মাছ চাষে মহিলাদের স্বনির্ভর করতে হলদিয়ার গ্রাম দত্তক নেওয়ার কথা জানালেন পূর্ব মেদিনীপুরের মহাত্মা গান্ধী বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য সুব্রতকুমার দেসোমবার জাতীয় বিজ্ঞান দিবসে প্রযুক্তিগত সহায়তা দিয়ে মাছ চাষে মহিলাদের স্বনির্ভর করতে …
মাছ চাষে মহিলাদের স্বনির্ভর করতে হলদিয়ার গ্রাম দত্তক নেওয়ার কথা জানালেন পূর্ব মেদিনীপুরের মহাত্মা গান্ধী বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য সুব্রতকুমার দে
সোমবার জাতীয় বিজ্ঞান দিবসে প্রযুক্তিগত সহায়তা দিয়ে মাছ চাষে মহিলাদের স্বনির্ভর করতে হলদিয়ার গ্রাম দত্তক নেওয়ার কথা জানালেন পূর্ব মেদিনীপুরের মহাত্মা গান্ধী বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য সুব্রতকুমার দে। ক্লাসরুমের বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির জ্ঞান মাঠে পৌঁছতে সামাজিক দায়বদ্ধতা কর্মসূচিতে এধরনের উদ্যোগ নিচ্ছে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। মৎস্যদপ্তরের সঙ্গে যৌথভাবে বিশ্ববিদ্যালয় এ কাজ করবে। এজন্য বন্দর শহর লাগোয়া হলদিয়া ব্লকের শিবরামনগর ও চাউলখোলা দুটি গ্রাম চিহ্নিত করা হয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয় ও মৎস্যদপ্তরের মিলিত প্রয়াসে এখানে মহিলাদের মাছচাষের মাধ্যমে ‘আদর্শ মৎস্যগ্রাম’ গড়ে তোলার পরিকল্পনা করা হয়েছে। এজন্য একশোভাগ বাড়ির পুকুরকে কাজে লাগানো হবে। একদিকে গ্রামের মহিলাদের প্রশিক্ষণ দিয়ে আয়ের উপায় খুঁজে দিতে কাজ করবেন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ও মৎস্য বিশেষজ্ঞরা, অন্যদিকে পড়ুয়ারা এই মডেলকে গবেষণার কাজে লাগাবেন।
মহিলাদের মাছচাষে উৎসাহী করতে করোনার সময় থেকে উদ্যোগ নিয়েছে হলদিয়া ব্লক মৎস্য দপ্তর ও পঞ্চায়েত সমিতি। পঞ্চায়েত সমিতির মৎস্য কর্মাধ্যক্ষ ও স্থানীয় বাসিন্দা গোকুল মাজি বলেন, হলদিয়া ব্লকের দেভোগের এই গ্রামগুলি আর্থিক দিক থেকে সচ্ছ্বল। প্রায় প্রতিটি পরিবারের নিজস্ব পুকুর রয়েছে। কিন্তু বেশিরভাগ পুকুরই অব্যবহৃত অবস্থায় রয়েছে। এই এলাকার বেশিরভাগ পরিবারের লোকজন বিভিন্ন কলকারখানায় কাজ করেন। ভিনরাজ্যে ও বিদেশেও কাজ করতেন। করোনার সময় অনেকে কাজ হারিয়ে বাড়ি ফিরে চাষবাসে মন দেন। বিশেষ করে এখানে মাছ চাষে উদ্যোগী হয়েছেন অনেকে।
মৎস্য দপ্তর উদ্যোগ নিয়েছে, গ্রামের পুরুষরা ফের কাজে চলে গেলেও মহিলাদের প্রশিক্ষণ দিলে মাছের চাষ বন্ধ হবে না। বরং এর ফলে বাড়িতে বসেই আয়ের পথ খুলে যাবে মহিলাদের কাছে। সেজন্য স্বনির্ভর গোষ্ঠীগুলিকে ঋণ দিয়ে মাছ চাষে উৎসাহিত করার উদ্যোগ নিয়েছে মৎস্য দপ্তর। বিশ্ববিদ্যালয় এঁদের পাশে দাঁড়ানোর উদ্যোগ নেওয়ায় খুশি স্থানীয় বাসিন্দারা।
হলদিয়া ব্লকের মৎস্য সম্প্রসারণ আধিকারিক সুমনকুমার সাহু বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য সুব্রতকুমার দে দুটি গ্রাম ঘুরে গ্রামের মহিলাদের সঙ্গে কথাবার্তা বলেছেন। উপাচার্য নিজে জীববিজ্ঞানী হওয়ায় তিনি আরও বেশি উৎসাহী। চাউলখোলা গ্রামে তিন বছর আগে মাছচাষি সুব্রতকুমার মাইতি ‘নীল বিপ্লব’ প্রকল্পে একটি হ্যাচারি তৈরি করেছেন। কেন্দ্র ও রাজ্য সরকারের যৌথ সহযোগিতায় ২৫ লক্ষ টাকা ব্যয়ে তৈরি এই হ্যাচারি এখন হলদিয়া মহকুমার ডিমপোনা ও চারাপোনার চাহিদা মেটাচ্ছে। এখানে আমুর মাছ সহ বিভিন্ন ধরনের কার্প জাতীয় মাছ ও মাগুর সহ বিভিন্ন দেশি মাছের প্রজনন বা ব্রিডিং করানো হয়। ওই চাষির স্ত্রীও ভুবনেশ্বরে কেন্দ্রীয় সংস্থা সিফা থেকে মাছ প্রজনন ও চাষের আধুনিক কৌশল শিখে এসেছেন। হাতের কাছে হ্যাচারি থাকায় এবার গ্রামের মহিলাদের মাছ চাষে স্বনির্ভর করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এক্ষেত্রে প্রযুক্তিগত সহায়তা মিলবে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে।
মৎস্য দপ্তর জানায়, ইতিমধ্যেই সোপান, সপ্তদীপা ও সহসা নামে তিনটি স্বনির্ভর গোষ্ঠী তৈরি হয়েছে মাছ চাষের জন্য। নিজেদের পুকুরে মাছ চাষের জন্য এদের চারাপোনা ও মাছের খাবার দেওয়া হয়েছে মৎস্যদপ্তর থেকে। কীভাবে মাছ চাষের মাধ্যমে রোজগার বাড়বে, বাড়িতে পুষ্টির জোগান হবে তা নিয়ে বৈঠকি আড্ডার মাধ্যমে আলোচনা চলছে। এর মাধ্যমে তাঁরা সমস্যার কথা সহজে বলতে পারছেন। উপাচার্য সুব্রতবাবু জানান, মার্চ মাসে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ ও মৎস্য দপ্তরের বিশেষজ্ঞদের নিয়ে প্রশিক্ষণ শিবির করা হবে। ওই গ্রামের মহিলাদের মাছ চাষে আগ্রহ রয়েছে। বেশ কয়েকজন সাফল্যের সঙ্গে একাজ করছেন। আরও মহিলারা যাতে যুক্ত হয়ে একটি সামাজিক অর্থনৈতিক পরিবর্তন হয় কমিউনিটি ইন্টারঅ্যাকশনের মাধ্যমে সে কাজ করবে মহাত্মা গান্ধী বিশ্ববিদ্যালয়।
সোমবার মহিষাদলে মহাত্মা গান্ধী বিশ্ববিদ্যালয়ে জাতীয় বিজ্ঞান দিবস উদযাপন করা হল। এই উপলক্ষে পড়ুয়াদের নিয়ে আলোচনা সভা, দুই বিজ্ঞানী ডারউইন ও সি ভি রমনকে শ্রদ্ধা জানানো হয়। এদিন বিজ্ঞান দিবস উপলক্ষে বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যালেন্ডার প্রকাশ করেন উপাচার্য সুব্রতকুমার দে। তিনি জানান, বিশ্ববিদ্যালয়ে বিজ্ঞানের নতুন কোর্স চালু হবে শীঘ্রই। এনিয়ে আলোচনা চলছে। এদিন বিজ্ঞান দিবসের অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন মহিষাদল রাজ কলেজের অধ্যক্ষ অসীমকুমার বেরা ও অন্যান্য অধ্যাপকগণ।
No comments