আজ আন্তর্জাতিক ব্যাঘ্রদিবসরবি মজুমদারের বাড়ি সুন্দরবনে, ঝড়খালির ৩ নম্বরে। ১৯৮২ সালে তাঁকে বাঘে ধরে। কপালজোরে বেঁচে যান। ২০১৫ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি তাঁর বাঘে ধরার গল্প শুনেছিলাম মাতলা নদীর চরে বসে। হেঁতালবনে হেঁতাল কাটতে গিয়ে তিনি এক…
আজ আন্তর্জাতিক ব্যাঘ্রদিবস
রবি মজুমদারের বাড়ি সুন্দরবনে, ঝড়খালির ৩ নম্বরে। ১৯৮২ সালে তাঁকে বাঘে ধরে। কপালজোরে বেঁচে যান। ২০১৫ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি তাঁর বাঘে ধরার গল্প শুনেছিলাম মাতলা নদীর চরে বসে। হেঁতালবনে হেঁতাল কাটতে গিয়ে তিনি একটি হলদে-কালো ডোরার বিদ্যুৎ-ঝলক দেখতে পান। বাকিটা শুনুন তাঁর জবানিতে – ‘হেঁতালটা কেটে আমি সবে মাথাটা ঘুরিয়েছি, এমন সময় বাঘটা লাফ মেরেছে। আমার পায়ে একটা থাবা দিয়েছে। আমার মাথায় একটা কামড়। আমার মাথাটা তখন বাঘের গালের ভিতরে। চোখের নিচ থেকে পুরোটা ভাঙা। আমার দুনিয়া তখন অন্ধকার। সঙ্গীসাথি কাউকেই দেখতে পাচ্ছি না। আমাকে বাঘটা টেনে নিয়ে গেছে প্রায় একশো হাত দূরে। ওর চার ঠ্যাঙের ভিতরে আমি। ছটফট করছি। হেঁতালের বনের মধ্যে। আমি বাঁচার শেষ চেষ্টা করলাম। আমার হাতটা উঁচু করে ওর চোখে দেওয়ার চেষ্টা করলাম। কিন্তু সেটা ওর গালে বেঁধে গেল। অন্য হাতটা তুলতে কিছুটা ফাঁক পেলাম। সেটা চলে গেল বাঘের টাগরায়। টাগরায় চাপ পড়তেই বাঘ আমাকে ছেড়ে দিল। আমি কোনোমতে উঠে বসেছি তখন। দলের বাকিরা তখন দৌড়ে এসে বলল – ‘আর ভয় নেই, আমরা এসে গেছি’। ওইখান থেকে প্রায় একশো হাত আমি ওদের সাথে হেঁটে এসেছি। আমার গোটা দেহ থেকে রক্ত ঝরছে। আর চোখটা ভেঙে নিচে ঝুলে পড়েছে। বাঘের বিশ্রি গন্ধওয়ালা লালায় আমার চোখটা ঢেকে গেছে। রক্ত দেখে আমি আর থাকতে পারলাম না। মাথা ঘুরে পড়ে গেলাম চরে। ওরা চারজন আমাকে কাঁধে করে তুলে নিয়ে এল নৌকায়। বাঘটা সেই চরে হাঁটছে। হেঁটে আসছে আমাদের দিকে। ওরা আমাকে বাড়ি এনে হাসপাতালে দিয়েছে। মেডিকেলে ভর্তি হয়ে সাড়ে চারমাস ছিলাম। শরীর এখন ভালো নয়। দাঁড়িয়ে থাকতে হয় মাঝে মাঝে। একটা চোখ নষ্ট, আর একটা দিয়ে জল পড়ে। কাজকর্ম কিছুই করতে পারি না’।
সেই বাঘটা আজও পিছু ছাড়েনি রবি মজুমদারের। তখনও পর্যন্ত আয়লার দাপট দেখেছেন রবি মজুমদার। বাদাবনে চাষবাসের অবস্থা এমনিতেই খুব একটা ভালো না। একফসলি জমি। ধান ছাড়া কিছুই হয় না। তাও আয়লায় একেবারে শেষ করে দিয়ে গেছিল। জানি না কেমন আছেন রবি মজুমদার। বুলবুল বা আমফান তাঁকে কোথায় নিয়ে গিয়ে দাঁড় করিয়েছে কে জানে।
আমরা সেলফি তুলে ফেসবুকে নিজেদের ‘সেফ’ ঘোষণা করি বরং। রবি মজুমদার চিরকালের জন্য ‘আনসেফ’ জোনে থেকে যাবেন। ‘সেলফি’ তো দূর অস্ত, রবি মজুমদারের আয়না দেখতে ভয় করে।
No comments