ইউক্রেন থেকে বাড়ির পথে রওনা দিল দুই মেদিনীপুর সহ রাজ্যের বিভিন্ন জেলার ডাক্তারি পড়ুয়ারা
মঙ্গলবার বিকেলে ইউক্রেন থেকে বাড়ির পথে রওনা দিল দুই মেদিনীপুর সহ রাজ্যের বিভিন্ন জেলার ডাক্তারি পড়ুয়ারা। এদিন সকাল থেকেই ফের ইউক্রেনের রাজধানী…
ইউক্রেন থেকে বাড়ির পথে রওনা দিল দুই মেদিনীপুর সহ রাজ্যের বিভিন্ন জেলার ডাক্তারি পড়ুয়ারা
মঙ্গলবার বিকেলে ইউক্রেন থেকে বাড়ির পথে রওনা দিল দুই মেদিনীপুর সহ রাজ্যের বিভিন্ন জেলার ডাক্তারি পড়ুয়ারা। এদিন সকাল থেকেই ফের ইউক্রেনের রাজধানী কিয়েভে ক্ষেপণাস্ত্র হানা ও বোমা বর্ষণ শুরু করেছে রাশিয়া। ক্ষেপণাস্ত্র হানার বিকট শব্দ কানে আসছে, তারই মধ্যে শুনশান হাইওয়ে দিয়ে তির বেগে হাঙ্গেরির সীমান্তের দিকে ছুটছে পড়ুয়াদের বাস। প্রত্যেকের চোখে মুখে আতঙ্কের ছাপ। কানে মোবাইল নিয়ে সকলেই বাড়ির লোকজনের সঙ্গে যোগাযোগের আপ্রাণ চেষ্টা করছেন। কিন্তু শহর ছাড়াতেই নেটওয়ার্কের সমস্যা। ভিডিও কল করে পড়ুয়ারা আত্মীয়স্বজনের সঙ্গে কথা বলতে বলতে বার বার সংযোগ বিচ্ছিন্ন হচ্ছে। কখনও শুনশান রাস্তা, আবার কোথাও হাইওয়েতে গাড়ির বিশাল লম্বা লাইন লেগে গিয়েছে। প্রবল তুষারপাতের চিহ্ন রাস্তাজুড়ে। চারদিক সাদা হয়ে রয়েছে। এদিন বাসে চড়ে সীমান্তের পথে ভিডিও কলে কথা বলতে বলতে ইউক্রেনের কয়েকটি ছবি হোয়াটস অ্যাপ করলেন হলদিয়ার ডাক্তারি পড়ুয়া দীপাঞ্জলি বেরা। সোমবার সকালে দীপাঞ্জলি ও তাঁর বন্ধু সম্রাট মল্লিক সহ আরও সাতজন কিয়েভ ছাড়ার সিদ্ধান্ত নেন। তাঁরা একটি গাড়ি ঠিক করে রওনা দেন কিয়েভ থেকে ২৬৫ কিলোমিটার দূরে মধ্য ইউক্রেনের শহর ভিনিৎসিয়ার দিকে। সন্ধে নাগাদ সেই শহরে পৌঁছন সবাই। সেখানে কোনও রকমে একটি হোটেলে রাত কাটিয়ে ডাক্তারি পড়ুয়ারা এদিন সকাল থেকে হন্যে হয়ে বাসের খোঁজ শুরু করেন। সকাল ১১টা পর্যন্তও বাসের সন্ধান মেলেনি। মেদিনীপুর, কলকাতা সহ বিভিন্ন জেলার ডাক্তারি পড়ুয়াদের সঙ্গে যুক্ত হয় হয় ভিনিৎসিয়া মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের আরও অনেক পড়ুয়া। তাঁদের কেউ কাশ্মীরের, কেউ দিল্লির, আবার ভিন দেশেরও রয়েছেন। সব মিলিয়ে বাঙালি সহ বিভিন্ন দেশের ৩০ জন পড়ুয়া এদিন বিকেল ৪টে নাগাদ ভিনিৎসিয়া শহর থেকে রওনা দেন হাঙ্গেরির সীমান্তের উদ্দেশে। সেই বাসের সামনে লাগানো রয়েছে ভারতের কয়েকটি পতাকা। ভোররাত কিংবা বুধবার সকালে গিয়ে দীপাঞ্জলিরা পৌঁছবেন হাঙ্গেরিতে। দীপাঞ্জলির দাদা দীপসাগর বেরা বলেন, বোনের সঙ্গে সারাদিনে কয়েকবার কথা হয়েছে। বাস পাওয়া নিয়ে খুব চাপে ছিল। শেষমেশ বাস পাওয়ায় খানিকটা উদ্বেগ কেটেছে। এক্ষেত্রে বড় ভূমিকা নিয়েছেন ইউক্রেনের বাঙালি চিকিৎসক পৃথ্বীরাজ ঘোষ। তিনি বার বার বোন ও তার সহপাঠীদের অভয় দিয়েছেন। আপাতত বাড়ির পথে রওনা দেওয়ায় খানিকটা উদ্বেগ কেটেছে অভিভাবকদের। তাঁরা বলেন, কিয়েভে যুদ্ধ শুরু হওয়ায় সবাই ভয়ে ছিলাম। বাড়িতে খাওয়া দাওয়া প্রায় শিকেয় উঠেছে। সারাক্ষণ টিভির খবর বা মোবাইলে চোখ রাখছি। এদিন বিকেলে খারকিভে এক ভারতীয় পড়ুয়ার মৃত্যুর খবর উদ্বেগ বাড়িয়েছে। যুদ্ধ লাগার পর থেকেই পড়ুয়াদের বাড়ি ফেরানো নিয়ে ভীষণ চিন্তায় ছিলেন পৃথ্বীরাজবাবু। তিনি বলেন, গত চারদিনে ভারতীয় সহ বিভিন্ন দেশের ৩০০ জনের বেশি ডাক্তারি পড়ুয়াকে দেশে ফেরানোর ব্যবস্থা করেছি। এখন সীমান্ত পর্যন্ত গাড়ির ভাড়া দেড়-দু’লক্ষ টাকা পর্যন্ত উঠেছে। ফলে পড়ুয়াদের ক্ষেত্রে তা নগদে মেটানো সমস্যা হচ্ছিল। নিজের পরিচিতি কাজে লাগিয়ে টাকা কমানোর চেষ্টা করেছি। নিজের দুটি গাড়িও দিয়েছি পড়ুয়াদের সীমান্তে পৌঁছনোর জন্য। আপাতত সেই গাড়ি হাঙ্গেরি, পোল্যান্ড সীমান্তে ঘোরাঘুরি করছে। কোনও সমস্যায় পড়লেই পড়ুয়াদের মুহুর্মুহু ফোন আসছে। পৃথ্বীরাজবাবু ইউক্রেন, রাশিয়ান, পোল্যান্ডের ভাষা অনর্গল বলতে পারার জন্য সীমান্তে সমস্যা হলেই পড়ুয়ারা ফোন করছেন। নিজেই বিভিন্ন দূতাবাসে ফোন করে সমস্যা মোটচ্ছেন। তিনি জানান, সারারাত ক্ষেপণাস্ত্র হানার শব্দে ঘুমোতে পারেননি।
No comments