হলদিয়া বন্দরে পর পর চুরির ঘটনায় নাজেহাল বন্দর কর্তৃপক্ষ। জুন মাসেই পর পর তিনটি চুরি ও বেআইনি লোডিংয়ের ঘটনায় বিপাকে পড়েছে বন্দর ও পণ্য পরিবহণকারী বিভিন্ন এজেন্সি। চুরির ঘটনায় রক্ষকই কার্যত ভক্ষক হয়ে উঠেছে। সিকিউরিটির দায়িত্বে থা…
হলদিয়া বন্দরে পর পর চুরির ঘটনায় নাজেহাল বন্দর কর্তৃপক্ষ। জুন মাসেই পর পর তিনটি চুরি ও বেআইনি লোডিংয়ের ঘটনায় বিপাকে পড়েছে বন্দর ও পণ্য পরিবহণকারী বিভিন্ন এজেন্সি। চুরির ঘটনায় রক্ষকই কার্যত ভক্ষক হয়ে উঠেছে। সিকিউরিটির দায়িত্বে থাকা কর্মীদের বিরুদ্ধে চুরির ঘটনায় সহযোগিতা করার অভিযোগ উঠেছে। নজরদারির ফাঁক গলে বন্দর এলাকা থেকে একটি ডাম্পার লরিতে ২০টন কয়লা পাচার হয়ে যাচ্ছিল। এর আনুমানিক মূল্য প্রায় ৩লক্ষ টাকা। হলদিয়ার হিরন্ময়ী তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রে কয়লা পরিবহণের সময় পাচারের ঘটনা ঘটে। এর ঠিক পাঁচ দিন আগেই বন্দরের একটি প্লট থেকে শতাধিক টন আকরিক ম্যাঙ্গানিজ চারটি ট্রাকে বেআইনিভাবে বোঝাই করে অন্যত্র নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা হয় বলে অভিযোগ বন্দরে দায়িত্বপ্রাপ্ত কেন্দ্রীয় নিরাপত্তাবাহিনী সিআইএসএফের। ওই একই সময়ে বন্দরের টাউনশিপ এলাকার গ্যারেজ থেকে যন্ত্রপাতি চুরি যাওয়ার অভিযোগ ওঠে।
হলদিয়া শিল্পাঞ্চলে ছিনতাইচক্রের রমরমা দিন দিন বাড়ছে। ছিনতাইবাজদের দাপটে নাভিশ্বাস উঠেছে বিভিন্ন শিল্প সংস্থা থেকে বন্দর কর্তৃপক্ষ সবারই। হলদিয়া পেট্রকেমের পলিমার থেকে ভোজ্যতেল সংস্থার পণ্য কিংবা বন্দরের কয়লা কোনও কিছুই বাদ যাচ্ছে না আন্তঃরাজ্য ছিনতাই চক্রের হাত থেকে। ভোজ্যতেল সংস্থাগুলি থেকে ভিন রাজ্যে পণ্য পরিবহণের সময় একের পর এক ছিনতাইয়ের ঘটনা ঘটছে। বেশিরভাগ ছিনতাইচক্রের কিংপিনরা হলদিয়া থেকে এর পরিচালনা করে বলে অভিযোগ। অন্যদিকে, বন্দর এলাকা থেকে সিকিউরিটি, ট্রাক ড্রাইভার ও ভুয়ো এজেন্সিদের যোগসাজসে কয়লা পাচার হচ্ছে বলে অভিযোগ। গত এপ্রিল মাসে এধরনের একাধিক ঘটনা ঘটে। কখনও দার্জিলিং কিংবা খড়্গপুর যাওয়ার পথে উধাও হয়েছে কয়লা বোঝাই ট্রাক।
গত ৩০এপ্রিল রানিচক এসইউএস-টু রেলওয়ে সাইড থেকে কয়লা চুরির ঘটনায় বন্দরের সবচেয়ে বড় কার্গো হ্যান্ডেলিং এজেন্সি রিপ্লে এন্ড স্টিভেডরিং এন্ড হ্যান্ডেলিং কোম্পানি হলদিয়া থানায় অভিযোগ দায়ের করে। ঠিক দেড় মাসের মাথায় গত ১৪জুন দুপুর ১২টা নাগাদ ওই একই এলাকা থেকে ২০টন কয়লা পাচারের চেষ্টা হচ্ছিল। হলদিয়া এনার্জির এক সাসপেন্ডেড সিকিউরিটি, ট্রাক ড্রাইভার ও খালাসির যোগসাজসে এঘটনা ঘটে বলে অভিযোগ। চালান জমা দেওয়ার সময় ওই সিকিউরিটি ট্রাকটিকে বের করে দেয়। ফের দ্বিতীয়বার চেকিংয়ের সময় কয়লা বোঝাই ট্রাকটি ধরা পড়ে যায়। ওই ঘটনায় তিনজনের বিরুদ্ধে থানায় অভিযোগ করে রিপ্লে। ধৃতরা আপাতত জেল হেফাজতে রয়েছে।
অন্যদিকে, বন্দরের সংরক্ষিত এলাকায় বি-এইট প্লট থেকে বেআইনিভাবে ম্যাঙ্গানিজ বোঝাই করার জন্য থানায় অভিযোগ দায়ের করে সিআইএসএফ। গত ৯জুন একটি এজেন্সির চারটি ট্রাক তার নিজস্ব প্লট থেকে ম্যাঙ্গানিজ বোঝাই করার পরিবর্তে অন্য এজেন্সির আমদানি করা ম্যাঙ্গানিক ট্রাকে বোঝাই করে বলে অভিযোগ। ঘটনাটি সিআইএসএফ জানার পর হলদিয়া থানায় অভিযোগ করে। এই ঘটনার জেরে ট্রাক ড্রাইভার সহ মোট ৯জনকে গ্রেপ্তার করে পুলিস। বন্দর কর্তৃপক্ষ জানায়, ওই সংস্থাটি বন্দরের কাছে ভুল স্বীকার করেছে। আদালতে বিষয়টি জানানোর পর ধৃতদের জামিনে মুক্তি হয়। হলদিয়া বন্দরের জেনারেল ম্যানেজার(ট্রাফিক) অভয়কুমার মহাপাত্র বলেন, বন্দর এলাকায় চুরি বা পণ্য বোঝাইয়ের ক্ষেত্রে ভুল বোঝাবুঝি ঠেকাতে নতুন সিদ্ধান্ত নেওয়া হচ্ছে। বন্দরের মধ্যে বড হার্ড স্ট্যান্ড প্লটগুলি তৈরির সময় মাটির আইল্যান্ড রেখে দেওয়া হবে। ওই জায়গায় এজেন্সিগুলি তাদের সংস্থার নাম ও চিহ্ন দিয়ে রাখবে যাতে সমস্যা না হয়। এছাড়া প্রযুক্তিগত বেশ কিছু পরিবর্তন আনা হচ্ছে বন্দরে চুরি ঠেকাতে।
No comments