পিতল ও থিমের প্রতিমার কদর বেড়েছে দক্ষিণবঙ্গের নানা জেলায়
তিন শিল্পীর জাদু শিল্পকর্মে প্রতিমা তৈরিতে সারা রাজ্যের নজর কাড়ছে মহিষাদল। পিতলের প্রতিমা শিল্পী স্বপন পণ্ডা এবং মৃৎশিল্পী কালীপদ জানা ও সুভাষ জানার থিমের প্রতিমার কদর এখন …
পিতল ও থিমের প্রতিমার কদর বেড়েছে দক্ষিণবঙ্গের নানা জেলায়
তিন শিল্পীর জাদু শিল্পকর্মে প্রতিমা তৈরিতে সারা রাজ্যের নজর কাড়ছে মহিষাদল। পিতলের প্রতিমা শিল্পী স্বপন পণ্ডা এবং মৃৎশিল্পী কালীপদ জানা ও সুভাষ জানার থিমের প্রতিমার কদর এখন বাংলা ছাড়িয়ে ভিন রাজ্যেও। এবার কালীপুজোয় স্বপনের তৈরি পিতলের প্রতিমা পুজো হচ্ছে দক্ষিণবঙ্গের নানা জেলায়। শ্যামাকালী, দক্ষিণেশ্বরের মা ভবতারিণী, কালীঘাটের কালীমায়ের আদলে তৈরি করেছেন সেই পিতলের মূর্তি। শনিবার মহিষাদল থেকে খড়্গপুর, বারাসত, কাকদ্বীপ, রামনগরের উদ্দেশ্যে রওনা দিল স্বপনের তৈরি কালীপ্রতিমা। অন্যদিকে, মহিষাদলের ইছাপুরের পটুয়াপাড়ার কালীপদ ও সুভাষ জানার থিম এবং সাবেকি ধাঁচের কালীপ্রতিমা যাচ্ছে বনগাঁ, ক্যানিং, হুগলি সহ জেলা ও রাজ্যের বিভিন্ন জায়গায়। মহিষাদলের কাঁসারি পাড়া এবং পটুয়াপাড়ায় এখন ব্যস্ততা তুঙ্গে। তিন শিল্পীর নেতৃত্বে এখন প্রতিমায় শেষ মুহূর্তের তুলির টান দিতে ব্যস্ত তিরিশ জনের বেশি পুরুষ ও মহিলা কারিগর।
করোনার পর ফের পিতলের মূর্তি তৈরির হাত ধরে ঘুরে দাঁড়াতে শুরু করেছে মহিষাদলের গড়কমলপুর-ঘাঘরার পিতল কাঁসা শিল্প। এবার রথের সময় থেকে ফের আগের মতো অর্ডার আসতে শুরু করেছে বলছেন কারিগররা। মহিষাদলের পিতলের মূর্তির কদর সারা রাজ্যে। দিল্লি সহ দেশের বিভিন্ন শহরে গিয়েছে এখানকার তৈরি দুর্গা, কালী, জগন্নাথের মূর্তি। হিন্দু দেবদেবীর ছোট, মাঝারি ও বড়মাপের পিতলের মূর্তি তৈরিতে দক্ষ এখানকার শিল্পীরা। ছাঁচে ঢালাইয়ের পর পিতলের মূর্তিকে পালিশ করে সুন্দর রূপদানের কাজ করেন স্বপন পণ্ডা। বছর বত্রিশের এই শিল্পীর দক্ষতা ও হাতের যাদুতে প্রাণ পায় পিতলের মূর্তি। স্বপন বলেন, এবার কালীপুজোয় আমাদের তৈরি চারটি পিতলের প্রতিমা পুজো হচ্ছে। সবচেয়ে বড় সাড়ে ৬ ফুটের কালীপ্রতিমা যাচ্ছে মন্দারমণি কোস্টাল পুলিস থানায়। ১৬০ কিলো পিতল লেগেছে মূর্তিটি তৈরি করতে। মূর্তির দাম ৫০ হাজার থেকে তিন লক্ষ টাকা পর্যন্ত। পুজোয় এবার স্বপনের তৈরি দুর্গাপ্রতিমা গিয়েছে শোভাবাজারে।
ইছাপুর পটুয়াপাড়া গত তিন দশকে মহিষাদলের কুমোরটুলির চেহারা নিয়েছে। কলকাতার কুমোরটুলি, কালীঘাট, কৃষ্ণনগরে হাত পাকিয়ে এসে অনেকেই এখানে কাজ করেন। এখানকার কালীপদ জানা ও সুভাষ জানার থিমের প্রতিমা নজর কেড়েছে সারা রাজ্যে। সুভাষ বলেন, এখন পুজোতেও প্যাকেজ সিস্টেম এসেছে। কোথাও থিমের মণ্ডপ হলে তার সঙ্গে মানানসই প্রতিমা খোঁজেন উদ্যোক্তারা। সেজন্য মণ্ডপশিল্পীরা আমাদের সঙ্গে যোগাযোগ করেন। করোনার পর এবার দুর্গাপুজো থেকে অর্ডার দ্বিগুণ হয়েছে। কালীপুজোয় এবার ঝিনুক, ভুট্টা দানা, স্টোন, চায়ের ভাঁড়, বাঁশের কারুকাজ দিয়ে অনেকগুলি প্রতিমা তৈরি করেছি। ইতিমধ্যেই সেগুলি বিভিন্ন জেলায় পাঠানো হয়েছে। ইছাপুরে থিমের প্রতিমা শিল্পের হাত ধরে বছরভর কাজ পেয়েছেন গ্রামীণ এলাকার বহু মহিলা। তাঁরা হাতের কাজ শিখে পুজোর মরশুমে গড়ে তিন চার হাজার টাকা আয় করেন। প্রতিমা শিল্পের ফলে এলাকার অর্থনীতিও লাভবান হচ্ছে জানান স্থানীয়রা। কালীপুজো ও দীপাবলি উৎসবকে ঘিরে মহিষাদল, সুতাহাটা ও হলদিয়া শিল্পাঞ্চল আলোয় সেজে উঠতে শুরু করেছে। জেলার মধ্যে অন্যতম সেরা সুতাহাটার কালীপুজো। এখানে ১০-১২টি বিগ বাজেটের থিমের কালীপুজো ও আলোর উৎসবে মাতোয়ারা হন মানুষ। ২৫তম বর্ষে এবার সবচেয়ে বড় বাজেটের পুজো করছে সুতাহাটা প্রয়াস ওয়েলফেয়ার সোসাইটি। সংস্থার সম্পাদক সুবিমল দাস বলেন, মণ্ডপের থিমের নাম মাটির কাছাকাছি। মণ্ডপসজ্জা করছেন মহিষাদলের শিল্পী রঘুনাথ জানা। কাচের প্রতিমা এবার নজর কাড়বে সবার।
মহিষাদলে শিল্পী স্বপন পণ্ডার তৈরি পিতলের কালীপ্রতিমা যাচ্ছে রাজ্যের বিভিন্ন জেলায়।
No comments