Page Nav

HIDE

Grid Style

GRID_STYLE

Post/Page

Weather Location

Breaking News:

latest

ইতিহাস শশাঙ্ক শরশঙ্কাদিঘি ও পৌষপার্বণ দাঁতন পশ্চিমমেদিনীপুর(Sarsanka Lake,Dantan)

ইতিহাস শশাঙ্ক শরশঙ্কাদিঘি ও পৌষপার্বণ দাঁতন পশ্চিমমেদিনীপুর(Sarsanka Lake,Dantan)

#পৌষসংক্রান্তি 🌾🌾🌾আজ পৌষপার্বণ-পিঠেপুলি-পাটিসাপটা ও পুণ্যস্নানের দিন,দক্ষিণে তামিলনাড়ু ও শ্রীলঙ্কায় পোঙ্গাল,আসামের মাঘি বিহু বা ভোগালি বিহু,উত্তর…

 




ইতিহাস শশাঙ্ক শরশঙ্কাদিঘি ও পৌষপার্বণ দাঁতন পশ্চিমমেদিনীপুর(Sarsanka Lake,Dantan)



#পৌষসংক্রান্তি 🌾🌾🌾

আজ পৌষপার্বণ-পিঠেপুলি-পাটিসাপটা ও পুণ্যস্নানের দিন,দক্ষিণে তামিলনাড়ু ও শ্রীলঙ্কায় পোঙ্গাল,আসামের মাঘি বিহু বা ভোগালি বিহু,উত্তরপ্রদেশে ঘুঘুটি বা উত্তরায়ণ মকরসংক্রান্তি,অন্ধ্রপ্রদেশে পেড্ডা বা পান্ডুগা,ওড়িশায় মকর চাউলা বা সংক্রান্তি,বিহারে তিল সংক্রান্তি,কেরলে মকরভিলাক্কু বা মকরজ্যোতি,কর্ণাটকে সুগ্গি হাব্বা,মহারাষ্ট্র ও গোয়ায় হলদি ও কুমকুম,পাঞ্জাবেও মাঘি সংক্রান্তি নামে পরিচিত এদিন ওখানে লোরি হয়।ত্রিপুরায় হাংরাই,মালেশিয়ায় থাই পোঙ্গাল,সিঙ্গাপুরে উজাভর থিরুনাল নামে আজকের দিনটি পালিত হয়।নতুন চালের পায়েস,ভারতীয় ঐতিহ্যমন্ডিত কৃষিকাজকে মর্যাদা দিতে ও সূর্যদেবের দক্ষিণ অয়নান্ত দিবস বা উত্তরায়ণ ঘটে,মকর রাশিতে প্রবেশ যা প্রাচীনকাল থেকে পুণ্যদিন হিসেবে বিবেচিত হয়ে আসছে।কুম্ভমেলা ও স্নান নিয়ে আলাদা করে বলার নেই বরং পশ্চিম মেদিনীপুরের দাঁতনের শরশঙ্কা ও পৌষসংক্রান্তির কথা জানাচ্ছি।

#দাঁতন 


পশ্চিমবঙ্গের প্রায় সীমান্তে ওড়িশা রাজ্যের ধারে পশ্চিম মেদিনীপুরের এই দাঁতন গ্রাম তথা মফস্বলটিকে নিয়ে মিথ ও ইতিহাসের শেষ নেই।মহাভারতের পান্ডবদের সাথেও এটির সংযোগ রয়েছে।আবার ষোড়শ মহাজন পদের একটি এই দাঁতনেই ছিল বলে মনে করা হয়।এখনও কোর্টপাদা(Courtpada),বাইপাটনা(By Patna)এই অঞ্চলগুলি সে রহস্যের সাথে যুক্ত।বর্তমানের দাঁতন একসময় দন্ডভূক্তি নামে পরিচিত ছিল।শ্রীচৈতন্য এই পথেই নীলাচলে যাবার কালে তাঁর দাঁত মাজার কাঠিটি এখানে ফেলেন যা থেকে একটি গাছের সৃষ্টি হয় বলেও মিথ রয়েছে।শ্রীকৃষ্ণ,গৌতম বুদ্ধ,মোঘল,পাঠান,সম্রাট শশাঙ্ক,অশোক,পীর প্রমুখের সাথেও এই স্থানের ইতিহাস সংযুক্ত।

#শরশঙ্কা

জায়গাটির ব্যপ্তি এতোটাই যে দুটি মৌজা একমালীপুর ও শরশঙ্কা মৌজা নিয়ে গঠিত।(পশ্চিমাংশে কিছুটা কুহুদা অঞ্চল পড়ে)শালিকোঠা ও দাঁতন ১নং ব্লকের অধীনে অঞ্চলটি পড়ে।১৪৭একর ১৭ডেসিমেল বা প্রায় ১৪৮একর ও পাড় বরাবর প্রায় ১৫০একর নিয়ে গঠিত।স্যাটেলাইট থেকে এই চর্তুভূজাকৃতি দিঘি দেখে অনুমান করা যায় এটি সম্ভবত ভারতের সর্ববৃহৎ দিঘি।স্যটেলাইট চিত্রে এটি ১৪২একর ৩৭ডেসিমেল দেখায় যা প্রায় ৩০০৯মি:২৪৮সে:মি: লম্বায় ৫০০০ফুট প্রস্থে বা চওড়ায় ২৫০০ফুট।পাড় বরাবর শীতলা মন্দির,নবনির্মিত কালীমন্দির,দাস মহাপাত্র দের জগন্নাথ মন্দির(রথ উৎসব হয়),জটেশ্বর-ঝিঙ্গেশ্বর-রামেশ্বর শিব প্রভৃতি মন্দির বিরাজমান।যা এখনকার নির্মাণ কোনো হিন্দুর দ্বারা হয়েছে বোঝাতে ও স্থানটির মাহাত্ম্য বাড়াতে তৈরী।এই শরশঙ্কা দিঘি থেকে দাঁতনের অপর একটি প্রসিদ্ধ দিঘি বিদ্যাধরের(৭'৫ফুট ঊচ্চতা,৪'৫ফুটের Water Cave) গুপ্ত সংযোগ আছে বলে মনে করা হয়।প্রচন্ড গরমেও এই দিঘির জল শুকোয় না।পাশে ছোট বড়ো মিলিয়ে ২৮খানা পুকুর আছে যেখানে গিয়ে কচুরিপানাগুলো জমা হয়।

#শরশঙ্কারসৃষ্টি

১)মহাভারতের মুষল পর্বে আছে ভগবান শ্রীকৃষ্ণ যখন গাছের ডালে পা ঝুলিয়ে বসেছিলেন,আর তাঁর নীল পা-কে পাখি ভেবে ভুলে জরা নামক ব্যাধের দ্বারা তীর বিঁধে মারা যান সেইসময় তাঁর হাত থেকে পাঞ্চজন্য শঙ্খ ছিটকে এই স্থানে পড়ায় এই দিঘির সৃষ্টি হয়েছে।

২)আবার মহাভারতে আছে পান্ডব বনবাস ও অজ্ঞাতবাস করার সময় এই দিঘিতে স্নান করে পাড়ে বিশ্রাম নিয়েছিল।তাই,এই দিঘির প্রধান স্নানঘাটটি আজও পান্ডবঘাট নামে পরিচিত।(এই তত্ত্ব সত্যি হলে তখন সে দিঘি এতো বিশাল ছিল না।কৃষ্ণের পাঞ্চজন্য পড়ার পর হয়েছে বা পান্ডবদের আগমনের সময় কৃষ্ণের ওই ঘটনার পরে হয়েছে ধরতে হয়।)

৩)মৌর্যসম্রাট অশোক জলসেচের সুবিধার জন্য এটি খনন করান বলে শোনা যায়।গঠন কাঠামো এমনভাবে তৈরী যাতে বর্ষার জল সারা বছর এই দিঘিতে সঞ্চিত হয়।খরার সময়ও যাতে কারোর জলাভাব না থাকে।

৪)এই কারণে সম্রাট শশাঙ্ক এই দিঘিটি তৈরী করেন বলে শোনা যায়।(প্রজা বা এই অঞ্চলের লোকেদের জলের সুবিধায়।)একবার শশাঙ্কের মা ও রাজা নিজে শ্রীক্ষেত্রে জগন্নাথদেবের দর্শনে যাচ্ছেন পথে ক্লান্ত রাজমাতা ও রাজা শশাঙ্ক এই স্থানে(জামুয়াপাতি)পাত্রমিত্রসহ বিশ্রাম নেন।রাজমাতা তথা শশাঙ্কের মা এই অঞ্চলের লোকজনের আতিথেয়তায় মুগ্ধ হয়ে যান।কিন্তু এই বিশাল অঞ্চলটি তখন ফসল বিহীন ছিল।মাতা কারণ হিসেবে জানেন এখানকার অপর্যাপ্ত জল।তিনি শশাঙ্ককে বলেন এই স্থানে যাতে জলের ব্যবস্থা করেন।মাতৃভক্ত প্রজাহিতৈষী রাজা তৎক্ষণাৎ শর তথা ধনুকে তীর যুক্ত করে মারেন ও কথা দেন;যতদূর এই তীর বা শর যাবে শশাঙ্ক ততদূর অবধি পুষ্করিণী বা বড়ো দিঘি তৈরী করবেন[শর+শঙ্কা(শশাঙ্কের)]।৩বছর সময় লাগে এটি তৈরীতে।

৫)ওড়িশারাজ চোদ গঙ্গাদেব এটি তৈরী করেন বলেও কথিত।

৬)সংস্কৃত তথা দেবনাগরী ভাষায় "শর" মানে জল আর শশাঙ্কের "শঙ্কা" মিলে এই নাম বলেও মিথ আছে।

#মাজার(পীরের সমাধি)

এই দিঘির দক্ষিণ-পূর্ব কোণে লস্করগঞ্জের দেওয়ান  মুসলিম পীরের মাজার বা পীরগাহ এখনও এখানে আছে।এই পীর আগে দিঘির তীরে বসে সাধনা করতেন।এক পৌষ সংক্রান্তির আগের রাতে তিনি মারা যান।স্থানীয়রা কবর দেন।এখনও ওই মেলার সময় মকর সংক্রান্তিতে কবরে মাটি দেন,চাদর চড়িয়ে অলৌকিক শক্তি ও আশীর্বাদ দোয়া চেয়ে নেন।তখন পীরকে মুরগীর ঝোল,রুটি ও লাউয়ের মোরব্বা ভোগ দেওয়া হয়।সেবক মোলায়েম শা ও মির্জাপুর গ্রামের বাসিন্দা গৃহবধূ কাঞ্চন দাস বর্তমানে পীরগাহটির রক্ষণাবেক্ষণ করেন।সাঁওতালী তথা আদিবাসী,হিন্দু মুসলিম সব ধর্মের মানুষেরা শরশঙ্কার বিভিন্ন উৎসবে সামিল হন।🌈


#পরিশেষে 

এবার ওমিক্রণের অ-করুণায় মেলা বন্ধ।

সালটা ২০১২হবে,যখন প্রথম এই মনোমুগ্ধকর স্থানে পৌষ সংক্রান্তির মেলা দেখেছিলাম;পূজনীয় বাংলার শিক্ষক স্যারের নিমন্ত্রণে।করোনাকালে যদিও সে বিশাল মেলায় কিছুটা যতি পড়েছে কিন্তু প্রতিবছর মকর সংক্রান্তির পুণ্যস্নান করতে বহু ভক্ত এখানে ভীড় করেন।দিঘির পূর্ব ও উত্তর পাড়ে প্রায় ৮০একর জমি জুড়ে কয়েকশত দোকান বসে।পাখি,মাছ,ঘরগেরস্থালির নানা সামগ্রী,শঙ্খের জিনিস,রকমারি পসরা,লোহা-বেত-বাঁশ দিয়ে তৈরী নানা জিনিস,রকমারি কুটিরশিল্প ও হস্তশিল্পের পসরার সাথে থাকে ছোট স্টেজ বেঁধে ফাংশন,আর মন্দিরগুলিতে ও মাজরা(পীরের থান)-এ চলে শ্রদ্ধার্থীদের পূজা।স্বল্প আলোয় মায়াবী সুন্দর লাগে জায়গাটা।🌾🌾

No comments