বিয়ের প্রস্তাবে রাজি না হওয়ায় খুন গৃহবধূকে,গ্ৰেফতার অভিযুক্ত যুবক এক সপ্তাহ আগে হলদিয়ার ভবানীপুরের বাঁশখানা গ্ৰামে নৃশংসভাবে খুন হয়েছিল এক মহিলা।কিন্তু তখন মৃত মহিলার পরিচয় জানা যায়নি।পুলিশ মৃত মহিলার পরিচয় জানার জন্য বিভিন্ন ক…
বিয়ের প্রস্তাবে রাজি না হওয়ায় খুন গৃহবধূকে,গ্ৰেফতার অভিযুক্ত যুবক
এক সপ্তাহ আগে হলদিয়ার ভবানীপুরের বাঁশখানা গ্ৰামে নৃশংসভাবে খুন হয়েছিল এক মহিলা।কিন্তু তখন মৃত মহিলার পরিচয় জানা যায়নি।পুলিশ মৃত মহিলার পরিচয় জানার জন্য বিভিন্ন কৌশল অবলম্বন করে।তবুও তা অধরাই ছিল।মহিলার মৃত্যুর চার দিনের মাথায় গত ২৩ এপ্রিল মৃতের পরিবার ভগবানপুর থানায় একটি নিঁখোজ ডায়েরি করে।সেই সূত্র ধরেই মৃতার পরিচয় জানতে পারে পুলিস।পুলিস জানিয়েছে,মৃতের নাম টুম্পা দত্ত (মান্টী)(৩০) পূর্ব মেদিনীপুর জেলার ভগবানপুর থানার অন্তগর্ত মনিরামচকের বাসিন্দা।তাঁকে নিখুঁত পরিকল্পনা করে খুন করা হয়েছে।ইতিমধ্যেই ঘটনায় মূল অভিযুক্ত পশ্চিম মেদিনীপুর জেলার সবং থানার খড়িকা গ্ৰামের বাসিন্দা রঞ্জন মান্নাকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিস।মঙ্গলবার দুপুর নাগাদ সবংয়ের খড়িকা থেকে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়।মঙ্গলবার রাতেই হলদিয়ার ভবানীপুর থানায় আনা হয়।পুলিশ জানিয়েছে পেশায় গ্ৰীল ব্যাবসায়ী ৩৬ বছর বয়সী ওই যুবকের নিজের গ্ৰামে একটি গ্ৰীল দোকান রয়েছে।
হলদিয়ার এসডিপিও রাহুল পাণ্ডে বলেন,অভিযুক্ত যুবক সাত বছর আগে ওই গ্ৰামের বাসিন্দা কবিতা কর(মান্না)কে বিয়ে করে।দুটো পুত্র সন্তান আছে।বিয়ের পর থেকেই স্ত্রীর ওপর বিভিন্ন ভাবে অত্যাচার চালাতো।এজন্য ওই যুবকের নামে কোর্টে বধূনির্যাতন মামলা চলছে।এরপর এক বছর আগে ডেবরার বাসিন্দা মিলা মুন্সি নামে এক মহিলাকে বিয়ে করে।এটা ছিল তার জীবনে তৃতীয় সম্পর্ক।প্রায় দু'বছর আগে বন্ধুর সঙ্গে একটি পারিবারিক অনুষ্ঠানে গিয়ে মহিলার সঙ্গে আলাপ হয়।এরপর থেকে দুজনের মধ্যে ঘনিষ্ঠতা বাড়ে।প্রায়শই দুজনে ফোনে কথা বলতো।কিন্তু ওই যুবকে বিয়ের প্রস্তাব দিলে তা প্রত্যাখান করে গৃহবধূ।এরপর ওই গৃহবধূর অশ্লীলতার ছবি ইন্টারনেট মাধ্যমে ভাইরাল করার হুমকি দেওয়া হয়।ঘটনার দিন অভিযুক্তের মোটরবাইকে চেপে বাজকুলে গৃহবধূর আত্মীয়ের বাড়িতে আসে।কিন্তু সেদিন তারা হলদিয়ায় একটি অনুষ্ঠানে এসেছিল।তাই গৃহবধূকে নিয়ে হলদিয়ার উদ্দেশ্যে রওনা দেয় ওই যুবক।শেষ বারের মতো মহিলাকে জিজ্ঞেস করে তাকে বিয়ে করবে কিনা।কিন্তু কোনমতেই সেই প্রস্তাবে রাজি হয়নি ওই গৃহবধূ।এরপর রাগের পেছন নিয়ে ধারালো অস্ত্র দিয়ে কুপিয়ে খুন করে।এরপর অস্ত্রটিকে টিস্যু পেপার দিয়ে মুছে ফেলে,পরনের পোষাক খুলে কোমরে বেঁধে সোজা মোটরবাইক চালিয়ে সবং এ নিজের বাড়িতে ফিরে যায়।অভিযুক্ত নিজের অপরাধ স্বীকার করেছে।যে ধারালো অস্ত্র দিয়ে খুন করেছে ওই ঘটনার দু'দিন আগে সে স্থানীয় দোকান থেকে কিনছেন বলে জানিয়েছে।
প্রসঙ্গত,গত ২০এপ্রিল বুধবার রাত সাড়ে ৮টা নাগাদ হলদিয়ার হলদি নদী সংলগ্ন বাঁশখানা গ্রামে একটি কংক্রিটের রাস্তার ওপর টুম্পার গলার নলি কাটা দেহ উদ্ধার হয়।পুলিস জানিয়েছে টুম্পা ও রঞ্জন দু’জনেই বিবাহিত। প্রায় দু’বছর ধরে তারা বিবাহ বহির্ভূত সম্পর্কে জড়িয়ে পড়েছিল।ওই মহিলাকে বিয়ে করে আলাদা সংসার পাতার প্রস্তাব দিয়েছিল অভিযুক্ত।কিন্তু,টুম্পা সেই প্রস্তাবে সাড়া দেয়নি।তার জেরেই এই খুন বলে মনে করছে পুলিস।
মৃতের ভাই সূর্যকান্ত ঘোষ জানিয়েছেন তিনি কর্মসূত্রে বোম্বে থাকেন।গত একমাস আগে বিয়ের জন্য বাড়ি ফিরে এসেছেন।বোন নিঁখোজ হওয়ার খবর পেয়ে বিভিন্ন আত্মীয় বাড়িতে খোঁজ খবর শুরু করেন,শেষে বাজকুলে এক দূর সম্পর্কের বোনের সঙ্গে কথা বলে জানতে পারেন বুধবার বিকেল নাগাদ এক যুবক তার দিদি(টুম্পার) নাম করে ফোন করেছিল,বাড়িতে আসতে চেয়েছিল।কিন্তু তারা হলদিয়ায় এক পারিবারিক অনুষ্ঠানে এসেছিল বলে জানান।তারপর থেকে ওই নম্বরে ফোন করে আর উত্তর পাওয়া যায়নি।বোনের এভাবে রহস্যজনক মৃত্যু তিনি মেনে নিতে পারছেন না।
মৃতের স্বামী বলেন স্ত্রীর এই ঘটনা তিনি জানতেন,একাধিকবার বকাবকি এমনকি মারধরও করেছেন।যে নম্বরে ফোন করেছিল তা নষ্ট করেও দিয়েছেন।কিন্তু তারপরও গোপনে যোগাযোগ রেখেছিল ওই গৃহবধূ।
এই ঘটনায় মৃতের পরিবারের সদস্যরা কান্নায় ভেঙে পড়েছেন।
তারা অভিযুক্তের ফাঁসির দাবি করছেন।
বুধবার অভিযুক্তকে হলদিয়া মহকুমা আদালতে তোলা হলে বিচারক পুলিশ হেফাজতের নির্দেশ দেন।
No comments