হলদিয়ায় মেতেছে গাজন উৎসব ও চড়ক মেলায়
ডিঘাসীপুর শ্রী শ্রী৺ চন্দনেশ্বর জীউর নীলকন্ঠেশ্বর গাজন উৎসব ও চড়ক মেলা ষষ্ঠ তম বর্ষে পদার্পণ করেছে। শুরু হয়েছে ২৪ শে চৈত্র থেকে চলবে আগামী ৩০ শে চৈত্র পর্যন্ত।
পূজার্চনা ভক্তদের দ্বারা স…
হলদিয়ায় মেতেছে গাজন উৎসব ও চড়ক মেলায়
ডিঘাসীপুর শ্রী শ্রী৺ চন্দনেশ্বর জীউর নীলকন্ঠেশ্বর গাজন উৎসব ও চড়ক মেলা ষষ্ঠ তম বর্ষে পদার্পণ করেছে। শুরু হয়েছে ২৪ শে চৈত্র থেকে চলবে আগামী ৩০ শে চৈত্র পর্যন্ত।
পূজার্চনা ভক্তদের দ্বারা সন্ধ্যায় ধুনুচি নৃত্য সহ বিভিন্ন আকর্ষণীয় চিন্তাকর্ষক অনুষ্ঠান অনুষ্ঠিত হবে জানালেন সংস্থার সম্পাদক নারায়ণচন্দ্র প্রধান। আজ নীলের ব্রত। নীলের ব্রত করেছেন বহু ভক্ত। মন্দির প্রাঙ্গণ থেকে হুগলী নদী কুকড়াহাটিতে পবিত্র গঙ্গাজল আনায়নের জন্য রওনা দিলেন। আজ থেকে আছি সকলেই মেতেছে গাজন উৎসবে সুসজ্জিত চারটি গাড়ি নিয়ে পবিত্র গঙ্গাজল আনোয়ানের জন্য মাটির কলস সুসজ্জিত বাঁশের বাঁক নিয়ে বেরিয়ে পড়েছেন এলাকার যুবক-যুবতীরা প্রায় কুড়ি কিলোমিটার তারা পায়ে হেঁটে এসে পবিত্র গঙ্গাজল মনস্কামনা পূরণের জন্য শ্রী শ্রী৺ চন্দনেশ্বর জীউর শিবের মাথায় ঢালা হবে। মন্দির থেকে প্রায় চার টি গাড়িতে করে ভক্তদের নিয়ে যাওয়া হচ্ছে সুসজ্জিত ভাবে। সংস্থার সম্পাদক জানালেন প্রায় ১২০০ জন পুণ্যার্থী রয়েছেন গঙ্গাজল আনার জন্য ।
আজ নীলের ব্রত এবং আগামীকাল গাজন উৎসব। গাজন দিয়ে শেষ হবে নীলকন্ঠেশ্বর মেলা আর চড়ক মেলা এবারে আকর্ষণ রয়েছে। ঘূর্ণিমান চড়ক দেখা যাবে পূর্ব মেদিনীপুর জেলার হলদিয়া ডিঘাসীপুর মন্দিরের সামনে। এই উৎসবকে সামনে রেখে বিভিন্ন দিন বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করা হয়েছে ইসকন মায়াপুর ও হলদিয়া প্রভুদের উপস্থিতিতে হরিনাম সংকীর্তন সহকারে নগর পরিক্রমা এবং মহতী ধর্মসভা। উপস্থিত ছিলেন শ্রীপাদ ভবামৃত কৃষ্ণ দাস ব্রহ্মচারী, ইসকন মায়াপুর প্রধান পূজক ইস্কন হলদিয়া শ্রীপাদ রাজরাজেশ্বর দাস ব্রহ্মচারী, শ্রীপাদ কমলাকান্ত হরিদাস, শ্রীপাদ নয় নানন্দ গৌর ভক্ত দাস । উপস্থিত ছিলেন বিশিষ্ট অতিথি বৃন্দ। গাজন মেলা ও চরক উৎসবের সার্বিক সাফল্য কামনা করে শুভেচ্ছা পাঠিয়েছেন হলদিয়া পৌরসভা স্থানীয় প্রাক্তন কাউন্সিলর আজগর আলী পল্টু।
গাজন উৎসব চড়ক মেলা নামেই পরিচিত
গাজন উৎসব বছরে তিনবার হয়ে থাকে চৈত্র মাস ছাড়া বছরের অন্য সময় গাজর উৎসবকে" হুজুগে গাজন" বলা হয়। গাজন সাধারণত তিন দিন ধরে হয় এই উৎসবে একটি অবিচ্ছেদ অঙ্গ হলো মেলা। চৈত্র মাস ছাড়া বছরে অন্য সময় শিবের গাজন অনুষ্ঠিত হলে তাকে হুজুগে গাজন বলা হয়। সাধারণত তিন দিন ধরে চলে এই উৎসবের অবিচ্ছেদ অঙ্গ হল গাজন মেলা। পশ্চিমবঙ্গে পালিত একটি হিন্দু লোক উৎসব। এই উৎসব শিব ,নীল, মনসা ও ধর্ম ঠাকুরের পূজা কেন্দ্রিক উৎসব। মালদহে গাজনের নাম গম্ভিরা, জলপাইগুড়িতে গোমিরা বাংলা পঞ্জিকা চৈত্র মাসের শেষ সপ্তাহ জুড়ে সন্ন্যাসী বা ভক্তদের মাধ্যমে শিবের গাজন অনুষ্ঠিত হয়। চৈত্র সংক্রান্তিতে চরক পূজার সঙ্গে এই উৎসবের সমাপ্তি ঘটে। ধর্মের গাজন সাধারণত বৈশাখ জ্যেষ্ঠ আষাঢ় মাসে পালিত হয় । চৈত্র মাস ছাড়া বছরের অন্য সময় শিবের গাজন অনুষ্ঠিত হলে তাকে হুজুগে গাজন বলা হয়।
সারা বাংলা জুড়ে পালিত হয় গাজন উৎসব ।
বাঙালি ঐতিহ্যের এই গাজন উৎসব। গাজনে সন্ন্যাসী বা ভক্তরা নিজেদের শরীরের বিভিন্ন উপায়ে যন্ত্রনা দিয়ে কৃচ্ছাসাধনে মাধ্যমে ইষ্ট দেবতাকে সন্তোষপ্রধানের চেষ্টা করে । গাজর উপলক্ষে তারা শোভাযাত্রা সহকারে দেবতার মন্দিরে যান। শিবের গাজনে দুজন সন্ন্যাসী শিব ও গৌরী সেজেএবং অন্যান্য নন্দী ঘিঙ্গি ভূত প্রেস দৈত্য দানব প্রভৃতি সং সেজে নিত্য করতে থাকেন শিবির নানা লৌকিক ছড়া আবৃত্তি গান করা হয়। চৈএ সংক্রান্তি গাজনে কালিনাচ একটি উল্লেখযোগ্য অনুষ্ঠান। ধর্মের গাজনের বিশেষ অঙ্গ হল নরমুন্ডু বা গলিত শব নিয়ে নিত্য বা মড়া খেলা যাকে বলে কালিকা পাতারি নাচ। জ্যেষ্ঠ মাসে মনসার গাজনে মহিলারা সন্ন্যাসী বা ভক্তরা অংশ নেয়। তারা চড়কের সন্ন্যাসীদের মতই অনুষ্ঠান পালন করে।
গাজন’ কথাটি এসেছে ‘গর্জন’ শব্দ থেকে। গাজন সন্ন্যাসীরা জোরে জোরে গর্জন করেন। ‘দেবাদিদেব মহাদেবের জয়’, ‘জয় বাবা বুড়ো শিবের জয়’, ‘ভাল বাবা শিবের চরণের সেবা লাগে’ ইত্যাদি ধ্বনি দিয়ে। শিব ঠাকুরের জয়ধ্বনিতে মুখর হয় গ্রামের আকাশ বাতাস। আর একটি মত হল—গা’ বলতে গ্রামকে বোঝায়। আর ‘জন’ বলতে বোঝায় জনসাধারণ। গ্রামীণ জনসাধারণের উৎসব তাই নাম হয় ‘গাজন। জনশ্রুতি হল গাজন উৎসবের দিন শিবের সঙ্গে। কালীর বিবাহ হয়। আর গাজন সন্ন্যাসীরা হলেন। বরপক্ষ। চৈত্র সংক্রান্তিতে চড়কপুজোর উৎসবের সঙ্গে শিবের গাজন শেষ হয়। আর ধর্মের গাজন অনুষ্ঠিত হয় বৈশাখী বুদ্ধপূর্ণিমায়। অনেক সময় জ্যৈষ্ঠ ও আষাঢ় পূর্ণিমায় ধর্মের গাজন হয়। গাজন উৎসব উপলক্ষে মেলা বসে।
পৌরাণিক কাহিনি অনুসারে শিবের উপাসক বাণ রাজা শ্রীকৃষ্ণের সঙ্গে যুদ্ধে ক্ষতবিক্ষত হয়ে মহাদেবকে সন্তুষ্ট করার জন্য নিজের গায়ের রক্ত দিয়ে নৃত্যগীত পরিবেশন করেছিলেন। তাই শৈব সম্প্রদায়ের ভক্তগণ শিবের প্রীতির জন্য আত্মনির্যাতন করে গাজন উৎসবের আয়ােজন করেন। আগে সমাজের পতিত ব্রাহ্মণেরা গাজন। পুজো করতেন। এই পূজার বিশেষত্ব হল কুমীর পুজো, জ্বলন্ত কয়লার ওপর খালি পায়ে হাঁটা, কাঁটা, বঁটির ওপর ঝাঁপ দেওয়া। সর্বাঙ্গে বাণ ফোঁড়া, চড়ক গাছে ঝোলা ইত্যাদি।
No comments