Page Nav

HIDE

Grid Style

GRID_STYLE

Post/Page

Weather Location

Breaking News:

latest

শারীরিক প্রতিবন্ধকতায় হার না মানা বিপ্লবের নাম -- জন রীড --

শারীরিক প্রতিবন্ধকতায় হার না মানা বিপ্লবের নাম -- জন রীড --
১৮৮৭ সালের ২২শে অক্টোবর জন রীডের জন্ম আমেরিকার এমন এক সমাজে, যেখানে  সামাজিক অপরাধ। শহরটা নাম পোর্টল্যান্ড । তাঁর পিতা চার্লস জেরোমে রীড তৎকালীন ধনী ব্যক্তি বা অর্থলোলুপ …

 





শারীরিক প্রতিবন্ধকতায় হার না মানা বিপ্লবের নাম -- জন রীড --


১৮৮৭ সালের ২২শে অক্টোবর জন রীডের জন্ম আমেরিকার এমন এক সমাজে, যেখানে  সামাজিক অপরাধ। শহরটা নাম পোর্টল্যান্ড । তাঁর পিতা চার্লস জেরোমে রীড তৎকালীন ধনী ব্যক্তি বা অর্থলোলুপ ট্রাস্টগুলোর সাথে হাত না মিলিয়ে আপোসহীন লড়াই করেছিলেন সেখানকার বনসম্পদ বাঁচানোর জন্য। এরজন্য তাঁকে মারধর করা হয়, এমনি তাঁর চাকরিও চলে যায়। তবু তিনি নিজ সিদ্ধান্তের প্রতি দৃঢ়প্রতিজ্ঞ ছিলেন। 

পিতার কাছ থেকেই আপোসহীন চরিত্র জন রীডের অন্তরে প্রবাহিত হয়েছিল বাল্যকাল থেকেই। 

ছোট্ট একটি ঘটনা এর প্রকৃষ্ট উদাহরণ। তাঁকে পড়তে পাঠানো হয় হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ে, যেখানে সাধারণত তৈলকুবের, কয়লাখনির মালিক, ইস্পাত প্রভুদের সন্তানরাই পড়াশুনো করতো। 

চার বছরের নিরপেক্ষ পাঠ্যক্রম শেষ করে বেরিয়ে আসত সমাজ সম্পর্কে উদাসীন ভবিষ্যত প্রজন্ম।

এরকম একটি আত্মম্ভরিতায় পরিপূর্ণ বিশ্ববিদ্যালয়ের গন্ডির মধ্যে তিনি তৈরি করলেন একটি সমাজতান্ত্রিক সংগঠন। 

বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপকরা একে ছেলেখেলা ভেবে গুরুত্ব দেয়নি। 

তবে Radicalism এর ভূত যে তাঁর মাথা থেকে একটুও যায়নি, তার সাক্ষ্য প্রমাণ তাঁর তেত্রিশ বছরের স্বল্পায়ু জীবন। 

অত্যন্ত ভালো লিখতে পারার ক্ষমতার কারণে বিভিন্ন পত্রপত্রিকা থেকে ডাক আসতে লাগলো পড়াশুনো শেষ হওয়ার আগেই। 

তবে প্রতিবাদ যার রক্তে, তাকে বেশিরভাগ সময় খুঁজে পাওয়া যেত বিপ্লবীদের ভিড়ে। ভয়ঙ্কর শীত, ক্ষুধা উপেক্ষা করে তিনি বিপ্লবীদের সঙ্গী হতেন। তথ্য সংগ্রহ করতেন। 

এভাবে তথ্য সংগ্রহ করতে গিয়ে তেত্রিশ বছরের জীবনে বিশবার গ্রেফতার হন। 

যে কোনো তাৎপর্যপূর্ণ বিষয়ের সন্ধান পেলেই ঝাঁপিয়ে পড়তেন। 

অত্যধিক পরিশ্রমের কারণে তাঁর একটা কিডনি নষ্ট হয়ে হয়ে যায় খুব কম বয়সেই। তাঁর ইচ্ছে ছিল সেনাবাহিনীতে যোগ দেবার। কিন্তু সে স্বপ্ন আর পূরণ হলো না। তবে তিনি দমবার পাত্র নন মোটেই। 

তিনি বললেন অন্যায়ের প্রতিবাদ করা আমাদের কর্তব্য,  আর সেটা করা থেকে কেউ আমাকে বিরত করতে পারবে না। 

বহুবার তাঁর নথিপত্র কেড়ে নেওয়ার চেষ্টা করে আমেরিকার এজেন্টেরা। 

পিটারসনের সূতি মজুরদের ধর্মঘটের মাঝে তাঁকে দেখা গেল। 

কলোরাডো রকফেলারের গোলামেরা বিবর ছেড়ে বেরিয়ে আসার পর যখন সশস্ত্র প্রহরীদের লাঠি গুলি সত্ত্বেও সেখানে ফিরতে রাজি হলো না,  তাদের মাঝে দেখা গেল জন রীডকে। 

মেক্সিকোয় বিদ্রোহী পিয়নদের মাঝে দেখা গেল পাঞ্চো ভিল্লার নেতৃত্বে অভিযানরত অবস্থায়। 

ধীরে ধীরে এগিয়ে আসছিল সাম্রাজ্যবাদী যুদ্ধ। তিনি একে একে ভ্রমণ করলেন ফ্রান্স, জার্মানি, ইতালি, তুরস্ক, বলানো, এমনকি রাশিয়াতেও। 

১৯১৭ সালে তিনি ও তাঁর বন্ধু বরিস রেইনস্তেইন রিগা ফ্রন্ট যাত্রাকালে একটি গ্রামের পাশ দিয়ে যাচ্ছিলেন। সেই সময় পাশের একটি গ্রামে গোলাগুলি চলছিল। তিনি বন্ধুকে বললেন গাড়ি ঘোরাতে। তিনি ঐ গ্রামেই যাবেন। একটা রাস্তা পার হওয়ার তৎক্ষণাৎ পর মূহুর্তে কামানের গোলা বর্ষণে পার করে আসা পেছনের সম্পূর্ণ রাস্তাটি নিশ্চিহ্ন হয়ে যায়। দুই বন্ধু প্রথমে পরস্পরকে জড়িয়ে ধরেন। আবার সেই পরক্ষণেই দেখা গেল জন রীড আহ্লাদে আটখানা, যেন দীর্ঘদিনের সুপ্ত কোনো মনোবাসনা পূর্ণ হয়েছে। 

মেক্সিকো থেকে ফিরে তিনি ঘোষণা করেন

"হ্যাঁ মেক্সিকোয় হাঙ্গামা, বিশৃঙ্খলা চলেছে,  কিন্তু তার দায়িত্ব ভূমিহীন পিয়নদের নয়,  তাদের - যারা সোনা ও হাতিয়ার পাঠিয়ে কলহ উসকাচ্ছে,  সেই দায়িত্ব প্রতিদ্বন্দ্বী মার্কিন ও ব্রিটিশ তেল- কোম্পানিগুলির।"

রাশিয়াতেও তিনি গ্রেফতার হন। লেনিন, ত্রৎস্কির সাক্ষাৎকার নেন। প্রতিটি বক্তৃতা শোনেন। ইস্তাহারগুলোর সন্ধান করতে করতে দেওয়াল থেকেই খুলে পকেটে পুরতেন। নভেম্বর বিপ্লবের সময়টা রাশিয়ায় ছিলেন। 

অক্টোবর বিপ্লব নিয়ে তাঁর লেখা বিখ্যাত বই "দুনিয়া কাঁপানো দশদিন" বা "Ten days that shook the world"(১৯১৯), যার ভূমিকা লিখেছিলেন লেলিন। বইটি প্রচুর পরিমাণে বিক্রি হয়েছিল। 

যে ছোট্ট খুপরির মতো ঘরে তিনি লিখতেন, তার ওপর ও নীচ দিয়ে ট্রেন যেত। দিনরাত ভয়ঙ্কর শব্দের মধ্যে তিনি বইটি লেখা শেষ করেন। পরে বলেছিলেন 

"আমার প্রকাশক হোরাশিও লিভারাইটরা, এই বইটি ছাপতে গিয়ে প্রায় ধ্বংস হতে বসেছিলেন।"

আমেরিকান ফ্যাসিস্টরা কখনোই চায়নি বইটি প্রকাশিত হোক। প্রকাশভবনে তারা ছ'বার হানা দেয়, এমনকি পান্ডুলিপি কেড়ে নেওয়ার চেষ্টাও করে। 

কতখানি শারীরিক প্রতিবন্ধকতা হেলায় উপেক্ষা করে তিনি স্বল্প জীবনের পরিসরে এতখানি যুদ্ধ করলেন, তা জানা যায় তখন, যখন জানতে পারা যায় তিনি জন্মান্ধ ছিলেন। 

তিনি অন্ধ হয়েও সব সত্য দেখলেন, উপলব্ধি করলেন। আর আমরা চোখ থাকতেও অন্ধ। 

সততার পক্ষে তাঁর যুদ্ধ বেশিদিন স্থায়ী হলো না, এ আমাদের দুর্ভাগ্য। ১৯২০ সালে টাইফাস রোগাক্রান্ত হয়ে রাশিয়ার মস্কো শহরে তিনি একজন যোদ্ধার মৃত্যুবরণ করেন। তাঁর জীবন আমাদের আপোসহীন যোদ্ধা হওয়ার আলোকবর্তিকার সন্ধান দেয়।

No comments