Page Nav

HIDE

Grid Style

GRID_STYLE

Post/Page

Weather Location

Breaking News:

latest

প্রকাশিত হল "বাংলার সাপ", এক অনবদ্য সংকলন - ননী গোপাল মন্ডল

প্রকাশিত হল "বাংলার সাপ", এক অনবদ্য সংকলন - ননী গোপাল মন্ডল
শংখ লাগা মানে লোকে ধরে নেন সাপেদের যৌন মিলন। তাই দাঁড়াশ আর গোখরোর লড়াই কেও দুটি প্রজাতির সাপের মধ্যে যৌন মিলন বলে মনে করেন। তা অসম্ভব। একই প্রজাতির দুটো স্ত্র…

 






প্রকাশিত হল "বাংলার সাপ", এক অনবদ্য সংকলন - ননী গোপাল মন্ডল


শংখ লাগা মানে লোকে ধরে নেন সাপেদের যৌন মিলন। তাই দাঁড়াশ আর গোখরোর লড়াই কেও দুটি প্রজাতির সাপের মধ্যে যৌন মিলন বলে মনে করেন। তা অসম্ভব। একই প্রজাতির দুটো স্ত্রী পুরুষ সাপের মধ্যে এই যৌন মিলন। তা দৃষ্টি নন্দন।

ননীগোপাল মন্ডলের সম্প্রতি প্রকাশিত *বাংলার সাপ* বইতে এমন অনেক বিবরণ আছে, যা শহুরে জীবনে প্রায় দেখাই যায় না। কিন্তু যারা গ্রামীণ জীবনের কিছু অভিজ্ঞতায় সমৃদ্ধ, নির্মল প্রকৃতির ছায়ায় কিছুটা জিরিয়ে নিয়েছেন কিম্বা অনুসন্ধিৎসু মন নিয়ে যারা গ্রামাঞ্চলে-বনাঞ্চলে বিচরণ করেন, তাদের কাছে সাপের শংখ লাগা এক অপার্থিব দৃশ্য। আর তা সাবলীল ভাবে, নিজস্ব ভঙ্গিতে পরিবেশিত হয়েছে বইটিতে।

আমরা বেশিরভাগ মানুষ জানি, সাপ দুধরনের। বিষধর এবং বিষহীন। ননীগোপাল বলেছেন, সাপেদের আরও একটা বিভাগ আছে, ক্ষীণবিষ সাপ। যাদের কামড়ে মানুষের মৃত্যু হয়না। বিষও এতো তীব্র নয়। কিন্তু, বিষধর সাপেদের যা কিছু উপচার( বিষ, বিষদাঁত, বিষথলি), সবকিছু ই এই সাপেদের মধ্যে আছে। 

বইটির অন্য আকর্ষণ হল নৈমিত্তিক ঘটনায় ননীগোপালের ইনভল্ভমেন্ট আর সেই ঘটনাকে বৈজ্ঞানিক বিশ্লেষণ করে শিক্ষার্থীদের উপযোগী করে বইটিতে তুলে ধরা। উদাহরণ হিসেবে যেমন সাপ নিয়ে মঙ্গলকাব্যের বেহুলার কথা  বলেছেন, তেমনি সাপের দ্বারা মানুষ কে চিনে রাখা, বাঁশির সুরে সাপের দোলা, গরুর বাঁট থেকে দুধ চুষে খাওয়া, সাপের ঘাম খাওয়া, দুধ খাওয়া প্রভৃতি সংস্কার- কুসংস্কারও তুলে ধরেছেন।

আজকাল, টিভি হোক বা সিনেমার গল্পে, সাপ নিয়ে প্রচুর কাল্পনিক কাহিনী থাকে। এতে সাধারণ মানুষের মনে কুসংস্কার আরও প্রবল ভাবে জাঁকিয়ে বসে। বাবা মায়েদের দেখে, ছেলে মেয়েরাও কুসংস্কারের অন্ধকার থেকে বেরোতে পারেনা। *বাংলার সাপ* বইটিতে এসব কুসংস্কারের বিরুদ্ধে বৈজ্ঞানিক যুক্তি আছে। যা, ঐ ভুল ভাল ধারণা কে সুধরাতে সহায়ক হবে।

একই সাপ, বিভিন্ন এলাকায় বিভিন্ন আলাদা নামে পরিচিত। তাই সাপের কথা বললে, সাপ চিহ্নিত করতে অসুবিধে হওয়া স্বাভাবিক। কোন নির্দিষ্ট সাপের কথা বলতে গিয়ে ননীগোপাল সেই সাপের প্রচলিত নাম, ইংরেজি নাম এবং বৈজ্ঞানিক নাম একসাথে উল্লেখ করেছেন। তাই একটা সাপের কথা জানতে গিয়ে অন্য সাপের সাথে গুলিয়ে যাবে না। এটাই সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। এতে বিজ্ঞান শিক্ষার্থীদেরও সুবিধা হবে।

ননীগোপাল মন্ডলের এই অভিজ্ঞতার উৎস হিসেবে তার জীবনের কিছু অংশ তুলে ধরা দরকার। এতে পশ্চিম মেদিনীপুর জেলার বামনসরিষার মতো অজ পাড়াগাঁয়ের প্রভাব আছে। প্রভাব আছে ঝাড়গ্রামের আদিবাসী সম্প্রদায়ের, খড়্গপুর, হলদিয়া এমনকি রাজস্থান এর জয়পুর এরও। সাপুড়েদের কাছে যেমন সাপের হদিস পেয়েছেন তেমনি সর্পবিদ দীপক মিত্র, তাঁর বাবা পঞ্চানন মিত্রর কাছেও সাপ নিয়ে কাজ করেছেন। তাই সাপ নিয়ে শুধু ফাঁকা বুলি আওড়ানো নয়, সরাসরি সাপ ধরেও কাজ করেছেন। তাই সাপের সম্পর্কে এতো নীবিড় পর্যালোচনা করতে পারেন। ননীগোপালের মতো লোকেরা, সাপ কেন, যেকোন জিনিস কে অন্য চোখে দেখেন।

ননীগোপাল দীর্ঘদিন ধরে হলদিয়া বিজ্ঞান পরিষদের সদস্য। দশ বছরেরও বেশি সময় ভাইস প্রেসিডেন্ট এর দায়িত্ব সামলেছেন। তাই কুসংস্কারের বিরুদ্ধে স্ট্রিট কর্ণারে, পথসভায় বা অন্য প্রতিষ্ঠানের আয়োজনে বহু জায়গায় বক্তৃতা করেছেন। এক সময়, স্থানীয় স্কুল গুলোতে বিজ্ঞান কথা বলতে যেতেন। রাণীচক গভ স্পনসরড স্কুল, দুর্গাচক হাই স্কুল, জয়নগর, সুতাহাটা, পীতাম্বরঢক প্রভৃতি এই তালিকায় আছে। প্রথম হলদিয়া উৎসবে, পঞ্চানন মিত্র অসুস্থ হয়ে পড়ায়, একবার, *সাপের ঘরে মানুষ* এ নিজে ঢুকে, সাপ চিনতে দর্শকদের সাহায্য করেছেন। বিজ্ঞান পরিষদের উদ্যোগে এই শো তে টিকিট কেটে দর্শক ঢুকেছে। হলদিয়া উৎসবের সেমিনার মঞ্চে *সাপ নিয়ে সাতকাহন* শীর্ষক আলোচনার পর, জনসাধারণের সঙ্গে প্রশ্নোত্তর এক অনবদ্য আসরে পরিণত হয়েছিল। 

দীর্ঘ ৩০/৩২ বছর আগে সাপ নিয়ে মানুষের মনে যে আগ্রহ ছিল, আজও তা আছে। কিন্তু, তখন সেই আগ্রহ মেটানোর জন্য তেমন কোন টিভি, ইন্টারনেট বা অনলাইন সাপোর্ট ছিল না। তাই, স্বাভাবিক ভাবে, ননীগোপালের লেখাগুলো এতো জনপ্রিয় হয়ে ওঠৈ। আর, সেই জনপ্রিয় লেখাগুলোর প্রায় অবিকৃত এই সংকলন, সবার পড়ে নেওয়ার প্রয়োজন আছে। যদিও পাঠ্যপুস্তক নয়, তবুও ননীগোপাল মন্ডলের *বাংলার সাপ*  সংকলনটি স্কুল ছাত্র-ছাত্রীদের খুব সহায়ক হবে।

*তিতীর্ষু* প্রকাশন থেকে বইটি প্রকাশ করেছেন শ্রীতমা বেরা দাস। প্রচ্ছদ এঁকেছেন দয়াময় বন্দ্যোপাধ্যায়। গ্রন্থসত্ব মৌসুমী মন্ডল। বইটির মূল্য ছাপা হয়েছে ১২৫ টাকা।





No comments