"ওইখানে তোর দাদীর কবর ডালিম গাছের তলে,তিরিশ বছর ভিজায়ে রেখেছি দুই নয়নের জলে।এতটুকু তারে ঘরে এনেছিনু সোনার মতন মুখ,পুতুলের বিয়ে ভেঙে গেল বলে কেঁদে ভাসাইত বুক।"
আজ পল্লী কবি জসীমউদ্দীন-এর শুভ জন্মদিবস। ১৯০৩ সালে আজকের দ…
"ওইখানে তোর দাদীর কবর ডালিম গাছের তলে,
তিরিশ বছর ভিজায়ে রেখেছি দুই নয়নের জলে।
এতটুকু তারে ঘরে এনেছিনু সোনার মতন মুখ,
পুতুলের বিয়ে ভেঙে গেল বলে কেঁদে ভাসাইত বুক।"
আজ পল্লী কবি জসীমউদ্দীন-এর শুভ জন্মদিবস। ১৯০৩ সালে আজকের দিনেই ফরিদপুরে জন্মগ্রহণ করেন কবি জসীমউদ্দীন। বাংলা সাহিত্যে 'নকশী কাঁথার মাঠ' ও 'সোজন বাদিয়ার ঘাট' কবির অন্যতম শ্রেষ্ঠ দুইটি রচনা। গাঁয়ের লোকের দৃষ্টিতে গ্রাম্য জীবন এবং পরিবেশ-প্রকৃতি ফুটিয়ে তোলার জন্য জসীম উদ্দীন বিশেষভাবে পরিচিত। তার এই সুখ্যাতি তাকে 'পল্লি কবি' উপাধি এনে দিয়েছে। কবির সাজু ও রুপাই - এর অমর প্রেমগাঁথা বাংলা সাহিত্যে এক বিরল সৃষ্টি।
'কবর' কবিতাটি বাংলা সাহিত্যে এক অনন্য অবদান। তিনি আধুনিক বাংলা কাব্যে এক নতুন আবহ সৃষ্টি করেন। তাঁর কাব্যের ভাব, বিষয়, শব্দ, চরিত্র, প্রকরণ, ছন্দ, অলংকার, গঠন-কৌশল, আবেদন ইত্যাদি সবই ভিন্ন স্বাদ ও মেজাজের। সমকালীন কবিরা যখন সকলেই আধুনিক নগর-চেতনায় উদ্বুদ্ধ, যান্ত্রিক সভ্যতার জটিলতায় যন্ত্রণাবিদ্ধ, জসীমউদ্দীন তখন চিরায়ত গ্রামীণ জনপদ, আবহমান লোকজ ঐতিহ্যের সুস্মিত ধারায় পরিস্নাত এক স্বতন্ত্র বৈশিষ্ট্যের অধিকারী কবি হিসেবে ভিন্ন মাত্রিক সৃজনশীলতায় বাংলা সাহিত্যের নতুন দিগন্ত উন্মোচনে ব্যাপৃত হন।
গ্রামীণ জনপদের সহজ, সরল, সাধারণ মানুষ, তাদের বৈচিত্র্যপূর্ণ জীবনযাত্রা, সুখ-দুঃখ, হাসি-কান্না, প্রেম-বিরহ, আনন্দ-কোলাহল, ছায়া-ঢাকা সবুজ অরণ্য, দিগন্ত বিস্তৃত মাঠ, শস্য ভরা ক্ষেত, নদী-নালা, ফুল-পাখি ইত্যাদি জসীম উদ্দীনের কাব্যে অসাধারণ বর্ণ-সুষমায় মনোমুগ্ধকররূপে রূপায়িত হয়েছে। লোকজ শব্দের স্বচ্ছন্দ ব্যবহার ও লোকজ জীবন-স্বভাবের অন্তরঙ্গ বর্ণনায় তিনি অসাধারণ সাফল্য অর্জন করেছেন। ফলে বাংলা কাব্যে তিনি নতুন ধারার প্রবর্তক ও স্বতন্ত্র মৌলিক প্রতিভার অধিকারী কবি হিসাবে পরিচিহ্নিত ও স্বীকৃত। জসীমউদ্দীন সম্পর্কে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর যথার্থই বলেছেন, ‘‘জসীমউদ্দীনের কবিতার ভাব, ভাষা ও রস সম্পূর্ণ নূতন ধরনের। প্রকৃত কবির হৃদয় এই লেখকের আছে।’’
এই কালজয়ী কবির জন্মদিবসে আমার শ্রদ্ধার্ঘ্য।
No comments