বিহার রাজ্যের মা মুন্ডেশ্বরী দেবী মন্দির: এটি পৃথিবীর প্রাচীনতম সক্রিয় হিন্দু মন্দির ?
সূত্র: এএসআই কর্তৃক সম্প্রতি এই মন্দির ভবনটির তারিখ হিসেবে ১০৮ খ্রিস্টাব্দ নির্ধারিত হওয়ার ফলে এটি এখন পৃথিবীর প্রাচীনতম সক্রিয় হিন্দু মন্…
বিহার রাজ্যের মা মুন্ডেশ্বরী দেবী মন্দির: এটি পৃথিবীর প্রাচীনতম সক্রিয় হিন্দু মন্দির ?
সূত্র: এএসআই কর্তৃক সম্প্রতি এই মন্দির ভবনটির তারিখ হিসেবে ১০৮ খ্রিস্টাব্দ নির্ধারিত হওয়ার ফলে এটি এখন পৃথিবীর প্রাচীনতম সক্রিয় হিন্দু মন্দির হিসেবে গণ্য করা হচ্ছে।
🌺 মুন্ডেশ্বরী দেবী মন্দির (মুন্দেশভারি নামেও উচ্চারিত হয়ে থাকে) হলো ভারতের বিহার রাজ্যের সোন খালের নিকটবর্তী কাইমুর পর্বতমালার ৬০৮ ফুট (১৮৫ মি) উচ্চতা বিশিষ্ট মুন্ডেশ্বরী পাহাড়ের উপরে অবস্থিত একটি হিন্দু মন্দির। ১৯১৫ সাল থেকে ভারতীয় পুরাতত্ত্ব বিভাগ কর্তৃক সংরক্ষিত এটি একটি ঐতিহাসিক মন্দির। এএসআই কর্তৃক সম্প্রতি এই মন্দির ভবনটির তারিখ হিসেবে ১০৮ খ্রিস্টাব্দ নির্ধারিত হওয়ার ফলে এটি এখন পৃথিবীর প্রাচীনতম সক্রিয় হিন্দু মন্দির হিসেবে গণ্য করা হচ্ছে।
🌺 মন্দির এলাকায় অবস্থিত একটি তথ্য ফলকের নির্দেশিত তথ্য অনুযায়ী এই মন্দিরের অস্তিত্বের পটভূমিকা অন্তত ৬২৫ খ্রিস্টাব্দের দিকে এবং ৬৩৫ খ্রিস্টাব্দের হিন্দু ফলক এই মন্দিরে পাওয়া গিয়েছে। তার মানে, প্রায় ২৫০০-এর ও বেশি পুরোনো এই মন্দিরের পুজ্য দেবী মা মুন্ডেশ্বরীর রূপে শক্তির উপাসনা এই মন্দিরে হয়ে থাকে, এবং এটা পূর্ব ভারতীয় তান্ত্রিক সংস্কৃতিকে নির্দেশ করে। চারমুখী শিবলিঙ্গের মাথায় নাগের অস্তিত্ব, গণেশের উপর নাগ জনু (পবিত্র সুতো) বিশিষ্ট মূর্তি ভারতের কোথাও নেই।
🌺 তাছাড়া পাহাড়ের আশেপাশের ভাঙ্গা অংশ নির্দেশ করে এই মন্দিরটি নাগ সাম্রাজ্য (১১০ খ্রিস্টপূর্ব থেকে ৩১৫ খ্রিস্টাব্দ) কর্তৃক নির্মিত যারা নাগকে নিজেদেরকে রাজকীয় চিহ্ন হিসেবে ব্যবহার করতো। পরবর্তী গুপ্ত সাম্রাজ্যের নিয়ন্ত্রণ, ও নাগড়া শৈলীর উপর তাদের প্রভাব এবং পাহাড়ের পাশে রামগড় দূর্গ ও রামগড় গ্রাম এর প্রমাণ। এই মন্দিরটি শিব ও মহাশক্তিকে উৎসর্গ করা ভারতের প্রাচীনতম সক্রিয় হিন্দু মন্দির। গবেষণা অনুসারে এখানে পূর্বে একটি শিক্ষাকেন্দ্র ছিলো এবং মন্ডলেশ্বর (শিব) মন্দিরটি ছিলো সেই শিক্ষাকেন্দ্রের প্রধান মন্দির। মন্ডেলশ্বরী (পার্বতী) ছিলো দক্ষিণ দিকটায়। মন্দিরটি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিলো ও মন্ডেলশ্বরী মূর্তিটি (নিম্নগতিপ্রাপ্ত মুন্ডেশ্বরী যা রাক্ষস মুন্ডের সাথে সম্পৃক্ত) মূল মন্দিরের পূর্ব কক্ষে রাখা হয়।
🌺 ২০০৩ সালে মন্দির এলাকা হতে শ্রীলংকার রাজা দুটুগমুনুর (১০১-৭৭ খ্রিস্টপূর্ব) সীলমোহর আবিষ্কার ইতিহাস বদলে দেয়। তখন এই তত্ত্ব প্রতিষ্ঠিত হয় যে ১০১ থেকে ৭৭ খ্রিস্টপূর্ব সময়কালের মধ্যে শ্রীলংকা থেকে আগত রাজকীয় তীর্থযাত্রীর দল বুদ্ধ গয়া থেকে বিখ্যাত দক্ষিণপথ মহাসড়ক হয়ে সারনাথে ভ্রমণকালে মন্দিরের স্থলে তাদের সীলমোহরটি হারিয়েছিলো। ১৮৯১ ও ১৯০৩ সালে প্রাপ্ত ব্রাহ্মী লিপিতে লিখিত ফলকের দুটি খণ্ড (যা এখন কলকাতার জাতীয় যাদুঘরে সংরক্ষিত রয়েছে) গবেষণার পর ডক্টর এন. জি মজুমদার এবং ডক্টর কে. সি পানিগ্রাহি বলেন যে মন্দিরটি চতুর্থ শতাব্দীর চেয়েও পুরনো। বিহার রাজ্য ধর্মীয় ট্রাস্ট বোর্ড ২০০৮ সালে পাটনায় গবেষকদের নিয়ে এক জাতীয় সেমিনারের আয়োজন করে যেখানে মুন্ডেশ্বরী মন্দিরের নির্মাণকাল ১০৮ সাল নির্ধারণ করে এটিকে রাষ্ট্রের প্রাচীনতম মন্দির ঘোষণা করা হয়।
🕰সময়কাল সম্পাদনা:
৬৩৬-৩৮ খ্রিস্টাব্দ - চৈনিক ভ্রমণকারী হিউয়েন সাঙ পাটনা থেকে ২০০ কিলোমিটার দক্ষিণ-পশ্চিমে পাহাড়ের উপরে একটি মন্দিরের কথা তার লেখায় উল্লেখ করেন যা মুন্ডেশ্বরীর অবস্থানের সাথে মিলে যায়।
১৭৯০ খ্রিস্টাব্দ - ড্যানিয়েল ভ্রাতাদ্বয় থমাস ও উইলিয়াম মুন্ডেশ্বরী মন্দিরে দেখতে যান এবং এর প্রথম চিত্র অঙ্কন করেন।
১৮১৩ খ্রিস্টাব্দ – বিউকানান ১৮১৩ সালে এই অঞ্চলে ভ্রমণ করেন।
১৮৯১-৯২ খ্রিস্টাব্দ – ভাঙ্গা মুন্ডেশ্বরী ফলকের প্রথম অংশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির জরিপের সময় ব্লচ দ্বারা আবিষ্কৃত হয়।
১৯০৩ খ্রিস্টাব্দ – ফলকের দ্বিতীয় অংশ মন্দিরের পাশের ধ্বংসাবশেষ থেকে আবিষ্কৃত হয়।
২০০৩ খ্রিস্টাব্দ – শ্রীলংকার রাজা দুটুগমুনুর ব্রাহ্মী লিপির রাজকীয় সীলমোহর বারাণসীর ইতিহাসবিদ জাহ্নি শেখর রায় দ্বারা আবিষ্কৃত হয় যা মন্দির সম্পর্কিত অতীতের গবেষণালব্ধ ইতিহাস বদলে দেয়।
২০০৮ খ্রিস্টাব্দ - বিহার রাজ্য ধর্মীয় ট্রাস্টের কল্যাণে পাটনায় আয়োজিত জাতীয় সেমিনারে গবেষকগণ মন্দিরটির ফলকের তারিখ হিসেবে শাক্য যুগের ত্রিশতম বছর (১০৮ খ্রিস্টাব্দ) নির্ধারণ করেন।
পাথরের তৈরি এই মন্দিরটি অষ্টভুজাকৃতি নকশায় নির্মিত যা হিন্দু মন্দিরগুলির মধ্যে বিরল।
🌺 এটি বিহারের মন্দির নির্মাণশৈলীর মধ্যে নাগর শৈলীর প্রাথমিক একটি নমুনা। মন্দিরের চার দেওয়ালে একটি করে দরজা বা জানালা এবং মূর্তি স্থাপনের জন্য কুলুঙ্গি বিদ্যমান। মন্দিরটির শিখর বা মিনারটি এখন আর নেই। সংস্কার কাজের অংশ হিসেবে মন্দিরের ছাদটি নতুন করে নির্মাণ করা হয়েছে। মন্দিরের ভেতরকার দেওয়ালগুলোতে কুলুঙ্গি ও ছাঁচ বিদ্যমান যেগুলো ফুলদানি এবং পাতার নকশাসমেত পাথরে খোদাই করা হয়েছে। মন্দিরের প্রবেশপথে দরজার চৌকাঠের বাজুতে দ্বারপালার গঙ্গা, যমুনা সহ আরো অনেক মূর্তির খোদাই করা চিত্র দেখতে পাওয়া যায়। মন্দিরের গর্ভগৃহের মূল দেব-দেবী হলো দেবী মুন্ডেশ্বরী এবং চতুর্মুখী শিবলিঙ্গ। যদিও শিবলিঙ্গটি গর্ভগৃহের কেন্দ্রে অবস্থিত, মন্দিরের মূল অধিস্থিত ঈশ্বর হচ্ছে দেবী মুন্ডেশ্বরী যার দশ হাত বিশিষ্ট ষাঁড়ের উপর চড়া প্রতীকী মূর্তি কুলুঙ্গিতে রাখা আছে যা মহিষাসুরকে নির্দেশ করে। এই মন্দির অন্য দেবতাদের মূর্তিও বিদ্যমান যেমন গণেশ, সূর্য এবং বিষ্ণু। পাথরের তৈরি এই মন্দির ভবনের অনেক অংশ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে এর আশেপাশে মন্দির ভবনের টুকরো ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকতে দেখা গেছে।
যাই হোক, বেশ কিছু কাল ধরে এই এলাকাটি ভারতীয় পুরাতত্ত্ব সর্বেক্ষণের গবেষণার বিষয়বস্তু হিসেবে ছিলো।
(তথ্য এবং চিত্র ইন্টারনেট থেকে সংগ্রহ করে অনুচ্ছেদটি রচিত)
No comments