নেতাজির ১২৫তম জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে চিত্রায়িত করছেন রণাঙ্গণে সুভাষচন্দ্র-সৌমেন সামন্তপিতা-পুত্র দু’জনেই প্রাক্তন সেনাকর্মী। ১৯৬৫ ও ১৯৭১ সালে ভারত-পাকিস্তান যুদ্ধের সময়ে রণাঙ্গণে একজন ছিলেন দক্ষ র্যাডার টেকনিশিয়ান। অন্যজন ১৯৯৯সালে…
নেতাজির ১২৫তম জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে চিত্রায়িত করছেন রণাঙ্গণে সুভাষচন্দ্র-সৌমেন সামন্ত
পিতা-পুত্র দু’জনেই প্রাক্তন সেনাকর্মী। ১৯৬৫ ও ১৯৭১ সালে ভারত-পাকিস্তান যুদ্ধের সময়ে রণাঙ্গণে একজন ছিলেন দক্ষ র্যাডার টেকনিশিয়ান। অন্যজন ১৯৯৯সালে কার্গিল যুদ্ধের সময় আরবসাগরের তলায় ভারত-পাকিস্তান জলসীমায় নৌসেনার সাবমেরিন নিয়ে ছিলেন অতন্দ্র পাহারায়। একাত্তরের যুদ্ধের সেনানী ক্যাপ্টেন গুরুপদ সামন্ত এখন হলদিয়ার গ্রামের গরিব মানুষের হোমিওপ্যাথি চিকিৎসা করছেন। এই সেবা করেন সম্পূর্ণ বিনা পয়সায়। কার্গিল যুদ্ধের সেনানী সৌমেন সামন্ত ক্যানভাসে ফুটিয়ে তুলছেন স্বাধীনতার বিপ্লবী ও ভারতীয় সেনাদের সাহসী লড়াইয়ের কাহিনি। স্বাধীতার ৭৫বছর উপলক্ষে সৌমেন এখন সেনাজীবনের বীরগাথা ৭৫টি ছবির মাধ্যমে তুলে ধরতে ব্যস্ত। একই সঙ্গে নেতাজির ১২৫তম জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে তিনি চিত্রায়িত করছেন রণাঙ্গণে সুভাষচন্দ্র এবং তাঁকে ঘিরে ভারতীয় আবেগের বৈচিত্রময় ইতিহাস।
দিল্লিতে সেনা হাসপাতালে জন্ম সৌমেনের। শৈশবে সেনাবাহিনীর ট্যাঙ্ক, কামান দেখে বড় হয়েছেন দিল্লিতে। পরে বাবা গুরুপ্রসাদবাবুর পদাঙ্ক অনুসরণ করেই সেনাবাহিনীতে যোগ দেন তিনি। বাবা ছিলেন স্থলবাহিনীতে, আর তিনি নৌসেনা বিভাগের ইঞ্জিনিয়ার কাম অফিসার। হলদিয়া পুরসভার ১নম্বর ওয়ার্ডে সুতাহাটার আমলাটের বাসিন্দা সেনাকর্মী এই পিতা-পুত্র। তাঁদের পরিবারের চারজন ছিলেন সেনাবাহিনীতে। অবসরের পর নিজেদের গ্রামে ফিরে গুরুপ্রসাদবাবু মানবসেবায়, আর ছেলে সৌমেন সেনাবাহিনীর বীরগাথা রং-তুলিতে এঁকে উদ্বুদ্ধ করছেন তরুণ প্রজন্মকে। গ্রামের স্কুলের খুদে পড়ুয়াদের কাছে তিনি নিয়মিত স্বাধীনতার সেনানী ও সেনাকর্মীদের জীবনের গল্প বলে তাদের ছবি আঁকার পাঠ দেন।
বাবার অনুপ্রেরণা ও দক্ষ সাঁতারুর সার্টিফিকেটকে হাতিয়ার করে নৌসেনায় যোগ দিয়েছিলেন মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ার সৌমেন। তাঁর চোদ্দ বছরের কর্মজীবনের দশ বছরই কেটেছে সাবমেরিনের অন্ধকার ও একঘেঁমেয়ি জীবনে। আইএনএস সিন্ধুরত্ন নামে একটি সাবমেরিনে শুরু হয় তাঁর কর্মজীবন। সাবমেরিনে থাকাকালীন বেশ কয়েকবার মৃত্যুর মুখোমুখি হয়েছেন সৌমেন। তাৎক্ষণিক বুদ্ধি এবং টিমওয়ার্ক দিয়ে তা কাটিয়ে উঠেছেন। একবার যুদ্ধ পরিস্থিতির জন্য একটানা ৩০দিন জলের তলায় ছিল তাঁদের সাবমেরিন। রাশিয়া থেকে সাবমেরিন মেরামতির পর নরওয়ে, স্কটল্যান্ড, জার্মিানি, ফ্রান্স, ভূমধ্যসাগর হয়ে দেশে ফেরার সময় তাঁর দারুণ সব অভিজ্ঞতা হয়েছে। সাবমেরিনের একঘেঁয়েমি জীবন কাটাতে অফিসারের নির্দেশে প্রতিদিন কার্টুন এঁকে সকালের নোটিস বোর্ডে টাঙাতে হতো।
সৌমেনবাবু বলেন, ছোটবেলায় নেওয়া আঁকার পাঠ হয়ে উঠল সেনাজীবনের বাঁচার রসদ। ১৯৯১ সালে স্কুলজীবনে একবার ছবি এঁকে জাতীয় পর্যায়ের সোনার পদক পেয়েছিলাম। বাবা ও দাদাদের কাছ থেকে সেনাবাহিনীর বিভিন্ন ফ্রন্টের নানা রোমাঞ্চকর গল্প শুনেছি। তার সঙ্গে যুক্ত হয়েছে নিজের নৌসেনা জীবনের কাহিনী। দেশের সুরক্ষায় সেনাকর্মীরা অদম্য সাহসের সঙ্গে যে কাজ করে চলেছেন, তা কাজের অবসরে ফুটিয়ে তোলা শুরু করি। নৌসেনার পদস্থ আধিকারিকরা উৎসাহিত করতেন নিয়মিত। তাঁদেরই উৎসাহে বিশাখাপত্তনমে নাভাল ডক ইয়ার্ডের বিশাল দেওয়াল জুড়ে এঁকেছি নৌসেনাদের জীবন।
নিজের আঁকা সেনাকর্মীদের আনন্দ-বিষাদের ছবি নিয়ে ২০১৯সাল থেকে ২০২২পর্যন্ত চারটি প্রদর্শনী করেছেন কলকাতায়। এবার তিনি স্বাধীনতার ৭৫বছরে ৭৫টি ছবি নিয়ে বিশেষ প্রদর্শনীর উদ্যোগ নিয়েছেন। তাঁর ইচ্ছে স্কুল পড়ুয়াদের উদ্বুদ্ধ করতে এই ছবির একটি বই প্রকাশ করবেন। তাঁর আঁকার শিক্ষক প্রদীপ মাইতি বলেন, সেনাকর্মী হিসেবে সৌমেনই প্রথম তাঁদের জীবন রং-তুলিতে ফুটিয়ে তুলছেন। তরুণ প্রজন্মের দেশের প্রতি টান তৈরির এমন উদ্যোগ নজিরবিহীন।
সুতাহাটার সেনাকর্মী সৌমেন সামন্ত সাধারণতন্ত্র দিবসে ভারতের বীরসেনানীদের নিয়ে আঁকা ছবির প্রদর্শনীর জন্য।
No comments