Page Nav

HIDE

Grid Style

GRID_STYLE

Post/Page

Weather Location

Breaking News:

latest

নাট্যজগৎ তথা ভারতীয় নাট্যজগতের এক মহান ব্যক্তিত্ব হলেন শম্ভু মিত্র

নাট্যজগৎ তথা ভারতীয় নাট্যজগতের এক মহান ব্যক্তিত্ব হলেন শম্ভু মিত্রবাংলা নাট্যজগৎ তথা ভারতীয় নাট্যজগতের এক মহান ব্যক্তিত্ব হলেন শম্ভু মিত্র। নাট্যাচার্য গিরিশচন্দ্র ঘোষের পর বাংলা নাট্যজগতের সর্বাধিনায়ক শম্ভু মিত্রকেই বলতে হয়।…

 



নাট্যজগৎ তথা ভারতীয় নাট্যজগতের এক মহান ব্যক্তিত্ব হলেন শম্ভু মিত্র

বাংলা নাট্যজগৎ তথা ভারতীয় নাট্যজগতের এক মহান ব্যক্তিত্ব হলেন শম্ভু মিত্র। নাট্যাচার্য গিরিশচন্দ্র ঘোষের পর বাংলা নাট্যজগতের সর্বাধিনায়ক শম্ভু মিত্রকেই বলতে হয়। কারণ, শম্ভু মিত্র একাধারে ছিলেন অভিনেতা, নাট্যপরিচালক, নাট্যকার, নাট্য প্রযোজক এবং নাট্য সংগঠক। এ ছাড়াও, তিনি ছিলেন চলচ্চিত্র অভিনেতা, চলচ্চিত্র পরিচালক এবং বেতার দূরদর্শনের এক জন বাচিক শিল্পী ও অভিনেতা। ১৯৩৯ সালে তিনি 'রংমহল'-এ যোগদানের মধ্য দিয়ে পেশাদারি নাট্যমঞ্চে পদার্পণ করেন অভিনেতা হিসাবে। কিন্তু বাণিজ্যিক থিয়েটারে অভিনয় করতে করতে এক সময়ে তিনি হাঁপিয়ে উঠেছিলেন। ১৯৪২ সালে 'উলুখাগড়া' নাটক লেখার মধ্যে দিয়ে শুরু হয় তাঁর নাট্যকারের জীবনযাত্রা। এই বছরেই তিনি 'ভারতীয় গণনাট্য সঙ্ঘ'-এ যোগ দেন। এই সঙ্ঘের মাধ্যমে বাংলা তথা ভারত ব্যাপী যে গণনাট্য আন্দোলনের সূচনা হয়েছিল, শম্ভু মিত্র সেই আন্দোলনে শামিল হয়েছিলেন। কিন্তু এই আন্দোলনে রাজনৈতিক আদর্শ প্রচার ও একমাত্র উদ্দেশ্য হওয়ায় শম্ভু মিত্র একটা সময়ে গণনাট্য সঙ্ঘ ত্যাগ করে স্বাধীন ও মুক্তচিন্তা সমৃদ্ধ নাটক মঞ্চস্থ করার লক্ষ্যে ১৯৪৮ সালে নিজের নাট্যদল 'বহুরূপী' গড়ে তোলেন। বাংলা নাট্যজগতে এই 'বহুরূপী'কে কেন্দ্র করে যে নতুন ধারার আন্দোলন গড়ে ওঠে, তা হল 'নবনাট্য আন্দোলন' এবং যে ধারা এখনও পর্যন্ত চলমান। বর্তমানে কলকাতায় বা মফস্সল শহরের বিভিন্ন গ্রুপ থিয়েটারগুলি যে উদ্দেশ্যে গড়ে উঠেছে বা উঠছে তার পুরোধা পুরুষ শম্ভু মিত্রকে বললে অত্যুক্তি হয় না।১৯৪৯ সালে তুলসী লাহিড়ীর ‘পথিক’ প্রযোজনা করেই খাতা খুলেছিল ‘বহুরূপী’।যে নবনাট্যের সন্ধানে ‘বহুরূপী’র পথ চলা শুরু, তার একটি প্রাথমিক শর্তই ছিল নতুন নাট্যকারদের বরণ করা। তুলসী লাহিড়ী সে আমলের প্রতিষ্ঠিত নাট্যকার। তাঁর লেখালেখিতে স্বদেশ ও সমকাল বিধৃত। তাই একে একে তাঁর ‘পথিক’ (১৯৪৯), ‘ছেঁড়া তার’ (১৯৫১) প্রযোজনা করেছে ‘বহুরূপী’।নিজে কলম ধরেছেন। লিখেছেন ‘উলুখাগড়া’ (১৯৪৯), ‘বিভাব’ (১৯৫১)। নাটকের ফর্ম ও প্রেজেন্টেশন নিয়ে যে এক্সপেরিমেন্ট তিনি করতে চেয়েছিলেন, সেই সুযোগ কড়ায়-গণ্ডায় উশুল করেছিলেন ‘বিভাব’-এ।

স্বাধীনতার চার বছরের মাথায় একটি রবীন্দ্র উপন্যাসের নাট্যরূপ দিয়ে নির্দেশনা দেওয়ার মূলে ছিল সন্ত্রাসবাদী স্বাধীনতা আন্দোলনের দার্শনিক ভিত্তিকে প্রশ্নের মুখোমুখি দাঁড় করানোর আগ্রহ। আম-আদমিকে লুঠ করে স্বরাজ আনার রাজসূয় যজ্ঞকে এক রকম নিন্দাই করেছিল তাঁর ‘চার অধ্যায়’।

আন্তেন চেকভ বা জে বি প্রিস্টলির বাংলা রূপান্তর প্রযোজনা করেছে ‘বহুরূপী’। নিজে বঙ্গীকরণ করেছেন রিয়ালিস্টিক থিয়েটারের পুরোধা হেনরিক ইবসেনের ‘এনিমি অফ দ্য পিপল’-এর। তৈরি হয়েছে ‘দশচক্র’ (১৯৫২)। এর ছ’বছরের মাথায় আবার ইবসেনে ফিরেছিলেন। ‘ডলস হাউস’ থেকে গড়ে নিয়েছিলেন ‘পুতুল খেলা’ (১৯৫৮)। এ নাটকে নারীর স্বাধীন হওয়ার স্পৃহাকে অকুণ্ঠ স্বীকৃতি দেওয়া হয়েছিল। আর এ নাটকের এক বছর আগে ‘বহুরূপী’র নির্দেশক লিখেছিলেন, ‘যে-কোনো নাট্যরূপই আমরা অবলম্বন করি না কেন, উদ্দেশ্য হল আজকের দিনের সমস্যাকে দর্শকের মনের সামনে তুলে ধরা, আজকের কষ্টকে আর আজকের চেষ্টাকে প্রতিফলিত করা।’ শম্ভু মিত্র তাঁর যুগধর্মকে অস্থিমজ্জায় বুঝতেন। ‘বহুরূপী’র ‘রক্তকরবী’ (১৯৫৪) তো কিংবদন্তি। 


তিনি চলে গিয়েছিলেন কাউকে কিছু না জানিয়ে। নিঃশব্দে, রাতের অন্ধকারে। তেমনই ইচ্ছে ছিল তাঁর। কন্যা শাঁওলীকে লিখেছিলেন তাঁর ‘ইচ্ছাপত্র’। এক বার নয়, বেশ কয়েক বার। ১৯৯৭ সালের ১৮ মে রাত দুটো বেজে ১৫ মিনিটে শম্ভু মিত্র শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। তার পর তাঁরই ইচ্ছে অনুযায়ী শাঁওলী গভীর রাতে সিরিটির শ্মশানে বৈদ্যুতিক চুল্লিতে তাঁর নশ্বর দেহটি দাহ করে ফিরে এসে বাবার মৃত্যুসংবাদ জানিয়েছিলেন। শ্মশানের ভারপ্রাপ্ত কর্মচারীটি মধ্যরাতের শ্মশানযাত্রীদের দেখে ও মৃত মানুষটির নাম জেনে প্রশ্ন করেছিলেন, “ইনি কি সেই শম্ভু মিত্র? যিনি নাটক করেন?” উত্তর পাননি। পাওয়ার কথা নয়। কারণ, তিনি ইচ্ছে প্রকাশ করেছিলেন, “আমি সামান্য মানুষ, জীবনে অনেক জিনিষ এড়িয়ে চলেছি। তাই মরবার পরেও আমার দেহটা যেন তেমনি নীরবে, একটু ভদ্রতার সঙ্গে, সামান্য বেশে, বেশ একটু নির্লিপ্তির সঙ্গে পুড়ে যেতে পারে।”

No comments