Page Nav

HIDE

Grid Style

GRID_STYLE

Post/Page

Weather Location

Breaking News:

latest

ভারতীয় সিনেমায় আমিই হলাম প্রবীণতম ব্যস্ত অভিনেতা হলেন হারাধন বন্দ্যোপাধ্যায়

ভারতীয় সিনেমায় আমিই হলাম প্রবীণতম ব্যস্ত অভিনেতা হলেন হারাধন বন্দ্যোপাধ্যায় ১৯৪৮ সালে ‘দেবদূত’ ছবি দিয়ে চলচ্চিত্র জীবন শুরু | ২০১২-তে এসেও শ্যুটিং করছিলেন ‘খোকা ৪২০’ ছবির৷ অর্থাত্‍ দীর্ঘ ৬৫ বছর | এটা বিশ্বরেকর্ড কিনা, হিসেব র…

 


ভারতীয় সিনেমায় আমিই হলাম প্রবীণতম ব্যস্ত অভিনেতা হলেন হারাধন বন্দ্যোপাধ্যায় 

১৯৪৮ সালে ‘দেবদূত’ ছবি দিয়ে চলচ্চিত্র জীবন শুরু | ২০১২-তে এসেও শ্যুটিং করছিলেন ‘খোকা ৪২০’ ছবির৷ অর্থাত্‍ দীর্ঘ ৬৫ বছর | এটা বিশ্বরেকর্ড কিনা, হিসেব রক্ষকরা বলতে পারবেন ৷ এক কথায় বুক বাজিয়ে তিনি বলেছিলেন, ‘এই মুহূর্তে ভারতীয় সিনেমায় আমিই হলাম প্রবীণতম ব্যস্ত অভিনেতা ৷’ তিনি বাংলার গর্ব হারাধন বন্দ্যোপাধ্যায় | তবে অনেকেই জানেন না তিনি ছিলেন একজন স্বাধীনতা সংগ্রামী | স্বাধীনতা সংগ্রামে অংশ নিয়ে জেলও খেটেছিলেন তিনি।

সত্যজিত্‍ রায় প্রসঙ্গে হারাধনবাবু বলেছিলেন, ‘উনি আমার ঈশ্বর৷ দেবতার মতো ৷ আজ আমার যতটুকু পরিচয়, তার পুরোটাই ওঁর কৃতিত্ব৷’ এক সাক্ষাৎকারে তিনটি ঘটনার উল্লেখ করেন হারাধনবাবু, যা সম্ভবত এর আগে তিনি কাউকেই বলেননি ৷ তিনটে ঘটনাই সত্যজিত্‍‌বাবুকে নিয়ে৷ প্রথম দু’টো ঘটনা ‘জয় বাবা ফেলুনাথ’ প্রসঙ্গে৷ বললেন, ‘সিনেমায় দেখে থাকবেন আমার ঠাকুরদা গ্রামোফোনে গান শুনছেন ৷ তো সেই চরিত্রে কাকে নেবেন ভাবছিলেন মানিকদা ৷ আমাকে বললেন, হারাধন, তোমার ঠাকুরদাকে তো পাওয়া যাচ্ছে না ৷ কী করব? আমি বললাম, আমার বড়মামা অনেকটা আমারই মতো দেখতে, একটু যা বয়স বেশি ৷ মানিকদা বললেন, তিনি কি অভিনয় করবেন ?’ আমি তাঁকে আশ্বস্ত করে বড়মামাকে দিয়ে কাজটা করিয়ে নিয়েছিলাম ৷ ওই ছবিতেই গঙ্গার ঘাটে ফেলু মিত্তিরের সঙ্গে আমার আর আমার স্ত্রীর পরিচয় হওয়ার কথা ৷ তো মানিকদা প্রথমে ঠিক করেছিলেন স্থানীয় কোনও অভিনেত্রীকে দিয়ে কাজটা করাবেন ৷ কিন্ত্ত ওই শ্যুটিংয়ে আমার নিজের স্ত্রীও সঙ্গে গিয়েছিলেন ৷ মানিকদা বললেন, হারাধন, তোমাকে আর নকল বৌ দেব না ৷ আসল বৌকে নিয়েই শটটা দাও ৷ মানিকদার হুকুম অগ্রাহ্য করতে পারিনি ৷’ তৃতীয় ঘটনাটা ‘শতরঞ্জ কি খিলাড়ি’ প্রসঙ্গে৷ হারাধনবাবুর চোখ দু’টো চকচক করে উঠল এ ঘটনাটা বলতে গিয়ে ৷ বললেন, ‘একদিন মানিকদা ফোন করে বললেন, তোমাকে একটু উপকার করে দিতে হবে৷ একটা ছোট্ট সিকোয়েন্সে সাইলেন্ট রোলে অভিনয় করে দিতে হবে ৷ নর্থ ক্যালকাটার একটা বাড়ির ছাদে শ্যুটিং হবে ৷ লখনৌয়ের রইস লোকেরা ছাতে ঘুড়ি ওড়াচ্ছে ৷ তুমি কি করে দেবে? আমি বললাম, অমন করে বলবেন না ৷ হুকুম করুন ৷ এক মিনিটেরও কম দৈর্ঘ্যের একটা দৃশ্য ৷ তবু অভিনয় করে যে আনন্দ পেয়েছিলাম, আর কখনও পাইনি৷’

১৯২৬-এর ৬ নভেম্বর অধুনা বাংলাদেশের কুষ্ঠিয়ায় জন্মগ্রহণ করেন অভিনেতা হারাধন বন্দ্যোপাধ্যায়। স্কুলজীবন শুরু সেইখানেই, ছাত্রজীবন শেষ কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ে। ছাত্রাবস্থায় জড়িয়ে পড়েছিলেন স্বাধীনতা সংগ্রামে, জেলও খেটেছিলেন তিনি | কর্মজীবন শুরু গান অ্যান্ড শেল ফ্যাক্টরিতে। পরে একটি জীবনবিমা কোম্পানিতে যোগ দেন। 

১৯৪৮-এ অতনু বন্দ্যোপাধ্যায়ের ছবি ‘দেবদূত’ দিয়েই চলচ্চিত্রে আত্মপ্রকাশ তাঁর। মঞ্চশিল্পী হিসাবেও তিনি যথেষ্ট খ্যাত ছিলেন। উত্পল দত্তের ‘ফেরারি ফৌজ’ নাটকে তাঁর অভিনয় সাড়া ফেলে দিয়েছিল। শেষ দু’টি ফেলুদার ছবিতে তিনি ছিলেন ‘সিধু জ্যাঠা’। সত্যজিত্ রায়ের ‘কাপুরুষ ও মহাপুরুষ’ হোক বা ‘শাখাপ্রশাখা’, ‘সোনার কেল্লা’ থেকে ‘জয় বাবা ফেলুনাথ’, ‘সীমাবদ্ধ’-সহ বেশির ভাগ ছবিতেই হারাধনবাবুর অভিনয় নজর কেড়েছে আপামর বাঙালির। ২০০৫ সালে শ্রেষ্ঠ সহকারি অভিনেতা হিসাবে জাতীয় পুরস্কার পেয়েছেন। ২০১১-য় পেয়েছেন বঙ্গবিভূষণ সম্মান।

শতাধিক বাংলা সিনেমায় দাপটের সঙ্গে অভিনয় করে এসেছেন শক্তিশালী এই অভিনেতা। বহু টেলিসিরিয়ালেও তাঁকে দেখা গেছে। অভিনয় করেছেন বেশ কিছু হিন্দি সিনেমাতেও। মূলত চরিত্রাভিনেতা হারাধন বাবু প্রতি ক্ষেত্রেই তাঁর অসামান্য প্রতিভার সাক্ষর রেখেছেন। 'জয় বাবা ফেলুনাথ', 'যদি জানতেম', 'শাখাপ্রশাখা', 'সোনার কেল্লা', 'গুপি বাঘা ফিরে এল' সহ বহু বিখ্যাত সিনেমার অবিচ্ছেদ্দ্য অঙ্গ ছিলেন বরিষ্ঠ এই অভিনেতা। অভিনয় করেছেন বরফি, পরিণীতার মত হিন্দি ছবিতেও। ২০০৫-এ `ক্রান্তিকাল`-র জন্য তিনি শ্রেষ্ঠ সহ অভিনেতার জাতীয় পুরষ্কার পান।

শেষ মুক্তিপ্রাপ্ত ছবি অনুরাগ বসুর ‘বরফি’। ২০১৩ সালের ৫ জানুয়ারী প্রয়াত হন হারাধনবাবু। মৃত্যুকালে বয়স হয়েছিল ৮৬ বছর। তাঁর মৃত্যুর সাথেই অবসান হল বাংলা চলচ্চিত্রের একটি অধ‍্যায়ের।

আজ অভিনেতা হারাধন বন্দ্যোপাধ্যায়ের প্রয়াণদিবসে শ্রদ্ধার্ঘ‍্য।

No comments