কোটি টাকার পণ্য বোঝাই ট্রাক থেকে দামী ধাতব পাত চুরির ঘটনায় ব্যাপক চাঞ্চল্য তৈরি হয়েছেহলদিয়া: তামিলনাড়ু থেকে হলদিয়ায় আসা প্রায় কোটি টাকার পণ্য বোঝাই ট্রাক থেকে দামী ধাতব পাত চুরির ঘটনায় ব্যাপক চাঞ্চল্য তৈরি হয়েছে। হলদিয়ার এক্সাই…
কোটি টাকার পণ্য বোঝাই ট্রাক থেকে দামী ধাতব পাত চুরির ঘটনায় ব্যাপক চাঞ্চল্য তৈরি হয়েছে
হলদিয়া: তামিলনাড়ু থেকে হলদিয়ায় আসা প্রায় কোটি টাকার পণ্য বোঝাই ট্রাক থেকে দামী ধাতব পাত চুরির ঘটনায় ব্যাপক চাঞ্চল্য তৈরি হয়েছে। হলদিয়ার এক্সাইড ব্যাটারি কারখানার জন্য ভিন রাজ্য থেকে লেড এন্টিমোনিয়াল অ্যালয় অর্থাৎ সীসা ও অ্যান্টিমোনির মিশ্র ধাতব পাত ট্রাকে করে আনা হচ্ছিল। দুর্গাচক সিপিটি মার্কেট সংলগ্ন এলাকায় দুষ্কৃতীরা ওই ট্রাক থেকে কয়েক লক্ষ টাকার ধাতব পাত চুরি করে বলে অভিযোগ। হলদিয়া থানায় অভিযোগ দায়ের হয়েছে। তল্লাশি চালিয়ে কিছু দামী ধাতব পাত উদ্ধার হয়েছে বলে দাবি পুলিসের। শুধু পণ্যবাহী ট্রাক নয়, বন্দর শহরে বিভিন্ন শিল্প কারখানায় দুষ্কৃতীদের দৌরাত্ম মারাত্মক আকার নিয়েছে বলে অভিযোগ। কারখানা চত্বরে কড়া প্রহরা সত্ত্বেও একের পর এক চুরির ঘটনায় কার্যত নাজেহাল শিল্পসংস্থাগুলি। হলদিয়া, দুর্গাচক ও ভবানীপুর থানায় গত ২০দিনে ৭-৮টি এধরনের অভিযোগ জমা পড়েছে। চুরির সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে হলদিয়ার বিভিন্ন কারখানা ও বন্দর থেকে পণ্য বোঝাই ট্রাক ছিনতাই হওয়ার ঘটনা।
পুলিস জানিয়েছে, তামিলনাড়ুর কাঞ্চিপুরমের মারাইমালাইয়ের পিওসিএল এন্টারপ্রাইজ লিমিটেড থেকে হলদিয়ার এক্সাইড ব্যাটারি কারখানায় আসছিল লেড-অ্যান্টিমোনির মিশ্র ধাতব পাত। গত ১৭এপ্রিল ওই পণ্য লোডিং হওয়ার ৫-৬দিন পর হলদিয়া এসে পৌঁছয়। ওই ট্রাকে ১৭৪৭টি অ্যান্টমোনির মিশ্র ধাতব পাত বোঝাই করা হয়। এর মূল্য ৯৫লক্ষ ৬০হাজার ২২৮টাকা। হলদিয়া এক্সাইড কারখানায় ঢোকার জন্য ট্রাকটি রাস্তায় অপেক্ষা করছিল। রাতের দিকে দুষ্কৃতীরা ওই গাড়ি থেকে ৪৭টি ধাতব পাত চুরি করে বলে অভিযোগ দায়ের হয়েছে। জানা গিয়েছে, চুরি হওয়া লেড-অ্যান্টমোনির মিশ্র ধাতব পাতের দাম প্রায় ২লক্ষ ৬০হাজার টাকা। এক্সাইড সূত্রে জানা গিয়েছে, অ্যান্টিমোনির এই মিশ্র ধাতু অটোমোবাইল ব্যাটারির গ্রিড তৈরির সময় কাজে লাগে। সীসা খুবই নরম ধাতু। এর সঙ্গে অ্যান্টিমোনি মেশালে তা শক্ত হয়। হলদিয়া থানার ইন্সপেক্টর ইন চার্জ সুকোমল ঘোষ বলেন, চুরির অভিযোগ দায়ের হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে তল্লাশি শুরু হয়েছে। ১৪টি ধাতব পাত এখন পর্যন্ত উদ্ধার হয়েছে। তদন্তের স্বার্থে বেশি কিছু বলা সম্ভব নয়।
এদিকে, গত এক মাসের মধ্যে হলদিয়া পেট্রকেম, হলদিয়া বন্দর, ইলেকট্র স্টিল কাস্টিং, হলদিয়া ওয়াটার, হলদিয়া এনার্জির মতো নামী সংস্থাগুলি শহরের বিভিন্ন থানায় চুরির অভিযোগ করেছে। কারখানাগুলির কড়া ঘেরাটোপ টপকে কয়েকটি দুঃসাহসিক চুরির ঘটনায় তাজ্জব পুলিসও। গত ১৮এপ্রিল হলদিয়া পেট্রকেমের উঁচু প্রাচীর ও তারের জাল কেটে প্যাকেজিং এলাকায় ঢুকে চুরির চেষ্টা চালায় তিন জন দুষ্কৃতী। তারা যন্ত্রাংশ চুরির চেষ্টা করছিল। এদের মধ্যে একজন পেট্রকেমের সিকিউরিটিদের হাতে ধরা পড়ে। একইভাবে ভবানীপুর থানা এলাকায় ইলেকট্র স্টিল এবং দুর্গাচক এলাকায় হলদিয়া এনার্জিতে চুরির ঘটনায় নাজেহাল দুই শিল্প সংস্থা। কিছুদিন আগেই হলদিয়া বন্দর এলাকায় ঢুকে লক্ষাধিক টাকার তামার তার চুরি করে দুষ্কৃতীরা। দুষ্কৃতীদের দৌরাত্মে কয়েকদিন আগেই হলদিয়ার আইওসি ও পেট্রকেমে গেঁওখালি জলপ্রকল্প থেকে জল সরবরাহ বন্ধ হতে বসেছিল। শিল্পশহরে আসা পাইপলাইনের জয়েন্ট থেকে লোহার গ্যাসকেট, কলার, নাট বল্টু সব চুরি করে নেয় দুষ্কৃতীরা। এগুলির মূল্য আড়াই লক্ষ টাকার উপর। পাইপলাইনের কলার খুলে নেওয়ায় লিকেজ শুরু হয়। পরে দ্রুত পরিস্থিতি সামাল দেন হলদিয়া ওয়াটার সার্ভিস প্রাইভেট লিমিটেডের কর্মকর্তারা। পুলিস জানিয়েছে, কারখানা চত্বরে স্ক্র্যাপ হিসেবে পড়ে থাকা দামী যন্ত্রাংশের বিভিন্ন পার্টস চুরি করাই দুষ্কৃতীদের লক্ষ্য। রাতে এজন্য পুলিস পেট্রলিং বাড়ানো হচ্ছে।
হলদিয়ার বিভিন্ন ট্রান্সপোর্ট সংস্থা, তাদের ড্রাইভার ও হেল্পারদের নামে ছিনতাইয়ের অভিযোগ দায়ের হয় নিয়মিত।
No comments