সরস্বতী পুজোয় কোভিডের আগের চেনা চেহারায় ফিরল বন্দরশহর, সুতাহাটার ‘সরস্বতী গ্রাম’ থেকে মহিষাদল রাজবাড়ি। আকাশ মেঘমুক্ত হয়ে রোদ উঁকি মারতেই শহর ও লাগোয়া গ্রামাঞ্চলের স্কুল ও পাড়ার পুজো মণ্ডপে পুষ্পাঞ্জলি দিতে ভিড় করল নানা বয়সের…
সরস্বতী পুজোয় কোভিডের আগের চেনা চেহারায় ফিরল বন্দরশহর, সুতাহাটার ‘সরস্বতী গ্রাম’ থেকে মহিষাদল রাজবাড়ি। আকাশ মেঘমুক্ত হয়ে রোদ উঁকি মারতেই শহর ও লাগোয়া গ্রামাঞ্চলের স্কুল ও পাড়ার পুজো মণ্ডপে পুষ্পাঞ্জলি দিতে ভিড় করল নানা বয়সের পড়ুয়া। পুষ্পাঞ্জলির পর বন্ধুদের নিয়ে সেলফি তোলার ধুম পড়ে যায় মণ্ডপের সামনে। কখনও শিক্ষক-শিক্ষিকারাও হাজির সেই সেলফিতে। কোথাও সরস্বতীর প্রসাদ শুধু ফলমূল, কোথাও লুচি-সুজি, কোথাও আবার পাতপেড়ে খিচুড়ি আলুর দম, চাটনি সহযোগে ভোগ প্রসাদ বিতরণ হল দেদার। কোভিডের বেড়াজাল থেকে মুক্তির স্বাদ পেতে বাগদেবীর আশীর্বাদ নিয়েই যেন আনন্দে মশগুল হয়ে উঠল পড়ুয়ারা। বেলা বাড়তেই তা হয়ে উঠল বাঙালির ‘ভ্যালেন্টাইন্স ডে’। বাইকে কিংবা টোটো চেপে কেউ নিরুদ্দেশ হল হলদি নদীর তীরে টাউনশিপ রিভার ড্রাইভের ভিড়ে, কেউবা মহিষাদল রাজবাড়িতে।
করোনার পর এবার ফের থিমের সরস্বতী পুজোয় মাতোয়ারা হয়েছে সুতাহাটার অনন্তপুর, জামালচক সহ কয়েকটি গ্রাম। একদিনের সরস্বতী পুজো নয়, এখানকার মানুষজন উদযাপন করেন চারদিনের সারস্বত উৎসব। ঋষি অরবিন্দ, নেতাজি পাঠাগার, আমরা সবাই, চিরনবীন, বাণীশ্রী, সাথী, দিশারির মতো ১০-১২টি বড় পুজো কমিটির থিমের সরস্বতী দেখতে ভিড় করছেন মানুষ। বাজেট আগের তুলনায় অনেক কম হলেও এবার যেন সারস্বত উৎসবের হাত ধরেই মহামারী থেকে মুক্তির স্বাদ পেতে চাইছেন গ্রামের মানুষ। ঋষি অরবিন্দ ক্লাবের পুজোর থিম ডিজিটাল ইন্ডিয়া। জামালচক নেতাজি পাঠাগারের রেশমের সুতোর প্রতিমা তৈরি করেছেন ইছাপুরের শিল্পী সুভাষ জানা ও কালীপদ জানা। আমরা সবাই ক্লাবে আশাকর্মীর আঙ্গিকে প্রতিমা নজর কাড়ছে।
শিক্ষক জয়দেব পাল বলেন, বৃষ্টির জন্য ক্লাবের উদ্যোক্তারা সবাই খুব চিন্তায় ছিলেন। তবে মেঘ কাটতেই এদিন সকাল থেকে ভিড় শুরু হয়েছে। স্থানীয়
ক্লাব সংগঠক সুমনকল্যাণ মিশ্র বলেন, প্রতিবার এই পুজোর দিকে তাকিয়ে থাকে সারা গ্রাম। দু’বছর তেমন ভিড় না হওয়ায় মনখারাপ ছিল সবার। এবার দুপুর থেকেই তরুণ তরুণীদের ভিড় বেড়েছে। হলদিয়া শহরের স্কুলগুলিতে সরস্বতী পুজো উপলক্ষে পড়ুয়ারা নিজেরাই সুন্দর করে সাজিয়েছে মণ্ডপ। হলদিয়ার দুর্গাচক পুনর্বাসন হাইস্কুলে পড়ুয়ারা স্কুল চত্বরে গ্রামের কুটিরের আদলে মণ্ডপ তৈরি করেছে। হলদিয়া ইন্সটিটিউট অব ফার্মেসি কলেজের প্রিন্সিপাল সুমন পট্টনায়ক বলেন, দু’বছর পর ফের সরস্বতী পুজো হল। অনেকদিন পর একসঙ্গে সবাইকে পেয়ে পড়ুয়া, শিক্ষক সবাই খুশি।
এদিন মহিষাদল কলেজ পাড়া, সিনেমা মোড়, রাজবাড়ি চত্বর সরস্বতী পুজো উপলক্ষে কার্যত উৎসবের চেহারা নেয়। নতুন শাড়ি, গয়নার অপরূপ সাজে মেয়েদের আর পাঞ্জাবিতে ছেলেদের নিউ লুক। দিনভর বন্ধুত্ব ও ভালবাসার নতুন আখ্যান রচিত হয় মহিষাদল ফুলবাগ প্যালেস বা গোপালজিউর মন্দিরকে সাক্ষী রেখে। মহিষাদল ছাত্র সমন্বয় কিংবা রাজ কলেজের পুজোয় পড়ুয়াদের উচ্ছ্বাস ও উন্মাদনা ছিল দেখার মতো। মহিষাদল শিল্পকৃতী নাট্যসংস্থার পুজোয় ভিড় জমালেন বিভিন্ন এলাকার নাট্যকর্মীরা। সৌম্যশ্রী আর্ট এন্ড কালচার নৃত্য আকাদেমির সরস্বতী বন্দনায় শিক্ষক শিক্ষার্থী ছাত্রছাত্রীরা ভিড় জমান তাদের বিদ্যালয়। চৈতন্যপুর বাজিতপুর সারদামণি গার্লস হাইস্কুল চত্বরে সরস্বতী পুজোর দিন সারদা মায়ের মন্দির হয়ে উঠল পড়ুয়াদের সেলফি জোন। প্রধান শিক্ষিকা সুমনা পাহাড়ি কে মধ্যমণি করে সেলফি তুললেন প্রাক্তনীরা।
এদিন সন্ধ্যায় হলদিয়া টাউনশিপের আবাসনে বন্দরের প্রাক্তন জেনারেল ম্যানেজার অমল দত্তের পরিচালনায় কচিকাঁচাদের ‘নন্টেফন্টে’ নাটক নজর কাড়ল সবার।
No comments