হলদিয়া বন্দর থেকে উত্তর-পূর্ব ভারতে পণ্য চলাচলের ক্ষেত্রে নদীপথ শুধু বিকল্প রুট নয়, এই যোগসূত্র ভারত-বাংলাদেশ মৈত্রী দৃঢ় করতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নিচ্ছে।
বাংলাদেশের জলপথ ব্যবহার করে আসাম সহ ভারতের উত্তর-পূর্ব রাজ্যগুলিতে নিয়মিত …
হলদিয়া বন্দর থেকে উত্তর-পূর্ব ভারতে পণ্য চলাচলের ক্ষেত্রে নদীপথ শুধু বিকল্প রুট নয়, এই যোগসূত্র ভারত-বাংলাদেশ মৈত্রী দৃঢ় করতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নিচ্ছে।
বাংলাদেশের জলপথ ব্যবহার করে আসাম সহ ভারতের উত্তর-পূর্ব রাজ্যগুলিতে নিয়মিত পণ্য যাতায়াত শুরু হওয়ায় দুই দেশের মধ্যে বন্ধুত্ব আরও পাকাপোক্ত হচ্ছে। কারণ, দু’দেশের অভ্যন্তরীণ নদীপথ ব্যবহারের ফলে অর্থনৈতিক সুবিধে লাভ করছে দুই দেশই । দু’দেশের অভ্যন্তরীণ জলপথ অর্থাৎ ইন্দো-বাংলাদেশ প্রোটোকল রুট এখন দু’দেশের জিও পলিটিক্যাল বা ভূ-কূটনৈতিক সম্পর্ক দৃঢ় করার মূল চাবিকাঠি হয়ে উঠেছে বলে মন্তব্য করলেন কেন্দ্রীয় জাহাজমন্ত্রী সর্বানন্দ সোনেওয়াল। বুধবার হলদিয়া বন্দরে প্রোটোকল রুটের মাধ্যমে উত্তর-পূর্ব ভারতে নিয়মিত পণ্য চলাচল পরিষেবার সূচনা করে তিনি বলেন, এই জলপথ দু’দেশের কাছেই ‘উইন-উইন সিচুয়েশন’ তৈরি করেছে।
উত্তর-পূর্ব ভারতের উন্নয়নে সড়ক, রেলপথের পাশাপাশি বিকল্প হিসেবে নদীপথে পণ্য পরিবহণে গুরুত্ব বাড়াচ্ছে জাহাজমন্ত্রক। এজন্য হলদিয়া ও কলকাতা বন্দরকে পাখির চোখ করা হয়েছে। হলদিয়া বা কলকাতা থেকে উত্তর-পূর্ব ভারতের রাজ্যগুলিতে পৌঁছতে গেলে বাংলাদেশের মধ্যেকার নদীপথ ব্যবহার করতে হয়। এই রুটের একটা অংশ ইন্দো বাংলাদেশ প্রোটোকল রুট এবং অন্যটি ব্রহ্মপুত্র নদীর জাতীয় জলপথ ২। এই নদীপথে পণ্য পরিবহণের ক্ষেত্রে নাব্যতা একটি বড় সমস্যা। দীর্ঘ নদীপথে গভীরতা কম থাকায় বার্জে ৪হাজার টনের জায়গায় মাত্র দেড়-দু’হাজার টন পণ্য পরিবহণ সম্ভব হয়। নদীতে ড্রেজিং না হওয়ায় সমস্যা আরও বাড়ছে। প্রোটোকল রুটে পণ্য পরিবহণে নাব্যতা সমস্যার কথা এদিন স্বীকার করেন জাহাজ মন্ত্রী। সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, নিয়মিত পণ্য চলাচল শুরু হলে বোঝা যাবে নদীপথে কোথায় কোথায় সমস্যা হচ্ছে। সেক্ষেত্রে জায়গাগুলি চিহ্নিত করে ড্রেজিং করা হবে।
সর্বানন্দ সোনেওয়াল বলেন, পিএম গতিশক্তি প্রকল্পের আওতায় ন্যাশনাল মাস্টারপ্ল্যান ফর মাল্টিমোডাল কানেকটিভিটিতে নদীপথে পণ্য চলাচলে গুরুত্ব বাড়ানো হচ্ছে। উত্তর-পূর্ব ভারতের ক্ষেত্রে সরকারি বেসরকারি বিভিন্ন শিল্প সংস্থাকে এই রুট ব্যবহার করে পণ্য পাঠাতে উৎসাহিত করা হচ্ছে। সবাই এগিয়ে এলে লাভজনকভাবে পণ্য পরিবহণ বাড়বে। তখন আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলি নদীপথে ড্রেজিং সহ অন্যান্য পরিকাঠামো তৈরি ঋণদান বা বিনিয়োগে আগ্রহী হবে। এদিন প্রোটোকল রুট ব্যবহার করে পণ্য পরিবহণের জন্য আসামের রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থা ব্রহ্মপুত্র ক্র্যাকার পেট্রকেম বা বিসিপিএলের সঙ্গে শ্যামাপ্রসাদ মুখোপাধ্যায় পোর্ট ট্রাস্টের চুক্তি হয়েছে। অন্যদিকে দেশের বৃহত্তম বেসরকারি সংস্থা টাটাদের স্টিল এই রুটে বার্জে করে আসামের পান্ডু নদী বন্দরে রওনা দিয়েছে। আব্দুল কালাম ও কল্পনা চাওলা দুটি বার্জে ১৭৯৮টন স্টিল বোঝাই করা হয়েছে। ওই দুটি বার্জকে টেনে নিয়ে যাচ্ছে রামপ্রসাদ বিসমিল নামে একটি টাগ।
এদিন হলদিয়া বন্দরের ১৩নম্বর বার্থে পতাকা নেড়ে বার্জ দুটির যাত্রার সূচনা করেন জাহাজ মন্ত্রী সর্বানন্দ সোনেওয়াল এবং জাহাজ প্রতিমন্ত্রী শান্তনু ঠাকুর। উপস্থিত ছিলেন জাহাজ মন্ত্রকের সচিব সঞ্জীব রঞ্জন, ইনল্যান্ড ওয়াটার ওয়েজ অথরিটি অব ইন্ডিয়ার চেয়ারম্যান সঞ্জয় বন্দ্যোপাধ্যায়, টাটা স্টিলের ভাইস প্রেসিডেন্ট(সাপ্লাই চেন) পীযূষ গুপ্তা, বিসিপিএলের ম্যানেজিং ডিরেক্টর রীপ হাজারিকা, শ্যামাপ্রসাদ মুখোপাধ্যায় পোর্ট ট্রাস্টের চেয়ারম্যান বিনীতকুমার, হলদিয়া ডকের ডেপুটি চেয়ারম্যান অমলকুমার মেহেরা। টাটা স্টিলের কর্তা জানান, উত্তর-পূর্ব ভারতের দ্রুত উন্নয়ন ঘটছে, সেজন্য প্রতিমাসে ২০হাজার টন স্টিলের প্রয়োজন হয় ওই এলাকায়। রেল বা সড়কপথে স্টিল পৌঁছতে সময় ও খরচ দুই-ই বেশি লাগে। সেজন্য বিকল্প নদীপথে টাটারা হলদিয়া থেকে নিয়মিত উত্তর-পূর্ব ভারতে স্টিল পাঠাবে। এদিন জাহাজ মন্ত্রী জানান, উত্তর-পূর্ব ভারতে পণ্য পরিবহণের জন্য মায়ানমারে সেটোয়ে বন্দর তৈরি হয়েছে ভারতে সহযোগিতায়। ওই বন্দরকে এবার হলদিয়ার সঙ্গে যুক্ত করা হবে প্রোটোকল রুটকে শক্তিশালী করতে। বন্দরের চেয়ারম্যান জানান, হলদিয়া ও কলকাতা মিলিয়ে ৭০০কোটি টাকা সম্প্রতি বিনিয়োগ হতে চলেছে। আরও ৭০০কোটি টাকা শীঘ্রই বিনিয়োগ হবে দুই বন্দর ঘিরে। এরফলে রাজ্যের বন্দর বাণিজ্যের চেহারা বদলাবে।
No comments