দলের বিভীষণদের চিহ্নিত করেছি, হলদিয়ার সমাবেশ থেকে কড়া বার্তা অভিষেকেরপ্রদীপ কুমার মাইতি- হলদিয়াা- শ্রমিক সমাবেশে তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। রাজ্যের শিল্পের অভিমুখ বোঝাতে এই সমাবেশ। সেখানে কী বার্তা…
দলের বিভীষণদের চিহ্নিত করেছি, হলদিয়ার সমাবেশ থেকে কড়া বার্তা অভিষেকের
প্রদীপ কুমার মাইতি- হলদিয়াা- শ্রমিক সমাবেশে তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। রাজ্যের শিল্পের অভিমুখ বোঝাতে এই সমাবেশ। সেখানে কী বার্তা দেবেন সাংসদ, সেদিকে তাকিয়ে সকলে। কী বার্তা দিলেন অভিষেক?
কাল হলদিয়ায় প্রকৃত স্বাধীনতা দিবস পালিত হয়েছে। এই প্রথম দলীয় কর্মীরা বলেছেন, নেতারা শুনেছে। কাল প্রায় ৫০ জন কর্মী বক্তব্য রেখেছেন। সবকথা আমার কাছে এসে পৌঁচেছে।
কে কারা আগের দিন বিএমএসের ঝাণ্ডা তুলেছে, আর পরের দিন তৃণমূলে এসেছে, তাক তালিকা আমার কাছে আছে। আমি তাদের চিহ্নিত করেছি। সভায় আসার পথেও আমি ৪-৫ জনকে চিহ্নিত করেছি। দলের বিভীষণকে আমরা চিহ্নিত করেছি।
যার নেতৃত্বে উত্তর কলকাতায় গুণ্ডামি করে বিদ্যাসাগরের মূর্তি ভাঙা হল। এই জেলার একসময়ের সর্বেসর্বা তাঁর পদলেহন করে, নিজেকে ইডি-সিবিআই থেকে বাঁচাতে দলবদল করল। দিল্লির বুকে মেদিনীপুরের আবেগকে বিক্রি করল।
আমার পিছনে তো ইডি-সিবিআই লেলিয়ে দিয়েছে। আমার মাথা নিচু করতে পেরেছে?
অনুগামী এক্সচেঞ্জ খুলে বসেছিল কেউ কেউ। কর্মসংস্থানে স্থানীয় বাসিন্দাদের অগ্রাধিকার দিতে হবে।
তৃণমূল করলে ঠিকাদারি করা যাবে না। আর ঠিকাদারি করলে তৃণমূল করা যাবে না। দলটা করতে হবে বুকে দলীয় পতাকা নিয়ে করতে হবে। আর যারা শ্রমিক সংগঠন করছেন, তাঁদের একটাই পরিচয় খেটে খাওয়া মানুষের প্রতিনিধি। এই দাদার অনুগামী, ওই দাদার অনুগামী বলা চলবে না। দলে একটাই দিদি, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।
রাজ্যের বিভিন্ন শিল্পাঞ্চলে শ্রমিক নেতার ভেক ধরে ঠিকাদারি ব্যবসা ফেঁদে বসেছে তৃণমূল কংগ্রেস নেতৃত্বের একাংশ। আর তাদের সংস্থার সৌজন্যে শোষণ আর বঞ্চনা জুটছে শ্রমিকদের কপালে। দীর্ঘদিনের সেই শোষণ আর বঞ্চনার ‘প্রাচীর’ ভেঙে গুঁড়িয়ে দেওয়ার ডাক দিলেন তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। এমনকী ঠিকাদারদের সঙ্গে দলের দূরত্ব বাড়ানোর সুস্পষ্ট ইঙ্গিতও শোনা গেল তাঁর গলায়। স্পষ্ট ভাষায় জানিয়ে দিলেন, কোনওস্তরের নির্বাচনেই দলের টিকিট মিলবে না ঠিকাদারদের। তাঁর নিদান, হয় ঠিকাদারি, নয় তৃণমূল। দল করতে হলে খুলে রেখে আসতে হবে ঠিকাদারের জামা। শনিবার হলদিয়ার রানিচক সংহতি ময়দানের উপচে পড়া সভাস্থল থেকে এই বার্তা দেন অভিষেক। আর সেটা যে বকলমে তৃণমূল সুপ্রিমো মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নির্দেশ, তা উপলব্ধি করে আশ্বস্ত হয়েছেন বিপুল সংখ্যক শ্রমিক-কর্মচারী আর তাঁদের পরিবারের লোকজন। হলদিয়া শিল্পাঞ্চলের শ্রমিক-কর্মচারীদের সমস্যা সমাধানে ১০০ দিন সময়ও চেয়ে নেন অভিষেক। তাঁর অঙ্গীকার, হলদিয়া হবে শ্রমিক ও শিল্প বান্ধব।
দীপ্ত ভাষায় অভিষেক এদিন জানান, হলদিয়া পুরসভায় কোনও ঠিকাদার প্রার্থী হবেন না। তাঁর কথায়, ‘সামনেই হলদিয়া পুরসভার ভোট। অনেকেই ভাবছেন, কে প্রার্থী হবেন? আমি বলছি, কোনও ঠিকাদার দলের প্রার্থী হবেন না। সিপিএম, বিজেপি থেকে দল পাল্টে আসা কিংবা বিধানসভা ভোটে পাঁচিলে বসে যাঁরা জল মেপেছেন, এরকম কেউ টিকিট পাবেন না। প্রথম দিন থেকে যাঁরা দল করছেন এবং মমতা বন্দ্যোপাধ্যয়ের হয়ে স্লোগান দিয়েছেন তাঁরাই টিকিট পাবেন।’ আপাতদৃষ্টিতে মনে হবে, হলদিয়া পুরসভার আসন্ন ভোটের জন্য দলের এই নিদান। যদিও রাজনৈতিক মহলের বক্তব্য, শ্রমিক শোষণকারী ঠিকাদারদের জন্য গোটা রাজ্যেই ‘জোড়াফুল’ টিকিট যে ব্রাত্য হবে, সে প্রসঙ্গই উত্থাপন করে গিয়েছেন অভিষেক।
বিভিন্ন ইস্যুতে হলদিয়ার একাধিক কারখানায় বিবাদ ছিল। এই অবস্থায় হলদিয়া শিল্পাঞ্চলে একটা শিল্প-বান্ধব বার্তা দেওয়া জরুরি ছিল। এদিন সেই কাজটিই করেন অভিষেক। সাফ বলেন, ‘আগামী ১০০ দিনের মধ্যে সব কারখানায় চার্টার অব ডিম্যান্ড (সিওডি) করা হবে। আজকের পর থেকে কোনও ঠিকাদার কোনও সিওডি মিটিংয়ে থাকবেন না। এটা গোটা রাজ্যের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য। আমি মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের অনুমতি নিয়ে একথা ঘোষণা করলাম।’ হলদিয়ায় ৫২-৫৪টি কলকারখানা আছে। সেখানে জেলাশাসক কিংবা ডেপুটি লেবার কমিশনারের উপস্থিতিতে চার্টার অব ডিমান্ড(সিওডি) হতে পারে। এখানেই থামেননি অভিষেক। তিনি বলেন, ‘এখানে ১৫-২০ জন ঠিকাদার ১২ঘণ্টা কাজ করিয়ে শ্রমিকদের আট ঘণ্টার পারিশ্রমিক দিয়েছেন। আগামী ১ জুন থেকে এটা হবে না। যদি না করেন তাহলে কেটে পড়ুন।’ তাঁর হুঁশিয়ারি, ‘এরকম যে করবে তাঁকে শ্রীঘরে ঢোকাতে না পারলে, আমার নাম অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় নয়।’
No comments