তিনকৌড়ৌ বেগুনবাড়ি কালী মন্দির ও পুজো হল একটি প্রাচীন জনপ্রিয় হিন্দু মন্দির (মেলা) যা পশ্চিমবঙ্গের পূর্ব মেদিনীপুর জেলার বেগুনবাড়িতে অবস্থিত। পাঁশকুড়া ব্লকের খিরাই রেলওয়ে স্টেশনের কাছে কংসাবতী (কাঁসাই) নদীর পশ্চিম তীরে অবস্থি…
তিনকৌড়ৌ বেগুনবাড়ি কালী
মন্দির ও পুজো হল একটি প্রাচীন জনপ্রিয় হিন্দু মন্দির (মেলা) যা পশ্চিমবঙ্গের পূর্ব মেদিনীপুর জেলার বেগুনবাড়িতে অবস্থিত। পাঁশকুড়া ব্লকের খিরাই রেলওয়ে স্টেশনের কাছে কংসাবতী (কাঁসাই) নদীর পশ্চিম তীরে অবস্থিত। মন্দিরের প্রধান দেবতা হলেন শ্রী শ্রী শ্মশান কালী মা - দেবী কালীর একটি অবতার আবার একে যুদ্ধের দেবী ও বলা হয়। তিনকৌড়ৌ
(অনেকের মতে - তিনতৌরি) বেগুনবাড়ি শ্রী শ্রী শ্মশান কালী মায়ের পুজোর বয়স আড়াইশো বছরের বেশি। প্রতি বছর বাংলা জৈষ্ট্য মাসের অমাবস্যা তে পুজো শুরু হয় এবং প্রতিমা নিরঞ্জন হয় আষাঢ় মাসের অমাবস্যা তে। পুরোনো মন্দির নষ্ট হয়ে যাওয়ার পর পুজো কমিটির তরফে দক্ষিণেশ্বর মন্দিরের আদলে নূতন মন্দির তৈরি করা হচ্ছে। এই পুজো উপলক্ষে বিশাল মেলা বসে মন্দির সংলগ্ন এলাকায় যেখানে নানা ধরনের জিনিসপত্র বেচা কেনা হয়। প্রচুর কসমেটিক সামগ্রী , খেলনা, বিভিন্ন ধরনের খাবার, গৃহস্থালির জিনিসপত্র, কামার, কুমোর, ছুতোর এর তৈরি জিনিস ছাড়াও এখানে রকমারি মাদুর পাওয়া যায়। এই প্রাচীন পুজো ও মেলা উপলক্ষে পশ্চিমবঙ্গ তথা ভারতের বিভিন্ন প্রান্তের হাজার হাজার তীর্থযাত্রী জড়ো হন এবং সেই সঙ্গে ওড়িশা, বিহার ও ঝাড়খন্ডের আদি জনজাতি এসে উপস্থিত হন শিকার উৎসবের জন্যে।
লোককাহিনী অনুসারে রাজা রাজনারায়ণ রায়ের (1756-1770) প্রধান কুস্তিগীর ছিলেন হিনু ডাং এবং দিনু ডাং নামে দুই ভাই। এই দুই ভাই ছিলেন অতি দরিদ্র পরিবার থেকে। সেই সময়ে, কলেরার কোন চিকিৎসা ছিল না, কলেরার প্রকোপে গ্রামের পর গ্রামের মানুষ মারা যেত। একসময় এই এলাকায় সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়লে হিনু ডাঃ ও দিনু ডাং দুজনেই খুব অসুস্থ হয়ে পড়েন। তারা দেবী কালীর কাছে প্রার্থনা করেছিলেন এবং তার পূজা করার প্রতিশ্রুতি দিয়ে আরোগ্য কামনা করেছিলেন। বেশ কিছু দিন পর দুই ভাই সম্পূর্ণ সুস্থ হয়ে ওঠেন। তবে মন্দির তৈরি বা পূজার ব্যবস্থা করার সামর্থ্য তাদের ছিল না। দুই ভাই ছিলেন বাগদি সম্প্রদায়ের। ঐতিহ্যগতভাবে বাগদিরা ছিলেন যোদ্ধা, শিকারী, অপহরন ও সংগ্রহকারী। প্রাচীন ব্রিটিশ ভারতের অন্যতম প্রধান যোদ্ধা গোষ্ঠীও ছিল তারা। কোম্পানির শাসনামলে, বাগদিদের অনেক দল বিভিন্ন অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডে অংশ নেয় এবং অনেক চেষ্টার পরেও ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি এদের দমন করতে না পারার ফলস্বরূপ এই জাতি বা দলের মানুষদের "" অপরাধী উপজাতি"" হিসেবে ঘোষণা করেন । লোকশ্রুতি অনুসারে "" রনপা "" (দুটো বাঁশের মধ্যে সমন্বয় রেখে দ্রুত হাঁটা বা দৌড়ের কৌশল) এদেরই আবিষ্কার।
দুই ভাই হিনু ডাং এবং দিনু ডাং তাদের 'মানত' (শপথ) পূরণ করতে শেষে ডাকাতি শুরু করেন এবং মায়ের পুজোর সাথে সাথে একটি মন্দিরও তৈরি করেন। একটি প্রাচীন স্মারক হিসাবে, এখনও পূজার আগে আনুষ্ঠানিক ডাকাতি প্রথাচালু আছে। লোকশ্রুতি এটাও যে আগে মায়ের পুজোতে নরবলী দেওয়ার চল ছিল। বর্তমানে ছাগ বলি প্রথা চালু রয়েছে। আগত তীর্থযাত্রী গণ তাদের মানত পূরণের জন্য হাজার হাজার ছাগল বলি দেন। 'বেগুনবাড়ি' র নাম এসেছে বেগুন বাগান বা মাঠে প্রথম পূজা অনুষ্ঠিত হওয়ায় একে 'বেগুনবাড়ি'র কালী পূজা বলা হয়। এখন পুরো গ্রামটিকে 'বেগুনবাড়ি' বলা হয়।
এই বছর পুজো শুরু হবে *১৪২৯ সনের ১৪ই জৈষ্ঠ্য (ইংরেজী মাসের 29/05/2022) রবিবার *
পথনির্দেশ :- খড়গপুর থেকে পাঁশকুড়া রেলপথে ক্ষীরাই রেল স্টেশন থেকে দক্ষিণ দিকে ০৩ কিলোমিটার রাস্তা ভাড়াগাড়ি বা হেঁটে যাওয়া যায়।
তথ্য সাহায্য :- গুগল ও শ্রী রূপেশ সামন্ত
সংকলন :- চন্ডী সিং
No comments