৬৫ বছর ধরে আদর্শ গ্রাম গড়ার লক্ষ্যেকাজ করছে আনারপুর সবুজ সঙ্ঘ
আনারপুর সবুজ সঙ্ঘের মাঠ যেন পল্লিগ্রামের ইডেন গার্ডেন্স। শীতের দুপুরে টানটান উত্তেজনাপূর্ণ ক্রিকেট ম্যাচ উপভোগ করছেন হাজার হাজার মানুষ। তিল ধারণের ঠাঁই নেই। মাঠজুড়ে বি…
৬৫ বছর ধরে আদর্শ গ্রাম গড়ার লক্ষ্যেকাজ করছে আনারপুর সবুজ সঙ্ঘ
আনারপুর সবুজ সঙ্ঘের মাঠ যেন পল্লিগ্রামের ইডেন গার্ডেন্স। শীতের দুপুরে টানটান উত্তেজনাপূর্ণ ক্রিকেট ম্যাচ উপভোগ করছেন হাজার হাজার মানুষ। তিল ধারণের ঠাঁই নেই। মাঠজুড়ে বিজ্ঞাপন বিভিন্ন সংস্থার। স্কোরবোর্ড, খেলার রানিং কমেন্ট্রি, বাড়িতে বসে লাইভ দেখার জন্য ক্যামেরা, চিয়ার গার্লস, আধুনিক ক্রিকেটের সব উপাদানই হাজির। বাউন্ডারি ও ওভার বাউন্ডারি বা উইকেট পড়লেই প্রাইজ মানি ঘোষণা হচ্ছে মাইকে। শুধু গ্যালারিটুকু নেই। কিন্তু গ্রামের মহিলাদের খেলা দেখার জন্য শামিয়ানা টাঙিয়ে বিশেষ ব্যবস্থা হয়েছে। সবুজ সঙ্ঘের মাঠে ক্রিকেটের ফাইনাল দেখতে দুপুরে রান্না খাওয়া দ্রুত সেরে আশেপাশের পাঁচ-সাতটি গ্রামের মানুষের ভিড় উপচে পড়েছে। সেখানে খেলছেন উত্তরাখণ্ড, কাশ্মীর, মুম্বই, ছত্তিশগড়, বিহার, উত্তরপ্রদেশের ক্রিকেটাররা।
২৬ বছর ধরে ক্রিকেট প্রতিযোগিতার আয়োজন করছে সবুজ সঙ্ঘ। টুর্নামেন্ট ঘিরে শুধু আনারপুর নয়, উন্মাদনা ছড়িয়ে পড়ে আশেপাশের বহু গ্রামে। তাই ক্রিকেট প্রতিযোগিতা নয়, ক্রিকেট এখানে বাৎসরিক উৎসব। এবছরও ১৬টি টিম নিয়ে টানা এক সপ্তাহ ধরে হয় প্রতিযোগিতা। ৭ জানুয়ারি ক্রিকেটের ফাইনালে চ্যাম্পিয়ন হয় হলদিয়ার ব্লু-স্টার ও রানার্স হয় কৃষ্ণনগরের শিবশক্তি ইঞ্জিনিয়ারিং। চ্যাম্পিয়ন দল ট্রফি সহ ৪০ হাজার টাকা এবং রানার্স দল পেয়েছে ট্রফি সহ ২৫ হাজার টাকা। ক্রিকেটের আয়োজন আনারপুর সবুজ সঙ্ঘের আসল পরিচয় নয়। গ্রমোন্নয়ন ও সামাজিক কাজ করতে গিয়েই তরুণ প্রজন্মকে মাঠমুখী করতে ক্রিকেট ও ফুটবল চর্চা করে তারা। প্রায় ৬৫ বছর আগে আদর্শ গ্রাম গড়ার লক্ষ্য নিয়ে সবুজ সঙ্ঘের পথচলা শুরু। ১৯৫৮ সাল। স্বাধীনতার পর পর তরতাজা তরুণ দল গ্রাম গঠনের কাজে মন দিতে চান। সুতাহাটা সেইসময়ে স্বাধীনতা সংগ্রামীদের পীঠস্থান হিসেবে পরিচিত।
আনারপুরের তরুণরা সরস্বতী ও লক্ষ্মীপুজোয় একসময় গ্রাম পরিচ্ছন্ন করার কাজ করতেন। একদিন সবাই গ্রামের মন্দিরে বসে সিদ্ধান্ত নিলেন প্রাইমারি স্কুল ও পাঠাগার গড়ে তোলা হবে। তৈরি হল দেশবন্ধু পাঠাগার। পরে এই পাঠাগারই আনারপুর সবুজ সঙ্ঘ নামে পরিচিত হয়েছে। ১৯৬৯-৭০ সালে এটি সরকারের অনুমোদন পায়।
সঙ্ঘের সভাপতি প্রদীপ দাস বলেন, সংস্থা তৈরির পর স্বামী বিবেকানন্দ ও রামকৃষ্ণ মিশনের ভাবধারায় গ্রাম গঠনের কাজ শুরু করেন তৎকালীন সদস্যরা। এখানে ক্লাব ও গ্রাম কমিটি গ্রামের উন্নতির জন্য বরাবর একসঙ্গে কাজ করে। নরেন্দ্রপুর রামকৃষ্ণ লোকশিক্ষা পরিষদের অধীনে হলদিয়া ও সুতাহাটার গ্রামে ক্লাস্টার কমিটি হিসেবে কাজ করে সবুজ সঙ্ঘ। আনারপুরের কার্তিক পড়ালি নামে এক সহৃদয় ব্যক্তি সত্তরের দশকে ২৬ ডেসিমল জমি দান করেন। তার উপর গড়ে উঠেছে ক্লাব, প্রাইমারি স্কুল। ১৯৮২ সালে যুব কল্যাণ দপ্তর ও কুঁকড়াহাটি গ্রাম পঞ্চায়েতের উদ্যোগে তৈরি হয় খেলার মাঠ। ক্লাবকে ঘিরেই তৈরি হয়েছে স্বাস্থ্যকেন্দ্র, আইসিডিএস কেন্দ্র, স্বনির্ভর গোষ্ঠীর প্রশিক্ষণ কেন্দ্র।
ক্লাবের সম্পাদক তপনকুমার বেরা, সহ সভাপতি অশেষ বেরা বলেন, গ্রামের পড়ুয়া ও তরুণ প্রজন্মের মধ্যে মূল্যবোধের বিকাশ ঘটাতে বছরভর স্কুলের মতো বিভিন্ন দিন উদযাপন হয়। পাঠাগারে এখন ১৪০০ বই রয়েছে। সারা বছর দুঃস্থ পড়ুয়াদের পাশে থাকে ক্লাব। নিয়মিত পাঠচক্র ও ঘরোয়া বাণিজ্যমুখী চাষবাসের নানা প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়। সবুজ সঙ্ঘের উদ্যোগেই আনারপুর হয়ে উঠেছে হলদিয়ার ‘মডেল গ্রাম’। এই গ্রাম দেখতে কয়েক দশক আগে এখানে এসেছিলেন ভারতের লোকসভার স্পিকার পিএ সাংমা, লোকেশ্বরানন্দজি মহারাজ।
No comments