প্রয়াত হলেন সঙ্গীতশিল্পী কে কে
জনপ্রিয় সংগীতশিল্পী কৃষ্ণকুমার কুন্দন ওরফে কেকে মারা গেছেন‘হাম... রহে ইয়া না রহে কাল...’। গাইছিলেন তিনি। অস্বস্তি হচ্ছিল, প্রবল ঘাম। বলছিলেন, স্পটলাইটগুলো কয়েকটা বন্ধ করলে ভালো হয়। কিন্তু, গান থাম…
প্রয়াত হলেন সঙ্গীতশিল্পী কে কে
জনপ্রিয় সংগীতশিল্পী কৃষ্ণকুমার কুন্দন ওরফে কেকে মারা গেছেন
‘হাম... রহে ইয়া না রহে কাল...’। গাইছিলেন তিনি। অস্বস্তি হচ্ছিল, প্রবল ঘাম। বলছিলেন, স্পটলাইটগুলো কয়েকটা বন্ধ করলে ভালো হয়। কিন্তু, গান থামাননি। অসুস্থ হয়ে পড়েছিলেন অনুষ্ঠানের আগে, হোটেলেও। তাও এসেছিলেন নজরুল মঞ্চে। কথা দিয়েছিলেন গুরুদাস কলেজের পড়ুয়াদের। সেই কথা রাখতেই এসেছিলেন। অনুষ্ঠান শেষও করেছেন। তারপর গাড়িতে ওঠার সময় কার্ডিয়াক অ্যারেস্ট। প্রথমে হোটেল, তারপর বেসরকারি এক হাসপাতাল। কিন্তু ততক্ষণে থেমে গিয়েছে তাঁর হৃদয়। প্রয়াত কেকে। কৃষ্ণকুমার কুন্নথ। কিন্তু কে চিনত তাঁকে এই নামে? যখন পথচলতি কানে আসে ‘ইয়ারো দোস্তি বড়ি হি হাসিন হ্যায়’... স্মৃতি থেকে উঁকি দেয় কেকের সেই হাসিমাখা মুখ। কিংবা ‘তড়প তড়প কে ইস দিল সে...’, ‘আঁখো মে তেরি..’, ‘কোই কহে, কেহতা রহে...’ অগুনতি হিট উপহার দিয়েছেন সঙ্গীতপ্রেমীদের। তাই রাত ১০টায় তাঁর কণ্ঠ স্তব্ধ হয়ে যাওয়ার খবরটা বিশ্বাস করে উঠতে পারেনি কলকাতা। থেমেছে ‘পল’। সময়। মানতে পারছে না দেশও। শিল্পীর মৃত্যুতে শোকপ্রকাশ করেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। জানান, তিনি তাঁর গানের মাধ্যমে চিরদিন দেশবাসীর মনে বেঁচে থাকবেন।
গান গাইতে মঙ্গলবার সন্ধ্যা পৌনে সাতটা নাগাদ নজরুল মঞ্চে আসেন কেকে। শুরুতে বেশি দর্শক ঢুকে পড়ায় বিশৃঙ্খলা তৈরি হয়েছিল। অনুষ্ঠান শেষ করে সাড়ে আটটা নাগাদ মধ্য কলকাতার পাঁচতারা হোটেলে ফেরেন তিনি। সূত্রের খবর, হঠাৎ হোটেলের ঘরে পড়ে যান শিল্পী। তড়িঘড়ি তাঁকে একবালপুরের একটি নামী বেসরকারি হাসপাতালে পাঠানো হয়। সেখানেই চিকিৎসক তাঁকে মৃত ঘোষণা করেন। প্রাথমিকভাবে চিকিৎসকদের অনুমান, হৃদরোগে আক্রান্ত হয়েই মৃত্যু হয়েছে তাঁর। তবে মৃত্যুর প্রকৃত কারণ জানতে আজ ময়নাতদন্ত হওয়ার কথা রয়েছে। কেকে’র মৃত্যুর খবর পেয়ে রাজ্যের মন্ত্রী অরূপ বিশ্বাস ছুটে যান হাসপাতালে। পরে তিনি জানান, কেকে’র ম্যানেজারের সঙ্গে কথা হয়েছে তাঁর। ইতিমধ্যেই মুম্বইতে শিল্পীর পরিবারকে এই বিপর্যয়ের খবর জানানো হয়েছে। স্ত্রী জ্যোতি ও দুই সন্তান আজ সকালের বিমানে কলকাতায় আসছেন।
১৯৬৮ সালে ২৩ আগস্ট দিল্লিতে একটি মালায়লম পরিবারে জন্ম কেকের। হিন্দি, তামিল, কন্নড়, তেলুগু, বাংলা সহ একাধিক ভাষায় গান গেয়েছেন। একটা সময় মার্কেটিং এগজিকিউটিভ হিসেবে চাকরি করেছেন তিনি। সঙ্গীতে প্রথাগত শিক্ষা না থাকলেও তিনি বলিউডের এই প্রজন্মের অন্যতম বৈচিত্র্যময় গায়ক। ১৯৯৯ সালে ‘হাম দিল দে চুকে সনম’ সিনেমার ‘তড়প তড়প কে ইস দিল সে..’ গানটিই বলিউডে প্রথম সাফল্য কেকে’র। তারপর আর পিছন ফিরে তাকাতে হয়নি তাঁকে। তার আগে ১৯৯৬ সালে গুলজারের ‘মাচিস’ সিনেমার ‘ছোড় আয়ে হম উও গলিয়াঁ...’ গেয়েছিলেন তিনি। শ্রেয়া ঘোষাল টুইটে লেখেন, ‘কেন? বিশ্বাস করতে কষ্ট হচ্ছে।’ সঙ্গীত পরিচালক জিৎ গঙ্গোপাধ্যায় বলেন, ‘দেশের একজন আইকনিক সিঙ্গারকে হারালাম। দীর্ঘ ২৭ বছরের বন্ধু আমরা।’
নজরুল মঞ্চের স্পটলাইট নিভেছে। থমকে গিয়েছে কলকাতা। কেকের নিথর দেহ হয়তো আজ, বুধবার মুম্বই ফিরে যাবে বিমানে। এমন ক্লাইম্যাক্স তো চায়নি এ শহর। চায় না। এখনও এই মহানগরের কানে বাজছে সেই সুরেলা, ভার্সেটাইল কণ্ঠ... ‘আনেওয়ালি সুবহা জানে রঙ্গ ক্যায়া লায়ে দিওয়ানি।’ শেষ গানটাও যে ওটাই ছিল। ‘পল’-এর সঙ্গে মিলিয়ে দিয়েছিলেন কলকাতাকে। গেয়েছিলেন, ‘পল... ইয়ে হ্যায় কলকাতাকে পল, চল... আ মেরে সঙ্গ চল’। একলা সফরেই রওনা দিলেন কেকে। রেখে গেলেন কিছু সুর, তাল, গান। আর মনের অন্দরে গেঁথে যাওয়া কয়েকটা শব্দ, ‘হাম... রহে ইয়া না রহে, ইয়াদ আয়েঙ্গে ইয়ে পল।’
No comments