ভোটাধিকার নেই অথচ ১৬ বছরেই প্রাথমিক শিক্ষক
তখনও ভোটাধিকার হয়নি, কিন্তু টেট পরীক্ষায় পাশ করে তারা সরকারি স্কুলের প্রাথমিক শিক্ষক । এ রাজ্যের প্রাথমিক শিক্ষক নিয়োগে ক্রমাগত যেভাবে শিরা উপশিরায় দুর্নীতির হদিশ মিলছে তাতে সার্বিক …
ভোটাধিকার নেই অথচ ১৬ বছরেই প্রাথমিক শিক্ষক
তখনও ভোটাধিকার হয়নি, কিন্তু টেট পরীক্ষায় পাশ করে তারা সরকারি স্কুলের প্রাথমিক শিক্ষক । এ রাজ্যের প্রাথমিক শিক্ষক নিয়োগে ক্রমাগত যেভাবে শিরা উপশিরায় দুর্নীতির হদিশ মিলছে তাতে সার্বিক ভাবে শিহরিত গোটা শিক্ষা সমাজ। কার্যত এ রাজ্যের প্রাথমিক শিক্ষা ব্যবস্থাও প্রশ্নের মুখে। পূর্ব বর্ধমান জেলায় এমনই কিছু সন্দেহভাজনদের তালিকা দেখে চোখ কপালে উঠতে বাধ্য, যাদের ২০১৪ সালে টেট পরীক্ষার পর চাকরির অনুমোদন দিয়েছিল প্রাথমিক শিক্ষা পর্ষদ। সজল হালদার ২০১৪ সালের টেট পরীক্ষার্থী, রেকর্ড অনুযায়ী ১লা জানুয়ারি ২০১৪ তার বয়স ছিল ১৬ বছর ৯মাস। কিন্তু তিনি পরীক্ষা দিয়েছিলেন এবং ফেল করলেও তার চাকরি হয়েছিল( মেমো নম্বর২১৮১/এপিপিটিটি)। ২০১৭ ১১ই ফেব্রুয়ারি তাকে চাকরির নিয়োগপত্র দেয় পর্ষদ। শেখ ফারুক আহমেদ ২০১৪ সালের টেট পরীক্ষার্থী, ১লা জানুয়ারি ২০১৪ সালে তার বয়স ১৬ বছর ৭ মাস। টেট পরীক্ষায় পাস না করতে পারলেও তাকে ২০১৭ সালের ১১ই ফেব্রুয়ারি নিয়োগ পত্র(মেমো নম্বর ২৩৩৫/এপিপিটিটি) দেয় পর্ষদ। সুস্মিতা সাহা (মেমো নম্বর২০৩৩/এপিপিটিটি) পর্ষদের পক্ষ থেকে ২০১৭ র ১০ই ফেব্রুয়ারি নিয়োগপত্র পান। তিনিও ২০১৪ সালের টেট পরীক্ষার্থী,১লা জানুয়ারি ২০১৪ য় তাঁর বয়স ছিল ১৬ বছর ১১ মাস এবং তিনিও যথারীতি পাস করতে পারেন নি। অর্থাৎ ভারতের সংবিধান অনুযায়ী তাঁদের ভোটাধিকার না থাকলেও তাঁরা সরকারি চাকুরী প্রাপ্ত এবং সমাজ গড়ার কারিগর হিসেবে নিযুক্ত। ২০১২ থেকে ২০১৪, এইরকম ৩৮জন ‘ভুয়ো শিক্ষক' এর তালিকা জেলা প্রাথমিক শিক্ষা পর্ষদকে পাঠিয়ে দিয়েছে প্রাথমিক শিক্ষা পর্ষদ। এটি হচ্ছে ২য় তালিকা, আর সেই তালিকা প্রকাশিত লক্ষ লক্ষ চাকরি প্রত্যাশী হাপিত্যেশ করে দিন হতেই সাড়া পড়েছে। তবে এখানেও শেষ নেই। গুজরান করে চলেছে!
প্রাথমিক শিক্ষা পর্ষদ আশ্চর্য্যজনক ভাবে জনৈক সুকুমার সরকার (মেমো নম্বর ২১৯৭/এপিপিটিটি) কে চাকরি দিয়েছে যার প্রাথমিক শিক্ষক নিয়োগ পরীক্ষার সময় বয়স ছিল ৪৭ বছর ৬ মাস এবং তিনিও যথারীতি পাস করতে পারেন নি। পূর্ব বর্ধমান জেলার এই ৩৮ জন ভুয়ো শিক্ষকের বেশিরভাগই পূর্ব মেদিনীপুর জেলার বলে জানা গেছে। কালনার দুই বোন যথাক্রমে মিঠু রায়, পাপিয়া রায় এবং পাপিয়ার স্বামী সুদীপ পালিত ও চাকরির নিয়োগপত্র পায়।তাদের প্রাপ্ত নম্বর যথাক্রমে ২৯.৫৬, ৩১.৬১ এবং ২৯.৮৩। তারাও যথারীতি পরীক্ষায় পাশ না করেই চাকরি পেয়ে বহাল তবিয়তেই ছিলেন। কিন্তু মহামান্য বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়ের নির্দেশের পর যে নির্লজ্জতার ছবি সামনে আসছে তাতে নিয়োগ দুর্নীতির হাড় কঙ্কাল বেরিয়ে পড়েছে। প্রথম দফায় ২৭২ জন প্রাথমিক ভুয়ো শিক্ষকের তালিকা প্রকাশিত হওয়ার পর ইতিমধ্যেই তাদেরকে বরখাস্ত করেছে পর্যদ তার মধ্যে বর্ধমান জেলার মোট ১৭ জনের নাম ছিল। ২য় দফার তালিকা প্রকাশের পরে দেখা যাচ্ছে কেউই পরীক্ষার পাস মার্ক পেরোতে পারেনি। প্রাথমিক শিক্ষক নিয়োগের নিয়মানুযায়ী ১৫০ নম্বরের মধ্যে অন্তত ৬০ পেতে হবে পাস করার জন্য। অথচ কেউই ৩০-৩৫ এর গন্ডি পেরোতে পারেনি ।প্রাথমিক শিক্ষা পর্ষদ কর্তৃক গত ১৩/০৬/২০২২ এ জেলা শিক্ষা পর্ষদ কে জারি করা এক নোটিশে এই তালিকার প্রত্যেককে অবিলম্বে চাকরি থেকে বরখাস্তের নির্দেশ দিয়েছে। কিন্তু প্রশ্ন হল, গত ৫ বছর ধরে চাকরি করে আসা এইসব শিক্ষকরা চাকরি পেল কি ভাবে ? কিভাবে একজন নাবালক টেটের মতন পরীক্ষায় বসার সুযোগ পেল ? প্রাথমিক শিক্ষা পর্যদের কর্তারা এর দায় এড়াতে পারবেন। বিশেষ করে যখন এ রাজ্যের শিক্ষিত বেকার যুবকরা হা উতাস করছে।
No comments