Page Nav

HIDE

Grid Style

GRID_STYLE

Post/Page

Weather Location

Breaking News:

latest

ব্রেকিং!! সুরের আকাশে ফের নক্ষত্র পতন! চলে গেলেন বাপ্পি লাহিড়ী

সুরের আকাশে ফের নক্ষত্র পতন! চলে গেলেন বাপ্পি লাহিড়ী
সুরের আকাশে ফের নক্ষত্র পতন। মাঝে সময়ের ব্যবধান মাত্র ঘণ্টা চারেক। গীতশ্রী সন্ধ্যা মুখোপাধ্যায়ের পর এবার সঙ্গীতশিল্পী তথা সুরকার বাপ্পি লাহিড়ী। বয়স হয়েছিল ৬৯। গতকাল, মঙ্গলবার …

 


সুরের আকাশে ফের নক্ষত্র পতন! চলে গেলেন বাপ্পি লাহিড়ী


সুরের আকাশে ফের নক্ষত্র পতন। মাঝে সময়ের ব্যবধান মাত্র ঘণ্টা চারেক। গীতশ্রী সন্ধ্যা মুখোপাধ্যায়ের পর এবার সঙ্গীতশিল্পী তথা সুরকার বাপ্পি লাহিড়ী। বয়স হয়েছিল ৬৯। গতকাল, মঙ্গলবার রাত ১১টা নাগাদ জুহুর ব্রিচ ক্যান্ডি হাসপাতালে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন তিনি। গত বছর এপ্রিল মাসে করোনা আক্রান্ত হয়েছিলেন ‘ডিস্কো কিং’। করোনামুক্তও হয়েছিলেন। কিন্তু এরপর থেকেই শরীরে নানা সমস্যা দেখা দেয় তাঁর। হয়ে পড়েছিলেন প্রায় শয্যাশায়ী।  পরিবার সূত্রে খবর, তাঁর চলাফেরার জন্য বাড়িতে দ্রুত লিফ্টও বসানো হয়। সে সময় জুহুর বাংলোয় সম্পূর্ণ বিশ্রামে ছিলেন বাপ্পি। তবে হাঁটাচলা বেশি করতে পারতেন না তিনি। ব্যবহার করতেন হুইল চেয়ারও।  শারীরিক অবস্থার অবনতি হওয়ায় গত মাসখানেক ধরে ভর্তি ছিলেন হাসপাতালে। গত সোমবার হাসপাতাল থেকে ছুটিও মিলেছিলে। কিন্তু মঙ্গলবার ফের শারীরিক অবস্থার অবনতি হওয়ায় নিয়ে আসা হয় হাসপাতালে। কিন্তু চিকিৎসকদের সকল প্রচেষ্টাকে ব্যর্থ করে গতকাল রাতেই অবস্ট্রাকটিভ স্লিপ অ্যাপনিয়াতে আক্রান্ত হয়েই অনুরাগীদের ‘আলবিদা’ বলে সুরলোকে চলে গেলেন ‘… কভি আলবিদা না কহেনা…’ র সুরকার।

গীতশ্রী সন্ধ্যা মুখোপাধ্যায়ের মৃত্যুর ধাক্কা এখনও কাটিয়েই উঠতে পারল না বাঙালি। তার মাঝেই বুধবার সাত সকালে আবর সাগরের পার থেকে এল বাপ্পি লাহিড়ীর মৃত্যুসংবাদ । মুম্বইয়ের ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রিতে যে সকল বাঙালি দাপটের সঙ্গে কাজ করেছেন তাঁদের মধ্যে চীরকাল একদম উপরের সারিতেই থাকবেন আশির দশকে বলিউড মিউজিক ইন্ডাস্ট্রির দিশা বদলে দেওয়া এই বাঙালি। বলিউডে ‘ডিস্কো ডান্সার’, ‘চলতে চলতে’, ‘শরাবি’, ‘হিম্মতওয়ালা’, ‘নমক হালাল’ ‘ডান্স ডান্স’, ‘কম্যান্ডো’ আর বাংলায় ‘অমর সঙ্গী’, ‘আশা ও ভালবাসা’,  ‘আমার তুমি’, ‘অমর প্রেম’, ‘গুরুদক্ষিণা’, ‘ওগো বধু সুন্দরী’ সহ বহু ছবিতে সুর দিয়েছেন তিনি। গেয়েছেন বহু গানও। তাঁর গলায়  ‘চিরদিনই তুমি যে আমার… গানটি তো বাংলা ফিল্মি গানের একটি মাইলস্টোনই হয়ে গিয়েছে। আবার পাশাপাশি ‘মঙ্গলদ্বীপ জ্বেলে’ গানটি প্রার্থনা সঙ্গীত হিসেবে এক অনন্য জায়গা নিয়ে রয়েছে বাঙালিদের হৃদয়ে। অন্যদিকে, হিন্দিতে ইয়ার বিনা চ্যান কাঁহা রে, রাম্মা হো, আই অ্যাম এ ডিস্কো ডান্সার, ইয়াদ আ রাহা হ্যায়, দে দে প্যায় দে, ‘কে পগ ঘুঙড়ু বাঁধ মীরা’, কই ইঁহা আহা নাচে নাচে, হরি ওম হরি, তাম্মা তাম্মা লোগে, চলতে চলতে মেরে ইয়ে গীত ইয়াদ রাখনা, মঞ্জিলে আপনি জাগা’, ছুঁ কর মেরে মন কো, উ লালা উ লালা সহ অগুন্তি সুপার-ডুপার গান চীরকাল সঙ্গীতপ্রেমীদের হৃদয়ে অমর হয়ে থাকবে। শুধু ডিস্কোই নয় গজল গানও রচনা করেছেন তিনি। তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হল কিসি নজর কো তেরা ইন্তেজার আজ ভি হ্যায় (এইতবার); আওয়াজ দি হিয়া (এইতবার)।

১৯৫২ সালের ২৭ নভেম্বর জলপাইগুড়িতে জন্ম বাপ্পী লাহিড়ীর। সম্পর্কে কিশোরকুমার ছিলেন বাপ্পি লাহিড়ীর মামা। বাবা অপরেশ লাহিড়ী ও মা বাঁশরী লাহিড়ী দু’জনেই ছিলেন সঙ্গীত জগতের মানুষ। তাঁদের হাত ধরেই সঙ্গীত জগতে পথ চলা শুরু বাপ্পির। বাবা-মা সাধ করে নাম রেখেছিলেন অলোকেশ । কিন্তু গোটা বিশ্বই তাঁকে একনামে বাপ্পী বলেই চেনে। গোড়ায় গান নয় বরং তবলা বাজিয়ে হিসেবেই হাতে খড়ি বাপ্পির। এরপর মাত্র ১৯ বছর বয়সেই মুম্বইয়ে পাড়ি জমান। আমির খানের বাবা তাহির হুসেনের ‘জখমি’র সঙ্গে বলিউডের সংগীত জগতে আত্মপ্রকাশ দাপটের সঙ্গে করেন এই বাঙালি সংগীত শিল্পী। এরপর ৭০-৮০ দশকে একের পর হিট গান বলিউডে সঙ্গীত কম্পোজার হিসেবে তাঁকে শীর্ষে তুলে দেয়। ২০২০ সালে ‘বাগি- ৩’ ছবির ‘ভাঙ্গাস’ বাপ্পিদা কম্পোজ করা শেষ গান।  সোনার প্রতি আজীবন অসম্ভব দুর্বলতা ছিল বাপ্পিদার। সবসময় প্রচুর সোনার গহনায় সজ্জিত হয়েই দেখা যেত তাঁকে।

বহু সম্মান ও পুরস্কার পেয়েছেন বলিউডের এই ডিস্কো কিং। পশ্চিমবঙ্গ সরকার তাঁকে ২০১২ সালে বিশেষ চলচ্চিত্র পুরস্কার, ২০১৫ সালে স্পেশ্যাল লাইফ টাইম অ্যাওয়ার্ড, ২০১৬ সালে মহানায়ক সম্মান ও ২০১৭ সালে ‘বঙ্গবিভূষণ’ সম্মাণে ভূষিত করে। এছাড়া শরাবি ছবির সুরকার হিসেবে ১৯৮৫ সালে বেস্ট মিউজিক ডিরেক্টরের ফিল্ম ফেয়ার অ্যাওয়ার্ড  ২০১৮ সালে লাইফ টাইম অ্যাচিভমেন্ট ও ২০১২ সালে বেস্ট আইটেম সঙ অফ দ্যা ইয়ারের মির্চি মিউজিক অ্যাওয়ার্ডও পান।  শুধু তাই নয়, ১৯৮৬ সালে ৩৩টি ছবিতে ১৮০টি গানের সঙ্গীত পরিচালনার জন্য গিনেস বুক অফ ওয়ার্ল্ড রেকর্ড-এ নাম ওঠে বাপ্পীদার। ১৯৮৯ সালে বিবিসি লন্ডনে লাইভ পারফর্মেন্সের ডাক পান জোনাথান রসের থেকে। এক্ষেত্রেও তিনিই ছিলেন একমাত্র ভারতীয় মিউজিক ডিরেক্টর। বাপ্পি লাহিড়ীর অসাধারণ প্রতিভাকে কুর্নিশ জানিয়েছিল হলিউডও। একটি হলিউডি ছবিতে ব্যবহার করা হয়েছে তাঁর গান জিমি জিমি আজা আজা।

২০১৪ সালে রাজনৈতিক মঞ্চেও অবতরণ করেন তিনি। শ্রীরামপুর লোকসভা কেন্দ্র থেকে একবার ভোটেও লড়েন তিনি। তবে রাজনীতিতে তিনি কখনই স্বচ্ছন্দ ছিলেন না।  নভেম্বর মাসে ‘সারেগামাপা’র মঞ্চে হাজির হয়েছিলেন বাপ্পি লাহিড়ী। শেষবার তিনি প্রকাশ্যে আসেন সলমন খানের 'বিগ বস' ১৫-র মঞ্চে। নাতি স্বস্তিকের গান ‘বাচ্চা পার্টি’র প্রচারে সেখানে পৌঁছেছিলেন বাপ্পি লাহিড়ী। শোক জ্ঞাপন করেছেন চলচ্চিত্রে রাষ্ট্রপতি পুরস্কার প্রাপ্ত শেখ মজাফফর।

 

No comments