হলদিয়ার মৃৎশিল্পীদের ভরসা পুকুরের মাটিই
সামনে শারদীয়া মা দুর্গার আগমনীর আগমনে অন্যতম শর্ত মৃন্ময়ী প্রতিমা।স্বামী ও সন্তানদের সঙ্গে মা দূর্গা, মহিষাসুর-সহ সবার বাহন তৈরিতে অন্যতম আবশ্যিক বস্তু হল মাটি। যা তৈরির পর্বটি বেশ লম্বা …
হলদিয়ার মৃৎশিল্পীদের ভরসা পুকুরের মাটিই
সামনে শারদীয়া মা দুর্গার আগমনীর আগমনে অন্যতম শর্ত মৃন্ময়ী প্রতিমা।স্বামী ও সন্তানদের সঙ্গে মা দূর্গা, মহিষাসুর-সহ সবার বাহন তৈরিতে অন্যতম আবশ্যিক বস্তু হল মাটি। যা তৈরির পর্বটি বেশ লম্বা এবং কষ্টসাধ্য। একটা সময় ছিল যখন শুধু নদীর মাটিই ব্যবহৃত হত। বয়ে আনার খরচ বাড়ায় এবার নদীর পরিবর্তে কিছু পুজোয় ব্যবহৃত হচ্ছে পুকুরের মাটি। হলদিয়ার দুর্গাচক, সুতাহাটার ইচ্ছাপুর এবং হরিবল্লভপুরে প্রতিমা গড়ার পিছনে মাটি সংগ্রহের কঠিন লড়াই দেখা যায়। দুর্গাচক সুপার মার্কেট লাগোয়া শিশু উদ্যানের পিছনে রামকিঙ্কর বেজ মৃৎ- শিল্পালয়। ১৪ জন মৃৎশিল্পী বছরের পর বছর এখানে প্রতিমা গড়ার কাজ করেন। শিল্পীদের মাটি সংগ্রহ করতে হয় ২ কিলোমিটার দূরে হুগলি নদীর চর থেকে। কাঠের প্যাডেল ভ্যান কিংবা ইঞ্জিনভ্যানে আনতে হয় সেই মাটি। ভ্যান চালকরা
কর্মশালায়। নদীর চরের উপরিভাগে বেলে মাটি এবং তার নীচে থাকা এঁটেল মাটি কাজে লাগে। ইচ্ছাপুর এবং হরিবল্লভপুরে প্রতিমার মাটি আসে রূপনারায়ণ নদের থেকে। চর রূপনারায়ণের বেলেমাটি মিহি বলে কাজের জন্য বেশ ভাল। কুড়ি কিলোমিটার পথ পেরিয়ে সেই মাটি দুর্গাচকেও যায় প্রতিমার জৌলুস মাটি কেটে পৌঁছে দেন মৃৎশিল্প
ফোটাতে। দুর্গাচকের রামকিঙ্কর বেজ মৃৎ-শিল্পালয়ের শিল্পী কৃষ্ণপ্রসাদ পাল বলেন, “এবার ১০ টি দুর্গা প্রতিমা গড়ার বরাত রয়েছে। ১২০ বস্তা মাটি লেগেছে। হুগলি নদী এবং রূপনারায়ণ নদ থেকে সংগ্রহ করতে হয় মাটি।” একই কথা জানান এই শিল্পালয়ের শিল্পী নন্দলাল জানা। মৃৎশিল্পী হিসেবে সুনাম রয়েছে ইচ্ছাপুরের কালীপদ জানা এবং সুভাষ জানার। কাকা-ভাইপোর এই জুটি কলকাতার কুমোরটুলি ছেড়ে দীর্ঘ ২৫ বছর ইচ্ছাপুরের বাড়িতে প্রতিমা তৈরি করছেন। এবার তাঁদের ২৬ টি দুর্গা গড়ার বরাত রয়েছে। দক্ষিণ কলকাতা গড়িয়া, বর্ধমানের তেলিপুকুর, নদীয়ার তাহেরপুর, দক্ষিণ ২৪ পরগনার ক্যানিং, বারুইপুরের পাশাপাশি বিহারের রাতুরোডে যাচ্ছে তাঁদের তৈরি দুর্গা। ১৫ জন সহশিল্পীকে সঙ্গে নিয়ে রাত-দিন চলছে প্রতিমা তৈরীর কর্মযজ্ঞ। সুভাষ জানা বলেন, “চারটি পর্বে আমরা মাটি ব্যবহার করি। বাড়ির পাশে ধানের মাঠ থেকে নরম এঁটেল মাটি সংগ্রহ করি। তা দিয়ে প্রতিমার খড়ের কাঠামোতে প্রথম প্রলেপ দেওয়া হয়।
দ্বিতীয় পর্বে ওই মাটির সঙ্গে ধানের তুষ, কুচো খড়, কুচো পাট মিশিয়ে প্রলেপ দেওয়া হয়। তৃতীয় পর্বে রূপনারায়ণের বেলে মাটি এবং শেষ বা চূড়ান্ত পর্বে ওই নদীর এঁটেল মাটি ব্যবহার করা হয়।” হরিবল্লভপুরের মৃৎশিল্পী যতীন্দ্র খাঁড়াদের মাটি সংগ্রহের কাজ আরও কঠিন। হুগলি নদীর চরের বেলেমাটি, এঁটেলমাটি তো লাগেই, সঙ্গে পুকুরের পাঁক মাটি শিল্প ফোটাতে খুব দরকার। নদী থেকে মাটি সংগ্রহের খরচ বাঁচাতেই পুকুরের মাটি ব্যবহারে জোর। তবে এই মাটি সংগ্রহের কাজটি রীতিমতো কঠিন। ১১৫-১২০ বালতি পাঁক তুলতে বালতি নিয়ে পুকুরের জলে ডুব দিয়ে তলা পর্যন্ত যেতে হয়। এই কাজে নাক-মুখ দিয়ে পেটে চলে যায় কাদাজল। শরীর খারাপও হয়। কিন্তু শরীরের আগে শিল্প। নির্দিষ্ট ডেটলাইনে শেষ করতে হবে কাজ। আর তাই পুকুরে ডুব দিয়ে চলে মাটি সংগ্রহ। শিল্পী যতীন্দ্রনাথ খাঁড়া জানালেন, “প্রতিমা গড়ার তাগিদে আমরা পুকুরে ডুব দেই। এই মাটি-কাহিনীর সঙ্গে রয়েছে সংগ্রামী চ্যালেঞ্জ।”
No comments