Page Nav

HIDE

Grid Style

GRID_STYLE

Post/Page

Weather Location

Breaking News:

latest

শরীর ও স্বাস্থ্য- মনীষা মুখোপাধ্যায়

শরীর ও স্বাস্থ্য- মনীষা মুখোপাধ্যায়

বিশ্ব ক্যানসার দিবস গবেষণায় আশার আলো...জানালেন বোস ইনস্টিটিউট-এর সিনিয়র অধ্যাপক ও বিশিষ্ট ক্যান্সার গবেষক ডঃ গৌরীশঙ্কর সা।
• ক্যান্সার চিকিৎসা এখন অনেকটাই ‘কাস্টোমাইজড’ বা ব্যক্তিগত প্রয়োজন অনুসা…

 

শরীর ও স্বাস্থ্য- মনীষা মুখোপাধ্যায়


 


বিশ্ব ক্যানসার দিবস গবেষণায় আশার আলো...

জানালেন বোস ইনস্টিটিউট-এর সিনিয়র অধ্যাপক ও বিশিষ্ট ক্যান্সার গবেষক ডঃ গৌরীশঙ্কর সা।


• ক্যান্সার চিকিৎসা এখন অনেকটাই ‘কাস্টোমাইজড’ বা ব্যক্তিগত প্রয়োজন অনুসারে করা হয়। একটা সময় ধরা হতো, যে কোনও এক ধরনের ক্যান্সারে আক্রান্ত সব রোগীই একই ধরনের ওষুধ ও কেমোথেরাপি পাবেন। নতুন গবেষণা সেই ভাবনায় বদল এনেছে। বরং এখন একই ধরনের ক্যান্সারে আক্রান্ত বিভিন্ন রোগীর জেনোমিক অ্যানালিসিস করা হচ্ছে। এতে নির্দিষ্ট কোনও জিনের মিউটেশনের জন্যই কি তাঁর ক্যান্সার হয়েছে নাকি কোনও নির্দিষ্ট জিন এর জন্য দায়ী, তা দেখে নেওয়া হয়। এতে বোঝা যায় রোগীর ক্যান্সার কী ধরনের জিন মিউটেশনের ফলে হয়েছে। সেই অনুযায়ী রোগী চিকিৎসা পান। শুধুমাত্র কী ধরনের ক্যান্সার তা-ই নয়, জেনোমিক ও এপিজেনোমিক অলটারেশন করে বর্তমানে দেখে নেওয়া সম্ভব কোনও ব্যক্তি আদৌ ক্যান্সার প্রবণতার জিন বহন করছেন কি না। এটি জানা গেলে রোগ হানা দেওয়ার আগেই পর্যাপ্ত সতর্কতা ও চিকিৎসা গ্রহণ করার সুযোগ থাকে। হলিউড অভিনেত্রী অ্যাঞ্জেলিনা জোলি এর প্রকৃষ্ট উদাহরণ। তাঁর ক্ষেত্রে জিনের ব্রাকা মিউটেশনের ফলে স্তন ক্যান্সারে আক্রান্ত হওয়ার ৮০ শতাংশ শঙ্কা ছিল। ফলাফল জানার পর অস্ত্রোপচার করে দিব্য ক্যান্সারকে ঠেকিয়ে দিয়েছেন অ্যাঞ্জেলিনা।  

• জেনেরিক অ্যানালিসিসে ক্যান্সারের ধরন বোঝা গেলেই শুরু করা যায় কাস্টোমাইজড চিকিৎসা। এতে একই ক্যান্সারেও ভিন্ন ভিন্ন রোগীর শরীর ও সহ্যক্ষমতা বুঝে পৃথক পৃথক ওষুধ দিয়ে চিকিৎসা করা হয়। 

• মাল্টিড্রাগ রেজিস্ট্যান্স ক্যান্সার সেলের বা ক্যান্সারের স্টেম সেলের খোঁজ ক্যান্সার রোগের ক্ষেত্রে আর এক যুগান্তকারী আবিষ্কার। ক্যান্সারের চিকিৎসার মূল লক্ষ্য ক্যান্সার কোষের মৃত্যু ঘটিয়ে রোগীকে আরোগ্যের পথে নিয়ে যাওয়া। কিন্তু বরাবরই দেখা যেত, ক্যান্সার কোষকে মারার জন্য ওষুধ ও কেমোথেরাপি যথেষ্ট হচ্ছে না। ঠিক সময়ে ওষুধ ও কেমোথেরাপি দেওয়া হলেও রোগীর ক্যান্সার প্রতিহত হচ্ছে না। তারা সব ক্যান্সার কোষকে মারতে পারছে না। কিছু কিছু ক্যান্সার কোষ ফের সক্রিয় হয়ে উঠছে। এই প্রবণতা ঠেকাতে সকলের আগে এই কোষগুলোকে চিনতে পারা প্রয়োজন। ইতিমধ্যেই এদের চিহ্নিত করা গিয়েছে। ফলে বর্তমানে এই ধরনের কোষগুলোর উপর প্রথমে অন্য কোনও ওষুধ  প্রয়োগ করে এদের সংবেদী করে তুলে কেমোথেরাপি দেওয়া হয়। দেখা গিয়েছে, এতে ক্যান্সার ফিরে আসার শঙ্কা অনেকটা কমে। 

• কলকাতা বোস ইনস্টিটিউটের বিজ্ঞানী তানিয়া দাস সম্প্রতি এই বিষয়ে কাজ করেছেন। তানিয়া দেখিয়েছেন, খুব সাধারণ দু’টি ওষুধ মেটমরফিন ও অ্যাস্পিরিন রোগীর শরীরে ক্যান্সার স্টেম সেলগুলির উপর দারুণ কাজ করে। এই ওষুধ নির্দিষ্ট ডোজে ব্যবহারের পর কেমোথেরাপি দিলে, সুস্থ হওয়ার পর ফের ক্যান্সার ফিরে আসার শঙ্কা প্রায় তলানিতে গিয়ে ঠেকছে। পিজি হাসপাতালে এই উপায়ে কেমোথেরাপি চালুও হয়েছে। একে বলে রিপারপাসিং অব ড্রাগ। 

• কেমোথেরাপি যেখানে ব্যর্থ হচ্ছে, একটা সময়ে সেখানেই ক্যান্সারের চিকিৎসা বন্ধ হয়ে যেত। দেখা যেত, কেমোথেরাপি না নিলে রোগী হয়তো ছ’মাস থেকে এক বছর বাঁচতেন। কেমোথেরাপি নিলে রোগী বাঁচতেন গড়ে পাঁচ বছর। এই বাঁচাকে আর একটু বাড়িয়ে তুলেছিল প্রিসিসান থেরাপি। এর খরচ কেমোথেরাপির চেয়ে আর একটু বেশি (প্রায় ২০-২৫ লক্ষ টাকা)। ১০-১২ শতাংশ রোগী এই প্রিসিসান থেরাপির মাধ্যমে পাঁচ বছরের বেশি বাঁচেন। কিন্তু বাকিরা এতটা বাঁচেন না। ফলে প্রিসিসান থেরাপি নিয়েও বহু রোগী মারা গিয়েছেন, এমন নজির রয়েছে। এরপর এল আর একটু উন্নত ইমিউনোথেরাপি। এর খরচ প্রায় এক-দেড় কোটি টাকা। এতে মাত্র ২৫ শতাংশ রোগীর আরও কয়েক বছর বেঁচে থাকার সম্ভাবনা বাড়ল। ৪ জনের মধ্যে মাত্র ১ জন বাঁচলেন। বাকি ৩ জন দেড় কোটি টাকা খরচ করেও বাঁচলেন না। বরং ইমিউনোথেরাপি ব্যর্থ হলে প্রাথমিক পর্যায়েই রোগী মারা যাবেন। এই তিন জন রোগী কেন ইমিউনোথেরাপিতেও বাঁচলেন না— এটাই ক্যান্সারের চিকিৎসায় এক বড় রহস্য! এই রহস্যই বোস ইনস্টিটিউট গত ১৫ বছর ধরে উন্মোচনের চেষ্টা করেছে। সুখের খবর, এখানকার বিজ্ঞানীরা খুঁজে পেয়েছেন ‌এই ব্যর্থতার কারণ। তাকে কীভাবে সর্বক্ষেত্রে সফল করা যায়, তা নিয়েও বিস্তর গবেষণা চালিয়েছেন। কিছু ওষুধ দিয়ে সেসব কারণকে নির্মূল করার পথেও আমাদের বিজ্ঞানীরা অনেকটা সফল হয়েছেন। ইতিমধ্যে সেইসব ওষুধের প্রয়োগ ইঁদুরের শরীরে হয়েছে ও সাফল্য মিলেছে। এবার পেটেন্ট করে তা মানবদেহে ট্রায়ালের অপেক্ষা। এই ট্রায়াল হলে বহু ক্যান্সার রোগীর আয়ু অনেকটা বাড়ানো যাবে। আগামী ১০ বছরের মধ্যে প্রায় ৫০ শতাংশ ক্যান্সার রোগীর আয়ু বাড়িয়ে তোলাই এখন বিজ্ঞানীদের মূল লক্ষ্য।  



No comments