হলদিয়া বন্দরের নাম সতীশ সামন্তের নামে করার দাবিতে মিছিলপূর্ব মেদিনীপুর জেলা বাংলা পক্ষের উদ্যোগে বাংলা ভাগের প্রচেষ্টার বিরুদ্ধে এবং চাকরিতে ভূমিপুত্র সংরক্ষণের দাবিতে বৃহস্পতিবার হলদিয়ার সিটি সেন্টার থেকে অম্বুজা মল পর্যন্ত মি…
হলদিয়া বন্দরের নাম সতীশ সামন্তের নামে করার দাবিতে মিছিল
পূর্ব মেদিনীপুর জেলা বাংলা পক্ষের উদ্যোগে বাংলা ভাগের প্রচেষ্টার বিরুদ্ধে এবং চাকরিতে ভূমিপুত্র সংরক্ষণের দাবিতে বৃহস্পতিবার হলদিয়ার সিটি সেন্টার থেকে অম্বুজা মল পর্যন্ত মিছিল ও পথসভা হয়।
এদিন হলদিয়া বন্দরের নাম সতীশ সামন্তের নামে করার দাবিতে এবং হলদিয়া শিল্পাঞ্চলে স্থানীয়দের কাজের দাবিতে সরব হয় বাংলা পক্ষের সদস্যরা।
'অরাজনৈতিক' বাংলাপক্ষের মিছিল আর সভাকে ঘিরে চাঞ্চল্য ছড়ালো হলদিয়া পুর এলাকায়। বৃহস্পতিবার রীতিমত পুলিশি পাহারায় বাংলাপক্ষের বাঘমার্কা পতাকা নিয়ে সিটিসেন্টার থেকে অম্বুজা মল অবধি বাংলাপক্ষের মিছিল ও মিছিলের শেষে সভা থেকে যেভাবে 'অবাঙালি দাদাগিরি'র বিরুদ্ধে জিগির তোলার চেষ্টা করা হয়েছে তাতেই চাঞ্চল্য ছড়িয়েছে এলাকায়। এদিনের সভা থেকে হলদিয়ার কারখানা থেকে সমস্ত প্রতিষ্ঠানে 'ভূমিপুত্র'দের অগ্রাধিকারের পাশাপাশি অ-বাঙালিদের দাপাদাপির বিরুদ্ধে হুঁশিয়ারিও দেওয়া হয়েছে, যাকে হলদিয়া পুর নির্বাচনের মুখে তৃনমূলেরই খেলা বলে মনে করছেন বিরোধীরা।
উল্লেখ্য ২০১৬ সালের পর ২০২১ বিধানসভায় বাংলা জুড়ে বিরোধী শিবিরে ধস নামিয়ে জয় হয়েছে তৃনমূল কংগ্রেসের। কিন্তু জয়ের সেই ভরা বাজারেও পর পর দুবারই হলদিয়ায় ভরাডুবি হয়েছে শাসকদলের। শুধু বিধানসভাই নয়, তৃনমূল ক্ষমতায় আসার পর থেকে হলদিয়ায় কোনও 'জয়' আসেনি শাসকদলের। বরং যা এসেছে তার নাম বিপর্যয়। প্রশাসন থেকে শিল্পাঞ্চল, দলের ব্যর্থতাই প্রবল। প্রবল গোষ্ঠীদ্বন্দ্বে বারংবার পুরসভার চেয়ারম্যান বদল হয়েছে। কারখানার ইউনিয়ন গুলির ওপর 'ঠিকাদার' নেতার প্রভাব কাটাতে সম্প্রতি হলদিয়ায় এসে "ঠিকাদার'কে তৃনমূল করা কিংবা তৃণমূলীদের ঠিকাদারী করা 'বারণ' করে গেছেন দলের সর্বভারতীয় সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় স্বয়ং। কিন্তু তাতেও ভবি ভোলার নয়। তীব্র গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব দলের অভ্যন্তরে বারে বারে মাথা চাড়া দিয়েছে। সঙ্গে যুক্ত হয়েছে পুরসভার বিভিন্ন ওয়ার্ডগুলিতে অনুন্নয়ন ও দুর্নীতি নিয়ে মানুষের মধ্যে ক্ষোভ।
বিরোধী দলগুলির বক্তব্য জনগনের সেই ক্ষোভ ও গোষ্ঠীদ্বন্দ্বের ডামাডোলের মধ্যেই হতে চলেছে হলদিয়া পুরসভার নির্বাচন। দলের অভ্যন্তরীণ হিসাবে এই নির্বাচনেও বিশেষ সুবিধা করতে পারছেনা দল। তৃনমূলের নিজস্ব হিসাবও বলছে রাজনৈতিক শক্তির নিরীখে বিজেপিতো বটেই, বিধানসভায় শূন্য সিপিএমও হলদিয়ায় তৃনমূলের চাইতে এগিয়ে। এমনই পরিসরে হলদিয়ায় বাঙালি জিগির তুলে বাংলাপক্ষের মিছিলকে বিরোধী ভোট ভাঙার জন্য তৃনমূলেরই একটি কৌশল হিসাবে কটাক্ষ করল বিরোধী দল বিজেপি এবং সিপিএম।
হলদিয়ার এক সিপিএম নেতা বলেন, "মিছিল থেকে আওয়াজ তোলা হয়েছে হলদিয়ার ফুটপাত থেকে শপিংমল কিংবা কারখানা সবই নাকি বাঙালির! আদতে যা বলতে চাওয়া হয়েছে সবই বাঙালির হওয়া উচিৎ ছিল, যা কিনা হয়ত অবাঙালি দখল নিয়েছে। দাবি করা হয়েছে, প্রয়োজনে বাংলাপক্ষ গামলা গামলা রক্ত দিতে পারে যে রক্তের বন্যায় নাকি সমস্ত অন্যায় ভেসে যাবে। শ্লোগানের এই ভাষার মধ্যে আসলে বোঝাতে চাওয়া হচ্ছে যে বাংলার তাবৎ অন্যায় যেন অবাঙালিরাই করে চলেছে আর বাঙালিকে সেই অন্যায়ের মাশুল দিতে হচ্ছে।"
ওই সিপিএম নেতা আরও বলেন, " রাজ্য সরকারের সামগ্রিক ব্যর্থতা ও অপদার্থতাই তো বাঙালিকে সবচেয়ে বেশি বঞ্চিত করছে। একটা এসএসসি করতে পারেনি এই সরকার। রাজ্যে সাড়ে ৩ লক্ষ শিক্ষক পদ ও সাড়ে ৫লক্ষ সরকারি পদ শূন্য পড়ে আছে। তাহলে শিক্ষিত বাঙালি যুবককে বঞ্চনা করছে কে? রাজ্য সরকার না অবাঙালিরা? কই বাংলাপক্ষকে দেখেছেন, এর বিরুদ্ধে সরব হতে? প্যানেলে থাকা স্বত্বেও নিয়োগ হয়নি এমন বাঙালি যুবক যুবতীরা যে মাসের পর মাস কলকাতায় ধর্ণা দিচ্ছেন, কখনও বাংলাপক্ষের নেতাদের দেখেছেন ওই মঞ্চে গিয়ে বাঙালির পক্ষে দাঁড়াতে? হঠাৎ করে তাঁরা হলদিয়ায় কেন? কারন একটাই ভোটের মুখে বাঙালি জিগির তুলে কল্পিত অবাঙালি শত্রু তৈরি করে রাজ্য সরকার আর শাসকদলকে অক্সিজেন দেওয়া। যদিও হলদিয়ার মানুষ এতে ভুলবেননা।"
এদিন বাংলাপক্ষ থেকে হলদিয়ার শিল্প কারখানার কাজে 'ভূমিপুত্র'দের অগ্রাধিকারকে কটাক্ষ করে বিজেপির পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, কিছুদিন আগেই আইওসি কারখানায় 'সাটডাউন' করিয়ে কারখানার পূর্ন মেরামতির কাজে সাড়ে তিন হাজার অস্থায়ী শ্রমিক নিয়োগ করা হয়েছিল। আইওসি কর্তৃপক্ষ এরজন্য স্থানীয় তৃনমূল নেতাদের কাছে তালিকা চেয়ে পাঠিয়েছিল। কিন্তু গোষ্ঠীদ্বন্দ্বে জীর্ণ হলদিয়ার তৃনমূল নেতৃত্ব একজনও লোক দিতে পারেনি। কোম্পানিকে বিহার উত্তরপ্রদেশ থেকে লোক আনতে হয়েছিল। বাংলাপক্ষ যদি সত্যিকারের বাঙালির উপকার চান তবে তাঁরা মিছিল মিটিংয়ের কষ্ট না করে হলদিয়ার তৃনমূল নেতাদের বাড়ি বাড়িতে গিয়ে দাবিপত্র পেশ করুন এবং তাঁদের বাধ্য করুন তলাবাজি বন্ধ করে স্বচ্ছ নিয়োগ করাতে। তাহলেই হলদিয়ার বাঙালির প্রভূত উপকার হয়।
রাজনৈতিক মহল আরও দাবি করেছে যে আনিস খান এবং বগটুইয়ের ঘটনার পর বাঙালি মুসলমানের তৃনমুল মোহভঙ্গ হচ্ছে অতি দ্রুত। হলদিয়াতেও তার প্রভাব পড়েছে। বিশেষ করে আনিস কাণ্ডের প্রতিবাদ করে মিছিল মিটিং করার জন্য বহু মুসলিম নাগরিকের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের হয়েছে। সব মিলিয়ে হলদিয়া পুর এলাকায় তৃনমূলের জয় কঠিন। আর তাই কখনও আপ, কখনও বাংলাপক্ষের মত সংগঠনকে ময়দানে নামাচ্ছে তৃনমূলই। না'হলে হলদিয়ায় একটা মিছিলের অনুমতি পেতে যখন রাজনৈতিক দলগুলির জুতোর সুকতলা খয়ে যায় তখন একটি অরাজনৈতিক দলকে পুলিশ এসকর্ট দিয়ে মিছিল করানো হয়?'বাঙালি'র হয়ে হলদিয়ায় মিছিল, সভা বাংলা পক্ষের ! ভোটের মুখে তৃনমূলের 'ত্রাতা', কটাক্ষ বিরোধীদের
No comments