মে দিবস নয়, বিশ্বকর্মা পুজোই ভারতের শ্রমিক দিবস
শ্রমিক দিবস হিসাবে পালিত না হলেও হাজার হাজার বছর ধরে বিশ্বকর্মা পুজোর দিনটিই ভারতের শ্রমিকদের রক্তে মিশে আছে শ্রমিক দিবস হিসাবে। সুদীর্ঘকাল ধরে বিশ্বকর্মা পুজোর দিনটিতেই ভারতীয় রীত…
মে দিবস নয়, বিশ্বকর্মা পুজোই ভারতের শ্রমিক দিবস
শ্রমিক দিবস হিসাবে পালিত না হলেও হাজার হাজার বছর ধরে বিশ্বকর্মা পুজোর দিনটিই ভারতের শ্রমিকদের রক্তে মিশে আছে শ্রমিক দিবস হিসাবে। সুদীর্ঘকাল ধরে বিশ্বকর্মা পুজোর দিনটিতেই ভারতীয় রীতি মেনে শ্রমের পুজো তথা শ্রমিকের পুজো হয়ে আসছে।
সুপ্রাচীন কাল থেকে পূর্ণ উৎসব হল বিশ্বকর্মা পুজো। প্রায় সারাদেশে মহাধুমধামের সঙ্গে পালিত হয় এই দিনটি। নিয়মানুসারে, ভার মাসের সংক্রান্তির দিন র আরাধনা করা হয় শিল্পের দা
দেবকূলের এই গুরুত্বপূর্ণ তোর চারটি হাত, যার মধ্যে এক হাতে রয়েছে দাঁড়িপাল্লা। এর একটি পান্না জ্ঞান এবং আরেকটি করে প্রতীক। দেবশিল্পীর অন্য হাতে থাকা নির্মাণশিল্পের সঙ্গে যু
বিশ্বকর্মা হলেন বৈদিক তো। এখেনের নন্দন মণ্ডলে ৮১ এবং ৮২ সুজ দুটিতে বিশ্বকর্মার উল্লেখ পাওয়া যায়। অনে অনুসারে, তিনি সর্বদর্শী এবং সর্বাঙ্গ আবার উৎপত্তিগত দিক থেকে দেখলে বিশ্বকর্মা সংস্কৃত "বিশ্বকর্মন' শব্দটি থেকে এসেছে যার আক্ষরিক বাংলা অর্থ হ অর্থাৎ তিনি এমন এক দেবতা, যাকে শিল্পশাস্ত্রের প্রথম আচার্য বলে মনে করা হয়। হিন্দুশাস্ত্র অনুযায়ী, বিশ্বকর্মা দেবতাদের ি দেবশিল্পী নামে পরিচিত। বৃহস্পতির ভগিনী যোগসিদ্ধা তাঁর মাতা এবং সু পিতা। বিশ্বকর্মার বাহন ঘতি। বিশ্বকর্মার প্রদানমন্ত্রে বলা হয়, 6 দংশপানা মহাবীরঃ সূচি কর্মকারক। বিশ্ব বিশ্ব
ধ্যান ও প্রণামমন্ত্র অনুসারে দেবশিল্পী বিশ্বকর্মার যে চিত্র পাওয়া যায়, তাতে তিনি একদিকে যেমন মহাবীর অষ্টগুণযুক্ত, অপরদিকে তিনিই সৃষ্টির
নির্মাতা ও ধাতা। তিনিই আবার মানদধারী মহাশিল্পী, পাশাপাশি মহাযোদ্ধাও বটে।
হিন্দু ধর্মগ্রন্থ পুরাণগুলিতে বিশ্বকর্মার অনন্য সৃষ্টির বলে উদ্ভোধ পাওয়া যায়। তার মধ্যে বিশেষ কয়েকটি এখানে উল্লেখ করা যেতে পারে।
রামায়ণ অধ্যয়ন করলে আমরা করে থাকেন। দেখন, একদিকে বিশ্বকর্মা যেমন রাবণের সোনার লঙ্কা নির্মাণ করেছেন, তেমনই আবার বিশ্বকর্মাপুত্র নল নামক বানর পিতার শক্তিতে শক্তিমান হনো। সমুদ্রের উপর সেতু ি অনুযায়ী আবার তিনি দেবতাদের বিমান ভূষণ নির্মাতা। মহাভারত অনুসারে, বিশ্বকর্মা বিশ্ব তিনি স্বর্গেরও কাটা। আর সহস্র শিল্পেরও এটা তিনিই। কলিযুগে কৌরবদের রাজধানী হস্তিনাপুরও নির্মাণ করেন বিশ্বকর্মা। কুরুক্ষেত্র যুদ্ধের পর ধর্মরাজ যুধিষ্ঠিরকে হস্তিনাপুরে অভিষিক্ত করেন কৃষ্ণ। হিন্দুশাস্ত্র অনুযায়ী, মহাভারতে উল্লিখিত পাণ্ডবদের রাজধানী ইন্দ্রপ্রস্থ বিশ্বকর্মারই সৃষ্টি। আবার হরিবংশে উল্লে যে, মহাভারতে কৃষ্ণের কর্মভূমি হিসাবে উল্লিখিত দ্বারকা শ্রীকৃষ্ণের আদেশে বিশ্বকর্মা নির্মাণ করেছিলেন। যেহেতু হিন্দুধর্মের বিভিন্ন ও পুরাণে দেবশিল্পী হিসাবে বিশ্বকর্মার নাম উচ্চারিত হয়, তাই হিন্দু ধর্মাবলস্বাদের মনে বিশ্বকর্মার এক বিশেষ স্থান রয়েছে। তাই আজ একবিংশ শতাব্দীতেও মানুষ অত্যন্ত শ্রদ্ধার সঙ্গে এই দিনটি পালন করে। অন্যান্য দেবদেবীর মতোই কোথাও মুর্তি গড়ে অথবা ঘটে কিংবা পটে
হয়। এইদিন শ্রমিক তথা কারিগররা সমস্ত যন্ত্রপাতি বিশ্বকর্মার নামে সমর্পণ করে এগুলি ব্যবহারে বিরত থাকেন। স্বর্ণকার, কর্মকার এবং দারুশিল্প, স্থাপত্যশিয়, শিল্প প্রভৃতি শিল্পকর্মে নিযুক্ত ব্যক্তিগণও নিজ নিজ দক্ষতা অর্জনের জন্য বিশ্বকর্মার
বিশ্বকর্মা যে শুধু দক্ষ শিল্পী, তাই নয়, তিনি বিদ্যা করেছিলেন বলেও জানা। বিশ্বকর্ম রচিত স্থাপতাশিয়া বিষয়ক গ্রন্থটির নাম 'বারশাস্ত্রম"। এই শাস্ত্রের প্রথম করাই করেছিলেন। বিষ্ণুপুরাণে বিশ্বকর্মাকে হল, 'পূর্ব ভূমির শরীক্ষোত পশ্চাৎ বাজ আধুনিক যুগেও বিশ্বকর্মা পুজো সেখানে ১৮৯০ সাল থেকে শিকাগো প্রানে প্রথমে ভূমি পরীক্ষা করো, তারপর বাজ (গৃহাদি) নির্মাণ করবে। ভূমি নির্বাচনের ক্ষেত্রে বিশ্বকর্মা প্রথমেই বলেছেন যে, পাহাড়ি জমি কিংবা বড় বড় প্রস্তরাকীর্ণ জমিতে কাজ করবে না। বর্তমানে ভারতের স্থাপত্য শিল্প যথেষ্ট উন্নত। ভারতের বিভিন্ন স্থানে এমন অসামান্য স্থাপত্যের নিদর্শন পাওয়া যায়, যা বিশ্বজুড়ে দুর্লভ। হাজার হাজার বছর পূর্বে রচিত বিশ্বকর্মার এই গ্রন্থের কথাগুলো যে কতটা সত্য ও বাস্তবিক, তা আমরা আজও অনুধাবন করতে পারি।
যেভাবে উল্লেখ করা হয়েছে, সেই
পুজো করা হয় বিশ্বকর্মার দেশজুড়ে কলকারখানাগুলিতে এই দিনটি বিশেষ আড়ম্বরের সঙ্গে পালিত
পুরাণে উল্লেখ আছে, চারটি বেদের মতো চারটি উপবেদ আছে। উপবোগুলি হল, আয়ুর্বেদ, ধনুর্বেদ, গান্ধর্ববেন এবং স্থাপত্যবেদ। এই উপবেদে স্থাপত্যবিদ্যা বা বাজবিদ্যার রচয়িতা হলেন বিশ্বকর্মা। বলা হয়, তিনি বিশ্বব্রহ্মাণ্ডের প্রধান কার তাঁর রচিত অন্তত দশটি পুঁথির সন্ধান আজ অবধি পাওয়া গিয়েছে। মৎস্যপুরাণের ২৪২ থেকে 281 অধ্যায়, অগ্নিপুরাণের ১০৪ থেকে ১০৬ অধ্যায়, গরুড় পুরাণের ৪৬ থেকে ৪৭ অধ্যায়, বিষ্ণুধর্মোত পুরাণের তৃতীয় খণ্ড, বিভিন্ন আগম, ভবিষ্যপুরাণ, তরুনীতিসারের চতুর্থ উদিত হচ্ছে এবং সঙ্গে সঙ্গে বিস্মিত শ্রমিক দিবস।
অধ্যায়, বৃহৎসংহিতা, গৃহ্যসূত্র, অর্থশাস্ত্র প্রভৃতিতে রাজশাস্ত্রের আলোচনা পরিলক্ষিত হয়। ১৯১৩ খ্রিস্টাব্দে মহামহোপাধ্যায় পণ্ডিত টি গণপতি শাস্ত্রী বাস্তবিদ্যা বা বায়শাস্ত্র গ্রন্থটি আবিষ্কার করে মুদ্রণ করেন। বিশ্বনাে প্রচলিত রাজশাস্ত্রটির নাম বিশ্বকর্মাবার শাসন। অর্থাৎ একাধারে দক্ষ শিল্পী এবং সঙ্গে সঙ্গে তাঁর রচিত অমূল্য মাছগুলি স্থাপত্যশিল্পের ইতিহাসে হাজার হাজার বছর ধরে এক গুরুত্বপূর্ণ সম্পদ। তাই তো তিনি আজও সারাদেশের মানুষের কাছে পূজিত।
কতটা প্রাসঙ্গিক ও মহত্বপূর্ণ, তা প্রতিবাদের বার্ষিকী আন্তর্জাতিক ভাবে কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের লেখা পড়লে বোঝা যায়। 'শুভদৃষ্টি' গল্পের মুক ও বধির মেয়েটির সৌন্দর্য প্রসঙ্গে রবীন্দ্রনাথ লিখেছিলেন, 'মেয়েটির সৌন্দর্য নিরতিশয় নবীন, যেন বিশ্বকর্মা তাহাকে সদ্য নির্মাণ করিয়া ঘড়িয়া দিয়াছেন। আবার 'শেষের কবিতা'য় কবিগুরু লিখেছেন, 'আমার মনে হয়, যেন বিশ্বকর্মার কারখানায় একটা পাগলা স্বর্গীয় স্যাকরা আছে, সে যেমনি একটি নিখুঁত সুগোল সোনার ডকে নীলার সঙ্গে হীরে এবং হীরের সঙ্গে পান্না লাগিয়ে এক প্রহরের আকটি সম্পূর্ণ করলে, অমনি দিলে সেটা সমুদ্রের জলে ফেলে। আর তাকে খুঁজে পাবে না কেউ।' আবার চ তত্ত্বের লেখনীতেও উঠে আসে দেবশিল্পী বিশ্বকর্মার প্রথম। তিনি লিখেছেন, "বিশ্বকর্মা, বিশ্বকর্মা কীর্তিকর কারু যে চতুর চেতনের চতুরাণী চারু।। অর্থাৎ খুব স্পষ্টতই দেখতে পাচ্ছি, আজও দেশজুড়ে মানুষ দেবশিল্পী বিশ্বকর্মার প্রতি কতটা শ্রদ্ধাশীল। তাঁকেই শ্রমিকরা দেবশিল্পী হিসাবে মানেন এবং পুজো করেন। তাই স্বাভাবিক ভাবেই একটি প্রশ্ন মনে
হচ্ছি এই ভেবে যে, কেন এই বিশেষ দিনটি, যা দেশজুড়ে স্বীকৃত, তা শ্রমিক দিবস না হয়ে মে দিনটিকে অনিক দিবস হিসাবে পালন করা হয়।
আমেরিকায় আন্তর্জাতিক শ্রম পালন করা হয়। ১৮৮৬ সালে আমেরিকার শিকাগো শহরের হে মার্কেটে নিহত শহিদদের আত্মত্যাগকে মনে রেখে এই দিনটি পালিত হয়। ১৮৮৯ সালে ফরাসি বিপ্লবের শতবার্ষিকীতে প্যারিসে দ্বিতীয় আন্তর্জাতিক কংগ্রেস অনুষ্ঠি বিভিন্ন দেশে পালনের প্রস্তাব করেন রেমন্ড লাভিনে। এভাবেই সূচনা ঘটে আন্তর্জাতিক শ্রমিক দিবসের। যদিও ভারতে এই দিনটি পালন করা হয়েছে ১৯২৩ সাল থেকে। উক্ত বছর বের পার্টি অব হিন্দুস্তান ভারতের মাটিতে এই দিনটি পালন করার সিদ্ধান্ত নেয়। তাই চেয়াইয়ে আন্তর্জাতিক ি দিবস পালনের উদ্দেশ্যে লাল পতাকা
তোলা হয়। কিন্তু শ্রমিক দিবস হিসাবে পালিত না হলেও হাজার হাজার বছর ধরে বিশ্বকর্মা পুজোর দিনটিই ভারতের শ্রমিকদের রক্তে মিশে আছে শ্রমিক দিবস হিসাবে। সুদীর্ঘকাল ধরে বি পুজোর দিনটিতেই ভারতীয় ি মেনে শ্রমের পুজো তা শ্রমিকের পুজো হয়ে আসছে। মাত্র কয়েক বছর প্রবর্তিত মে দিবসের ফলে কি আমরা আমাদের সংস্কৃতিকে ভুলে যেতে পারি। সংস্কৃতিকে ভুলিয়ে দেওয়ার চক্রান্ত আজকের নয়, সনাতন ধর্ম তথা ভারতকে বাসে করার জন্য তা দীর্ঘদিন ধরে চলে আসছে। ভাই মে দিবস আমাদের কাছে শ্রমিক দিবস নয়, বিশ্বকর্মা পুজোই ভারতীয়দের প্রকৃত
No comments