Page Nav

HIDE

Grid Style

GRID_STYLE

Post/Page

Weather Location

Breaking News:

latest

জন্মদিনে এই মহান বিজ্ঞানীকে শ্রদ্ধা -: দেবস্মিতা মণ্ডল

জন্মদিনে এই মহান বিজ্ঞানীকে শ্রদ্ধা -: দেবস্মিতা মণ্ডল'ধর্মীয় বুলি নয়, সত্য কেবল বিজ্ঞান' আজ তাঁর জন্মদিন আজ থেকে ৪৫০ বছরেরও বেশি আগের কথা। ইতালিতে তখন ধর্মযাজকদের রাজত্ব। সেই সময় ১৫৬৪ খ্রিস্টাব্দে পিসা শহরে জন্ম নিলেন…

 



জন্মদিনে এই মহান বিজ্ঞানীকে শ্রদ্ধা -: দেবস্মিতা মণ্ডল

'ধর্মীয় বুলি নয়, সত্য কেবল বিজ্ঞান' আজ তাঁর জন্মদিন 

আজ থেকে ৪৫০ বছরেরও বেশি আগের কথা। ইতালিতে তখন ধর্মযাজকদের রাজত্ব। সেই সময় ১৫৬৪ খ্রিস্টাব্দে পিসা শহরে জন্ম নিলেন এক বালক, বলা ভালো মধ্য যুগের অন্ধবিশ্বাসের বিরুদ্ধে বিদ্রোহী এক পথপ্রদর্শক। 


ছোটো থেকেই তিনি সব কিছুকে যুক্তির কষ্ঠিপাথরে বিচার করে নিতেন। তাঁর বাবাও ছিলেন মুক্তমনা, প্রগতিশীল কিছুটা বিদ্রোহীও। এমনকি ছাত্রাবস্থায়ই তিনি পেয়েছিলেন উচ্চকলরবকারী উপাধি। বাবার পুত্র সেরকমই হবে সেটাই স্বাভাবিক। প্রথম জীবনে বাবা আর গৃহশিক্ষকের কাছেই হাতেখড়ি হয় ছেলের। ১৭ বছর বয়সে বাবা, ছেলেকে ডাক্তারি পড়ানোর উদ্দেশ্যে পিসার একটি বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি করান। কিন্তু ছেলের ছিল গণিত আর দর্শনশাস্ত্রের প্রতি টান। নিজের ক্লাস ফাঁকি দিয়ে অঙ্কের ক্লাসের দরজার বাইরে দাঁড়িয়ে থাকতেন তিনি। শিক্ষক কী পড়াচ্ছেন তা শোনার চেষ্টা করতেন। যেটুকু বুঝতেন না, ক্লাসের শেষে শিক্ষক বা ওই ক্লাসের ছাত্রদের ধরে বুঝে নেবার চেষ্টা করতেন। এইভাবেই চলত তাঁর অঙ্ক শেখা। যথারীতি নিজের পাঠ শেষ না করেই এই বালক বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বাড়ি ফিরে আসেন। 


বাড়ি ফিরে অঙ্ক এবং সাধারন বিজ্ঞানে প্রাইভেট পড়িয়ে তিনি রোজগার করতে শুরু করেন। এইসময়ই তিনি বলেন, 'যতগুলো পূর্ণ সংখ্যা রয়েছে, বর্গ সংখ্যাও ঠিক ততগুলোই থাকবে।’ সংখ্যা ও বর্গ সংখ্যা নিয়ে গ্যালিলিওর এই মতবাদ গণিতের ইতিহাসে একটি বিস্ময় হয়ে রয়েছে। এই মতবাদটি ‘গ্যালিলিও কূটাভাস’ নামে পরিচিত। বুঝতেই পারছেন আজ কথা বলছি মহান বিজ্ঞানী গ্যালিলিও গ্যালিলিকে নিয়ে।


তিনি এ সময় তাঁর একটি গবেষণা ‘দ্য লিটল ব্যাল্যান্স’ প্রকাশ করেন, যার মধ্যে তিনি ছোট ছোট বস্তু পরিমাপের 'হাইড্রোস্ট্যাটিক নীতি' বর্ণনা করেন। তার এই গবেষণা জনপ্রিয়তা পায়। পড়ানোর জন্য ডাক পান পিসা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে।


যে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে কোনও ডিগ্রি না নিয়েই গ্যালিলিও চলে গিয়েছিলেন সেই পিসা বিশ্ববিদ্যালয়েই চার বছর পরে ১৫৮৯ খ্রিস্টাব্দে তিন বছরের চুক্তিতে গণিতের শিক্ষক হয়ে ফিরে আসেন তিনি। পিসা বিশ্ববিদ্যালয়ের পাঠক্রম তৈরি হয়েছিল অ্যারিস্টট্‌লের মতবাদকে ভিত্তি করে। ধারণা নির্ভর এইসব মতবাদের সত্যতা সম্পর্কে গ্যালিলিওর ছাত্রাবস্থা থেকেই সন্দেহ ছিল। ফলে অন্যান্য শিক্ষকদের সঙ্গে প্রায়ই তাঁর যুক্তিতর্ক বেঁধে যেত। তখনকার সমাজ অ্যারিস্টটল মতবাদকেই শেষ কথা বলে মানত। 


অ্যারিস্টটলের মতে, ওপর থেকে একটি ভারী ও হালকা বস্তুকে এক সঙ্গে ফেললে ভারী বস্তুটাই আগে মাটিতে এসে পড়বে। ১০০ পাউন্ড ওজনের কোনও বস্তু এক পাউন্ড ওজনের বস্তুর তুলনায় ১০০ গুণ দ্রুততর বেগে নেমে আসবে। গ্যালিলেও বললেন, তত্ত্বটা ভুল, দুটোই একই সঙ্গে সমান বেগে পড়বে। বহু দর্শকের সামনে পিসার ১৮০ ফুট উঁচু হেলানো টাওয়ার থেকে সমান আয়তনের হালকা ও ভারী ধাতুর বল এক সঙ্গে ছেড়ে দিয়ে হাতেনাতে সেটা প্রমাণও করে দিলেন। এর পর থেকেই অ্যারিস্টটলের তত্ত্বের খোলাখুলি 


সমালোচনা শুরু করেন গ্যালিলেও। এতে তিনি কোনওদিনই বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্তৃপক্ষের সুনজরে এলেন না। তাই চুক্তির মেয়াদ শেষ হওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই কর্তৃপক্ষ গ্যালিলিওকে জানিয়ে দেন, তাঁর সঙ্গে আর নতুন করে কোনও চুক্তি করা হবে না। 

তিনি ফিরে যান নিজের এলাকায়। কিছুদিনের মধ্যেই তিনি ১৫৯২ খ্রিস্টাব্দে যোগ দেন পাদুয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে। এখানে তিনি বলবিদ্যা, জ্যামিতি এবং জোতির্বিদ্যা পড়াতেন। এই বিশ্ববিদ্যালয়েই ১৮ বছর শিক্ষকতা করেন গ্যালিলিও। এইসময়েই তাঁর একের পর এক আবিষ্কার শুরু হয়। ১৫৯৩ সালে তিনি থার্মোমিটার আবিষ্কার করেন। এরপর আবিষ্কার করেন পেন্ডুলাম দোলনের নিয়ম। 

হল্যান্ডের এক চশমা ব্যবসায়ী হান্‌স লিপারশে একটি চোঙের দুদিকে দুটো চশমার কাঁচ লাগিয়ে তৈরি করেছিলেন ‘লুকার’ বা ‘দেখার যন্ত্র’। একেই প্রাথমিক টেলিস্কোপ বা দূরবীক্ষণ যন্ত্র বলা হয়ে থাকে। গ্যালিলিও উচ্চক্ষমতাসম্পন্ন দূরবীক্ষণ যন্ত্র আবিষ্কার করে সেই দিয়েই মহাকাশ পর্যবেক্ষণ করতে লাগলেন। আবিষ্কার করলেন বৃহস্পতির চারটি উপগ্রহ, শুক্র গ্রহ সূর্যের চারপাশে ঘোরে এবং সৌরকলঙ্ক। চাঁদে যে, পাহাড় আছে বললেন তাও। স্বর্গ বলে কিছু নেই, সব কাল্পনিক সেটাও জানালেন। আকাশ পর্যবেক্ষণের সকল তথ্য নিয়ে লিখলেন বই, Starry Messenger। এখানেই তিনি অ্যারিস্টটল এবং টলেমির 'পৃথিবীকে কেন্দ্র করে সব হচ্ছে' এই মতবাদ নস্যাৎ করে দেন। পাশাপাশি কোপার্নিকাসের সূর্যকেন্দ্রিক মতবাদকে সমর্থন জানান। 


অন্যদিকে, প্রায় একই সময়ে ইংল্যান্ডে হ্যারিয়ট, হল্যান্ডে জন ফ্যাব্রিসিয়াস এবং জার্মানিতে জেসুইট শিনার স্বাধীনভাবে সৌরকলঙ্ক নিয়ে গবেষণা শুরু করেন। কে সৌরকলঙ্কের আসল আবিষ্কারক সেই নিয়ে বাঁধল ঝামেলা। শেষমেষ আবিষ্কারকের মুকুট ছিনিয়ে নিলেন গ্যালিলিও। এতে তাঁর শত্রু হয়ে উঠলেন বাকিরা। 


সৌরকলঙ্ক নিয়ে তিনি প্রকাশ করলেন সবচেয়ে বিখ্যাত বই 'ডায়ালগ' (Dialogue concerning two chief systems of the world)। তাঁর এই বই প্রকাশের সঙ্গে সঙ্গে ভেঙে পড়তে থাকে দীর্ঘদিনের ধর্মান্ধতা ও কুসংস্কারের প্রাসাদ। আগে থেকেই ছিল এবার আরও বেশি করে ধর্মান্ধরা সোচ্চার হতে থাকে তাঁর বিরুদ্ধে। বইটি ছিল বিশ্বকাঠামো সম্পর্কে তিন বন্ধুর সংলাপ। 'ডায়ালগ' বইটি লিখে বাইবেলের অবমাননা করেছেন গ্যালিলিও, শুরু হল এই প্রচার। সেই দলে ছিলেন জেসুইট শিনারও। ইনার সঙ্গেই সৌরকলঙ্কের আবিষ্কার নিয়ে ঝামেলা বেঁধেছিল গ্যালিলিওর। ইনি এই প্রতিশোধের সুযোগ ছাড়বেন কেন! 

কথা কানে গেল পোপের। বিতর্ক এমন চরমে পৌঁছল যে গ্যালিলিওকে রোমে ডেকে পাঠানো হল। বিচারে যাবজ্জীবন কারাদন্ডের আদেশ হয় বিজ্ঞানীর এবং তাঁর লেখা সমস্ত বই নিষিদ্ধ বলে ঘোষণা হয়। তখন তিনি প্রায় ৭০ বছরের বৃদ্ধ। এরপর গ্যালিলিওর শেষ জীবন কেটেছে বন্দিদশায়, তাঁর বাড়িতেই। শেষে মৃত্যু হয় সেখানেই। 


গ্যালিলিওর বন্দিদশার পরও তাঁর বিজ্ঞান ভাবনা নিয়ে গবেষণা থেমে থাকেনি। তা চলেছে পরবর্তী প্রজন্মের হাত ধরে। ধর্ম ধামাচাপা দিয়ে রাখতে পারেনি বিজ্ঞানের সত্যিকে। আজ সকলেই স্বীকার করে নিয়েছে তিনি যা আবিষ্কার করে গিয়েছেন তার এক কণাও মিথ্যে নয়।


No comments