অগ্রিম টাকা এবং মদ পাঠিয়ে কারিগরদের বেআইনি বাজি কারখানায় আনত কৃষ্ণপদ বাগ
বাড়িতে অগ্রিম টাকা এবং মদ পাঠিয়ে কারিগরদের বেআইনি বাজি কারখানায় আনত কৃষ্ণপদ বাগ ওরফে ভানু। এগরার খাদিকুল গ্রামে বিস্ফোরণে নিহতদের পরিবারের লোকজন এমনই চাঞ্চল্…
অগ্রিম টাকা এবং মদ পাঠিয়ে কারিগরদের বেআইনি বাজি কারখানায় আনত কৃষ্ণপদ বাগ
বাড়িতে অগ্রিম টাকা এবং মদ পাঠিয়ে কারিগরদের বেআইনি বাজি কারখানায় আনত কৃষ্ণপদ বাগ ওরফে ভানু। এগরার খাদিকুল গ্রামে বিস্ফোরণে নিহতদের পরিবারের লোকজন এমনই চাঞ্চল্যকর দাবি করছেন। সন্ধ্যার পর মদের আসর বসত। কারিগরদের যেকোনও উপায়ে হাতে রাখত ভানু। প্রতিদিন ৩০০থেকে ৪০০টাকা মজুরি দেওয়া হতো। কারিগরদের প্রায় সকলেই ওড়িশা সীমানাবর্তী খাদিকুল গ্রামের বাসিন্দা। ওভার টাইম করলে উপড়ি পাওনা জুটত। মঙ্গলবার বিস্ফোরণের ঘটনার পর গ্রামজুড়ে শোকের আবহ। সেই সঙ্গে রয়েছে ক্ষোভও। এদিন তৃণমূলের নেতা-মন্ত্রীরা এলাকায় গেলে সেই ক্ষোভের বহিঃপ্রকাশ ঘটে।
মঙ্গলবার বিস্ফোরণে মারা যান খাদিকুল গ্রামের ২০বছরের অলোক মাইতি। তিন ভাইয়ের মধ্যে অলোক সকলের ছোট। তাঁর বাবা গৌরাঙ্গ মাইতি ষষ্ঠীমঙ্গল গান করেন। বুধবার গৌরাঙ্গবাবু বিস্ফোরণস্থলের কাছে দাঁড়িয়ে বলেন, আমার ছেলেকে গোপনে বাজি তৈরির কাজ শিখিয়েছে ভানু। আমরা পরিবারের লোকজন এব্যাপারে কিছুই জানতাম না। নানাভাবে লোভ দেখিয়ে এলাকার লোকজনকে কারখানায় নিয়ে গিয়ে ওই কাজ করাত। তবে, আমার ছেলে যে ওই কারখানায় কাজ করে, তা আমাদেরও জানা ছিল না। বিস্ফোরণে ছেলে মারা গিয়েছে। অভিযুক্ত বাজি কারাখানার মালিকের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করছি।
বিস্ফোরণস্থল থেকে ৫০মিটার দূরে সঞ্জিত বাগের বাড়ি। মঙ্গলবার ওই কারখানায় কাজে গিয়েছিলেন সঞ্জিতের স্ত্রী মাধবী। বাড়িতে ১৩ বছরের ছেলে ও ১০বছরের মেয়ে। রোজগারের আশায় গ্রামের আরও কয়েকজন বধূর মতো তিনিও একজন কারিগর হয়ে উঠেছিলেন। বিস্ফোরণে মাধবীর মৃত্যু হয়েছে। এদিন তাঁর বাড়িতে বসেই পঞ্চায়েত প্রধান স্বপন দণ্ডপাট, স্থানীয় পঞ্চায়েত সদস্যা পুষ্পরানি সাউ মাইতি মৃতদের নামের তালিকা সংগ্রহ করে ময়নাতদন্তের জন্য কাগজ তৈরির কাজ সারছিলেন। সঞ্জিতবাবু বলেন, চোখের সামনে বিস্ফোরণ হল। তাতে স্ত্রী ঝলসে পুড়ে মারা গেল। এই দুর্ঘটনা আমি সারা জীবন ভুলতে পারব না। এলাকার বাসিন্দা রেখা বাগ বলেন, ভানুর কারখানায় যাওয়া দক্ষ কারিগরদের শুধু অ্যাডভান্স টাকাই দিত না, মদ পর্যন্ত বাড়িতে পাঠিয়ে দিত।
স্থানীয় বাসিন্দা রবীন্দ্রনাথ সাউয়ের মেয়ের ভাশুর শক্তিপদ বাগ বিস্ফোরণে মারা গিয়েছেন। তিনি বলেন, দুর্ঘটনার সময় ভানু এবং তার স্ত্রী দু’জনেই অবৈধ বাজি কারখানায় ছিল। বিস্ফোরণে ভানুও জখম হয়েছে। ওর স্ত্রী সেই সময় রান্না করছিলেন। ওরা ওড়িশায় পালিয়ে গিয়েছে। বিস্ফোরণস্থল থেকে একটা মাঠ পার হলেই ওড়িশা। তিনি আরও বলেন, বাজি কারখানায় কাজ করার ব্যাপারে অনেকের অনীহা ছিল। বিশেষ করে গরমের সময় তাঁরা কাজ করতে চাইতেন না। তখন ভানু বাড়ি গিয়ে অ্যাডভান্স টাকা দিয়ে আসত। গরিব মানুষ বাধ্য হয়ে কাজে যেতেন। এছাড়াও প্যাকিংয়ের জন্য বাড়ি বাড়ি বাজিও পাঠানো হতো। এই গ্রামের অনেকেই সেই কাজে যুক্ত ছিল।
খাদিকুল গ্রামের উত্তম বাগের স্ত্রী মণি বাগ ওই বাজি কারখানার কারিগর। মঙ্গলবার বাড়িতে অনুষ্ঠান থাকায় তিনি কাজ করতে যাননি। ভয়াবহ বিস্ফোরণে ন’জনের মৃত্যুর ঘটনার পর উত্তমবাবু বলেন, ঈশ্বরের কৃপায় আমরা বেঁচে গিয়েছি। এতবড় দুর্ঘটনা ভাবাই যায় না!
No comments