কাঁটা তার পেরিয়ে ভোট দিতে আসছে ভিন্ন দেশের মানুষ
মাত্র একদিনের ‘চাকরি’। যাতায়াতের খরচ জোগাবে ‘নিয়োগকর্তারা’ই। থাকা-খাওয়াও ফ্রি। অভিজ্ঞতা অনুযায়ী মিলবে মোটা ‘মাইনে’। কড়কড়ে ৯ হাজার টাকা পর্যন্ত। কাজ? সামান্যই। শুধু তিনটি ব্যালটে এক…
কাঁটা তার পেরিয়ে ভোট দিতে আসছে ভিন্ন দেশের মানুষ
মাত্র একদিনের ‘চাকরি’। যাতায়াতের খরচ জোগাবে ‘নিয়োগকর্তারা’ই। থাকা-খাওয়াও ফ্রি। অভিজ্ঞতা অনুযায়ী মিলবে মোটা ‘মাইনে’। কড়কড়ে ৯ হাজার টাকা পর্যন্ত। কাজ? সামান্যই। শুধু তিনটি ব্যালটে এক এক করে ভোটের ছাপ। বাংলার পঞ্চায়েত নির্বাচনের আগে এই কাজের জন্যই এখন হাই ডিমান্ড ‘বাংলাদেশি’ ভোটারদের। কাঁটাতারের ওপারে অপেক্ষায় ‘মেহমান’রা! ‘ধুর’ সিন্ডিকেটের মাথাদের মাধ্যমে বাংলাদেশ সীমান্তে চলছে অলিখিত ইন্টারভিউ। গোয়েন্দা ও স্থানীয় সূত্রে খবর, ওপারের বহু মানুষের হাতেই রয়েছে এ রাজ্যের ভোটারকার্ড। মওকা বুঝে চড়া দর হাঁকছে তারা। চলছে দর কষাকষিও। এপার থেকে শুধু সবুজ সঙ্কেতের অপেক্ষা। তারপরই বাংলার ভোটার হয়ে উঠবে সেই বিদেশি ‘অতিথি’রা।
উত্তর ২৪ পরগনা থেকে নদীয়া, মুর্শিদাবাদ, মালদা সহ একাধিক সীমান্ত দিয়ে বছরভর বাংলাদেশি অনুপ্রবেশ ঘটে। কিন্তু, ভোটের মুখে সেই ছবি একেবারে বদলে যায়। প্রতি নির্বাচনেই বাংলাদেশিদের কদর বাড়ে এ রাজ্যে। সীমান্ত সংলগ্ন বাসিন্দাদের দাবি, মোটা টাকা দিয়ে ওইসব বাংলাদেশিদের এপারে জামাই আদর করে নিয়ে আসে ভোট ম্যানেজাররা। হাতে ভোটার কার্ড থাকায় তারা দিব্যি ভোট দেয়। সঙ্গে ছাপ্পা দিতেও ব্যবহার করা হয় তাদের। অনুপ্রবেশের নেপথ্যে যারা মাথা, সেই ধুর সিন্ডিকেট এই সময় ভোটের কাজে ব্যস্ত হয়ে পড়ে। কিন্তু, অত্যন্ত সুক্ষ্মভাবে। সীমান্তের বাসিন্দারা অবশ্য সবই টের পান। কিন্তু, পাঁচকান হয় না।
উত্তর ২৪ পরগনার স্বরূপনগর, বাগদা, বনগাঁর একটা বড় অংশেই ভোটের সময় এমন অনুপ্রবেশ হয়। সীমান্তের বাসিন্দারা বলছেন, বাগদার পাটকেলগাছা, মধুপুর, মামাভাগ্নে, কুলেরণঘাট ও জিতপুর— এই পাঁচটি সীমান্তের ওপারের গ্রামে এই কাজের জন্য অপেক্ষা করছে বাংলাদেশিরা। এখন ওপারের সিন্ডিকেট সেই অতিথিদের থাকা-খাওয়ার ব্যবস্থা করেছে। সুযোগ পেলেই তারা চোরাপথে এপারে ঢুকবে। বাংলাদেশি ভোটার পিছু ৩ হাজার থেকে ৯ হাজার টাকা দর দেওয়া হচ্ছে। নতুনদের দর অবশ্য কম। তবে, সপরিবারেও অনেকে ভোট দিতে আসতে চাইছে বলে খবর। তাদের ২০ হাজার টাকা পর্যন্ত অফার দেওয়া হচ্ছে। শর্ত একটাই, কমপক্ষে পরিবারের তিনজনকে আসতে হবে।
গোয়েন্দা ও স্থানীয় সূত্রে জানা যাচ্ছে, সীমান্ত পারাপারের জন্য মাথাপিছু দেড় হাজার থেকে চার হাজার টাকা নেয় ধুর সিন্ডিকেট। কিন্তু, ভোটের সময় তারা ‘পাইকারি দরে’ অফার দিচ্ছে। এপারে পৌঁছনোর পর মেহমানদের খাওয়া-দাওয়া সহ সমস্ত দায়িত্বে থাকবে ভোট ম্যানেজাররা। টিম লিডারদের হাতে পৌঁছে যাবে ভারতীয় সিমকার্ড, যাতে যোগাযোগের সমস্যা না হয়। যদিও এবার ভোটের মুখে অনুপ্রবেশ রুখতে রাজ্যজুড়ে কড়া নজরদারি চালাচ্ছে বিএসএফ। মেহমানদের কী তাতে রোখা যাবে? থাকছে প্রশ্ন।
বিএসএফের এক আধিকারিক বলেন, লোকসভা নির্বাচনে এই ধরনের অনুপ্রবেশের চেষ্টা বেশি হয়। তবে, পঞ্চায়েত নির্বাচনের জন্য এখনও পর্যন্ত কেউ এপারে ঢোকার সুযোগ পায়নি। আমাদের কাছে সুনির্দিষ্ট অভিযোগও আসেনি।
No comments