র জ্বলজ্বল করছে ইন্ডিয়া নামটি। সেক্ষেত্রে লাইন পড়বে পরিচয়পত্র বদলের জন্যও! কাজকর্ম ফেলে সবাইকে কি তাহলে ছুটতে হবে নাগরিকত্বে নতুন সিলমোহর দিতে?
বুধবার দেশজুড়ে তৈরি হয়েছে এমনই একঝাঁক প্রশ্ন। এই জল্পনায় ইন্ধন দিয়েছে খোদ মোদি সরকার। কারণ ২৪ ঘণ্টা কেটে গেলেও এই সংক্রান্ত কোনও সরকারি বিবৃতি দেওয়া হয়নি। একবারও বলা হয়নি যে, এমন সিদ্ধান্ত নেওয়া হচ্ছে না। বরং দিনভর ইন্ডিয়ার পরিবর্তে ভারত নামের পক্ষে যুক্তি দিয়ে গিয়েছেন কেন্দ্রীয় মন্ত্রীরা। বিদেশমন্ত্রী এস জয়শঙ্কর বলেছেন, ‘সংবিধানই ভারত ব্যবহারের অধিকার দিয়েছে। সুতরাং বিরোধীদের আস্ফালন অবান্তর।’ বিদেশি ডেলিগেটদের জন্য জি-২০’র একটি বুকলেটে শিরোনাম রাখা হয়েছে ‘ভারত, দ্য মাদার অব ডেমোক্রেসি’। তাতে আরও লেখা, ‘ভারত এদেশের সরকারি নাম। সংবিধানেও সেকথা লেখা রয়েছে।’ এছাড়া জি-২০ সম্মেলনে ভারতীয় আধিকারিকদের পরিচয়পত্রেও লেখা থাকছে ‘ভারত—অফিসিয়াল’। মঙ্গলবার রাতে বিজেপি মুখপাত্র সম্বিত পাত্র ইন্দোনেশিয়ায় মোদির সফরের একটি নথি প্রকাশ করেছেন। তাতেও স্পষ্ট লেখা, ‘প্রাইম মিনিস্টার অব ভারত’। প্রধানমন্ত্রী নিজেও মন্ত্রিসভার সদস্যদের বলেছেন, ‘ভারত বনাম ইন্ডিয়া নামক বিতর্ক নিয়ে কথা বলবেন এবং বিবৃতি দেবেন দলের মুখপাত্ররা।’ অর্থাৎ তিনি চাইছেন, বিবৃতিযুদ্ধ ও ইস্যুটি জীবন্ত থাকুক। অর্থাৎ, ফের নতুন করে আবেদনের লাইন। টাকা বদলের লাইন। কার্ড বদলের লাইন। সংস্থার নাম বদলের লাইন। যত বেসরকারি সংস্থার নামে ইন্ডিয়া রয়েছে, তাদের নাম বদলে ফেলতে হবে। একদিকে এই জল্পনা, আর অন্যদিকে ‘ওয়ান নেশন ওয়ান ইলেকশনে’র তাড়া। কমিটি গঠনের কয়েকদিনের মধ্যেই তাদের বৈঠক হয়ে গেল রামনাথ কোবিন্দের বাসভবনে। ছিলেন অমিত শাহও। সংসদের বিশেষ অধিবেশনের বাকি আর ১২ দিন। কমিটি কি তার আগেই রিপোর্ট দেবে? সেক্ষেত্রে তা হবে রেকর্ড। কারণ, এত কম সময়ে এ পর্যন্ত কোনও কমিটি রিপোর্ট দেয়নি। ভোটের এই সংযুক্তিকরণের নেপথ্যে মোদির যুক্তি কী? খরচ কমানো। অথচ, ইন্ডিয়া নাম বদল করলে তার থেকে বহুগুণ খরচ বাড়বে। অঙ্কটা কয়েক হাজার কোটির কম নয়। আর তাই প্রশ্ন ওঠাটাও স্বাভাবিক, কেন মোদি দেশকে এই ভয়াবহ পরিস্থিতির দিকে ঠেলে দিচ্ছেন?
জানা যাচ্ছে, পরিকল্পিতভাবেই সিদ্ধান্ত নেওয়ার পথে এগচ্ছে সরকার। লক্ষ্য দেশবাসীকে বার্তা দেওয়া—একমাত্র ভারতীয় জনতা পার্টিই জাতীয়তাবাদী। তাদের নামেই রয়েছে ভারত। আর অন্য রাজনৈতিক দলের নামের অঙ্গ? ইন্ডিয়া। ইন্ডিয়ান ন্যাশনাল কংগ্রেস থেকে অল ইন্ডিয়া তৃণমূল কংগ্রেস অথবা কমিউনিস্ট পার্টি অব ইন্ডিয়া (মার্কসবাদী)। মোদির লক্ষ্য একটাই—বিরোধীদের চাপে ফেলা। আর সেই প্রয়াস শুরু হয়ে গিয়েছে। বিজেপির ‘বন্ধু দল’ বিএসপি সুপ্রিমো মায়াবতী হঠাৎ বুধবার বলেছেন, ‘আমরা সুপ্রিম কোর্টের কাছে আবেদন জানাচ্ছি, যে রাজনৈতিক দল অথবা জোটের সঙ্গে দেশের নাম যুক্ত, তাদের নিষিদ্ধ করা হোক।’ অনুমান, মায়াবতীর এই বিবৃতির পিছনে রয়েছে বিজেপিরই ইন্ধন। কারণ বিরোধীদের বিরুদ্ধে হাতিয়ার তাদের ‘ভারত’ নামটি। এতদিন দেশবাসী দেখেছে ধর্মীয় বিভাজন। জাতপাতের বিভাজন। ভাষার বিভাজন। এবার এসেছে নামের বিভাজন! এতকাল ভারতই ছিল ইন্ডিয়া। মোদি সরকারের উপহার, ভারত বনাম ইন্ডিয়া!
No comments