যুব নেত্রী মীনাক্ষী! লিখেছেন উজ্জ্বল মুখার্জি আমার ডায়েরিসেই ভাবে চিনতাম না। প্রথম দেখলাম DYFI এর ডাকা একটা প্রেস কনফারেন্সে। চুপচাপ। দুই একটা কথা, বাংলা উচ্চারণে কেমন যেনো অবাঙালিয়ানা । মনে মনে ভাবছিলাম, এই বাজারে যুব নেত্রী ক…
যুব নেত্রী মীনাক্ষী! লিখেছেন উজ্জ্বল মুখার্জি
আমার ডায়েরি
সেই ভাবে চিনতাম না। প্রথম দেখলাম DYFI এর ডাকা একটা প্রেস কনফারেন্সে। চুপচাপ। দুই একটা কথা, বাংলা উচ্চারণে কেমন যেনো অবাঙালিয়ানা । মনে মনে ভাবছিলাম, এই বাজারে যুব নেত্রী করার আর মেয়ে পেলো না cpm।
এরপর দেখা সিঙ্গুর থেকে নবান্ন অভিযানের মিছিলে। কাঠফাটা রোদে ২দিন হেঁটে তারপর নবান্ন অভিযান। টানা হাঁটলো। নবান্ন অভিযানে প্রচুর গন্ডগোল হলো। রক্ত ঝরলো। আহত হলো অনেকে। নির্মম পুলিশের কাঁদানে গ্যাস, লাঠি। ছত্রখান চারদিক। এর মধ্যে দেখি ওই মেয়েটা এক কমরেডের উপর ঢালের মতো শুয়ে লাঠির অবিরাম আঘাত সহ্য করে তাকে বাঁচাচ্ছে। শেষপর্যন্ত তাকে সরিয়ে ছেলেটাকে কিছুতেই নিতে পারলো না হারমানা পুলিশ। সব মিডিয়াতে খবর হলো।
এরপর কখনো মিছিলে, কখনো মিটিং এ দেখা। যাপনে সংযত, কথায় সংযত এবং সহিষ্ণু নীরব শ্রোতা। যে কেউ বলবে অহঙ্কারী। কিন্তু বক্তব্য রাখার সময় এ যেন অন্য মেয়ে। আগুন ঝরানো বক্তৃতা। যেমন তেজ, তেমন দৃড়তা সঙ্গে আত্মবিশ্বাস। দ্রুত বাড়তে লাগলো পরিচিতি।
এসে গেল বিধানসভা ভোট। মমতাদি নন্দীগ্রামে দাঁড়ালেন। বিপক্ষে শুভেন্দু। ভোটের পারদ চরচর করে বাড়ছে। মিডিয়ার মুখ সেদিকেই ঘুরে । নন্দীগ্রাম মুখ ঢাকলো তৃণমূল আর বিজেপির পতাকায়। সিপিএম প্রার্থী করলো সেই মেয়েটাকে, মীনাক্ষী মুখার্জি। শুরু হলো এক অসম লড়াই। ধারে ভারে কোনো তুলনাই হয়না। তবু লড়াই শুরু করলো মীনাক্ষী। সঙ্গে হাতে গোনা ৫ থেকে ৭ জন। পায়ে হেঁটে শুরু করলেন প্রচার - প্রতিদিন নির্জন সকাল থেকে নীরব রাত। লাল চুড়িদার, সাদা ওড়না। এই সময় অনেকবার দেখা হয়েছে। জিজ্ঞাসা করলে একটাই উত্তর, এখানকার বেশিরভাগ মানুষ খুব কষ্টে আছে। জিতি বা হারি আমি ওদের সঙ্গেই থাকবো। যে কোনো বাড়ির দাওয়ায় বসে গল্প। অজানা বাড়িতে দুপুর, রাতের খাওয়া। মাত্র একমাসের মধ্যে নন্দীগ্রামের "কাজলা দিদি " হয়ে গেলো মেয়েটা। যুদ্ধে হেরেছেন তো অনেক রাজাই, কিন্তু আলেকজান্ডার হতে পারে কজনে!
সেই মেয়ে এখন জেলে। কি অপরাধ? আনিস খানকে কে খুন করলো তার জবাব চাইতে গেছিলো পুলিশ সুপারের অফিসে। ছাত্র যুবদের বিক্ষোভ। গন্ডগোল হলো। পুলিশ পেটালো। তারপর জেলে। খুনের চেষ্টা মামলাও রুজু করা হয়েছে। তাই জামিন নাকচ। সঙ্গে আরও অনেক ধারা। জেল কুঠুরিতে বন্দী মীনাক্ষী।
আচ্ছা জেল কুঠুরিতে বসে কি করছে মেয়েটা? তার বাড়ির অবস্থা ভালো না। কিছুদিন আগে ভাই মারা গেছে। তারপর থেকে সংসারে সব ওলটপালট হয়ে গেছে, বলছিলো একদিন। আচ্ছা, তাহলে গারদের আড়ালে বসে কি তার মন সারাক্ষণ বাড়ির আনাচে কানাচেতেই ঘোরাফেরা করছে? নাকি ভাবছে সংগঠনের ভবিষ্যত ও ভবিতব্যের কথা? না কি অন্য বিকল্প পথের সন্ধান? জানি হাজারবার প্রশ্ন করলেও উত্তরে শুধু হাসবে।
পাতা উল্টে দেখছিলাম সাম্প্রতিককালে রাজনৈতিক আন্দোলন করতে গিয়ে হতো "অনশন" করতে হয়েছে অনেকদিন কিন্তু কোনো নেত্রীকে এতদিন জেলে থাকতে হয়নি। কোনো দলের কাউকে না। আসলে অনিস খুনিদের শাস্তির দাবি, মস্ত বড়ো অপরাধ তো বটেই!
জেলের অপর নাম সংশোধনাগার। সংশোধন করা হয় আসামিদের। আচ্ছা এতদিন জেলে থেকে মীনাক্ষীরও কি সংশোধন হবে? সব ছেড়ে ঘর সংসারে মন দেবে মেয়েটা? একটা চাকরি, তারপর বিয়ে, সুন্দর একটা জীবন। নাকি ছাড়া পেয়েই আবার সেই আন্দোলনে ঝাঁপিয়ে পড়বে। লড়াই। জোরদার আরও জোরদার । হার না মানা জেদ, আরও জোরালো বক্তৃতা। পুলিশের ব্যারিকেট ভাঙতে ভাঙতে চিৎকার করে স্লোগান----
"প্রতিবাদে, প্রতিরোধে, প্রতিশোধে কমরেড...
দেখা যাক কোন দিকে সংশোধন হয় মেয়েটার।
No comments