তৃণমূলের শিক্ষক সংগঠন ছাড়লেন ২৩ জন শিক্ষক
বকেয়া মহার্ঘ ভাতা নিয়ে রাজ্য সরকার এবং তৃণমুলের শিক্ষক সংগঠন শিক্ষকদেরই স্বার্থবিরোধী কার্যকলাপ চালিয়ে যাচ্ছে। এই অভিযোগে পশ্চিমবঙ্গ তৃণমূল মাধ্যমিক শিক্ষক সমিতির সদস্য পদে গণ ইস্তফা …
তৃণমূলের শিক্ষক সংগঠন ছাড়লেন ২৩ জন শিক্ষক
বকেয়া মহার্ঘ ভাতা নিয়ে রাজ্য সরকার এবং তৃণমুলের শিক্ষক সংগঠন শিক্ষকদেরই স্বার্থবিরোধী কার্যকলাপ চালিয়ে যাচ্ছে। এই অভিযোগে পশ্চিমবঙ্গ তৃণমূল মাধ্যমিক শিক্ষক সমিতির সদস্য পদে গণ ইস্তফা দিলেন একই স্কুলের ২৩ জন শিক্ষক। পূর্ব মেদিনীপুরের সুতাহাটা এলাকার ওই ঘটনায় ধাক্কা শাসকদলে। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় যখন জেলায় রয়েছেন, তখন দলের শিক্ষক সংগঠনে এই বড়সড় ভাঙন ইঙ্গিত পূর্ণ বলে মনে করছে রাজনৈতিক মহল।
বকেয়া মহার্ঘ ভাতার দাবিতে দিন দিন রাজ্য সরকার এবং আন্দোলনকারীদের মধ্যে সংঘাত চড়া হচ্ছে। গত ২৯ মার্চ কলকাতায় একটি কর্মসূচিতে মুখ্যমন্ত্রী আন্দোলনকারী সরকারী কর্মীদের একাংশকে 'চোর' বলে কটাক্ষ করেন। এর পরেই ক্ষোভ বেড়েছে আন্দোলনকারীদের মধ্যে। রাজ্য সরকার এবং পশ্চিমবঙ্গ তৃণমূল শিক্ষক সমিতি সদর্থক ভূমিকা নিচ্ছে না বলে অভিযোগ করে জয়নগর হাই স্কুলের ২৩ জন শিক্ষক ও শিক্ষিকা তৃণমূলের শিক্ষক সংগঠন ছেড়েছেন।
স্থানীয় সূত্রের খবর, সুতাহাটা ব্লকের অন্তর্গত জয়নগর হাই স্কুলে ৪২ জন শিক্ষক ও শিক্ষিকা রয়েছেন। এঁদের অধিকাংশই তৃণমূল নিয়ন্ত্রিত পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য তৃণমূল শিক্ষক সমিতির সদস্য। তাঁদের মধ্যে একাংশ গত ২৯ মার্চ গণস্বাক্ষর সংগ্রহ করে সুতাহাটা ব্লক তৃণমূল শিক্ষক সংগঠনের সম্পাদকের কাছে ইস্তফা পত্র পাঠিয়েছেন। তাতে তাঁরা জানিয়েছেন, রাজ্য সরকার এবং শাসকদলের শিক্ষক সংগঠন শিক্ষকদের স্বার্থ বিরোধী কার্যকলাপ চালিয়ে যাচ্ছে। এতে তাঁরা মর্মাহত। তাই প্রাথমিক সদস্য পদ প্রত্যাহার করার ব্যাপারে দৃঢ় সিদ্ধান্ত নিয়েছেন তাঁরা।
গোটা বিষয়টি বুধবার প্রকাশ্যে এসেছে। জয়নগর হাই স্কুলের এক শিক্ষক তাপস কুমার কর বলছেন, “মহার্ঘ ভাতা আমাদের ন্যায্য পাওনা। রাজ্য জুড়ে এত বড় আন্দোলন চলছে। কিন্তু দেখে মনে হচ্ছে না পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য মাধ্যমিক তৃণমূল শিক্ষক সমিতির বকেয়া মহার্ঘ ভাতার দাবিতে কোনও সদর্থক ভূমিকা নিয়েছে। যাতে আগামী দিনের শিক্ষকদের স্বার্থ রক্ষার্থে সংগঠন উদ্যোগী হয় তার জন্যই এমন সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।”
ওই ঘটনায় কোনও প্রভাব পড়বে না বলে দাবি করেছে পশ্চিমবঙ্গ তৃণমূল মাধ্যমিক শিক্ষক সমিতি। এ ব্যাপারে সুতাহাটা ব্লক তৃণমূল শিক্ষক সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক উৎপল সামস্ত বলছেন, “যাঁরা গণ ইস্তফা দিয়েছেন, তাঁরা কেউই আন্তরিকভাবে সংগঠনের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন না। শাসক দলের ছত্রচ্ছায়ায় কিছু সুযোগ সুবিধা পাওয়ার জন্যই তারা সদস্যপদ নিয়েছিলেন। এতে আমাদের কোন ক্ষতি হবে না।” বিষয়টি জানা নেই বলে দাবি করেছেন পশ্চিমবঙ্গ তৃণমূল মাধ্যমিক শিক্ষক সমিতির পূর্ব মেদিনীপুর জেলা সভাপতি মিলন পাত্র।
উল্লেখ্য, গত কয়েক মাস ধরে পূর্ব মেদিনীপুর জেলা জুড়ে তৃণমূল শিক্ষক সংগঠনে সদস্যপদ নবীকরণ প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। তাতেও অনেকে সদস্যপদ নবীকরণে আগ্রহ দেখাচ্ছেন। না বলে অভিযোগ। এখন সংগঠনের প্রাথমিক সদস্যপদ থেকে ইস্তফা দেওয়ার ঘটনায় 'অল বেঙ্গল টিচার্স অ্যাসোসিয়েশনে'র পূর্ব মেদিনীপুর জেলার সম্পাদক রানা ভট্টাচার্য বলেন, “১০৫ শতাংশ মহার্ঘ ভাতা যে আমরা কেউই পাইনি, এ কথা সমস্ত শিক্ষকেরা বুঝতে পেরেছেন। জেলার সমস্ত স্কুলের শিক্ষক শিক্ষিকারা আমাদের আন্দোলনকে এমনিতেই নৈতিক সমর্থন জানিয়েছেন। ন্যায্য দাবি আদায়ে আমরা চাই সকলে ঐক্যবদ্ধ হোন।”
No comments