শক্তিশালী ড্রোন ক্যামেরার সাহায্যে দ্বিতীয় দিনের নয়াচরে সমীক্ষার কাজ শুরু করল পূর্ব মেদিনীপুর জেলা প্রশাসন
নয়াচরে ফিশিং হাব ও ইকো ট্যুরিজম কেন্দ্র গড়ে তোলার জন্য প্রথমে ‘ল্যান্ড ইউজ ম্যাপ’ তৈরি করা হবে। রাস্তাঘাট, গেস্টহাউস,…
শক্তিশালী ড্রোন ক্যামেরার সাহায্যে দ্বিতীয় দিনের নয়াচরে সমীক্ষার কাজ শুরু করল পূর্ব মেদিনীপুর জেলা প্রশাসন
নয়াচরে ফিশিং হাব ও ইকো ট্যুরিজম কেন্দ্র গড়ে তোলার জন্য প্রথমে ‘ল্যান্ড ইউজ ম্যাপ’ তৈরি করা হবে। রাস্তাঘাট, গেস্টহাউস, ফ্লাড শেল্টার, সোলার প্ল্যান্ট, স্বাস্থ্যকেন্দ্র, জেটি, ম্যানগ্রোভ বনাঞ্চল কোথায় কীভাবে তৈরি হতে পারে, সেজন্য ল্যান্ড ইউজ ম্যাপ তৈরি প্রয়োজন। এরজন্য এদিন কখনও মেঠো পথ, কখনও এক হাঁটু কাদায় হেঁটে আকাশে ড্রোন উড়িয়ে সমীক্ষা চালান বিভিন্ন দপ্তরের আধিকারিকরা। স্যাটেলাইট ম্যাপ ও নয়াচর বা আগুরমারির চরের জমির পুরনো ম্যাপ নিয়ে তাঁদের সঙ্গে ছিলেন ভূমি দপ্তরের আমিনরা। জমির চরিত্র বোঝার পাশাপাশি নয়াচরে জনবসতির পরিষ্কার চিত্র জানতে ড্রোন ক্যামেরার সাহায্যে ডেমোগ্রাফি স্টাডি বা জনসংখ্যা সংক্রান্ত বিষয়ে সমীক্ষা করা হয়।
বিজ্ঞাপন
নয়াচরে সমীক্ষা অভিযান নিয়ে ভোর থেকেই হলদিয়ার টাউনশিপ জেটি ঘাট ও কোস্টগার্ডের হোভারপোর্টে তোড়জোড় শুরু হয়। নয়াচর যাত্রার আগে হলদিয়ার ট্রেড সেন্টারে দু’দিনের সমীক্ষা নিয়ে প্রস্তুতি মিটিং করে প্রশাসন। এদিন সকাল সাড়ে ৭টা নাগাদ সমীক্ষক দল নিয়ে নয়াচর রওনা দেয় হোভারক্র্যাফ্ট। লঞ্চে চেপে হলদিয়া থেকে নয়াচরে পৌঁছতে একঘণ্টার বেশি সময় লাগে। তবে জোয়ার ভাটার উপর নির্ভর করে সময়। সেজন্য সময় বাঁচাতেই কোস্টগার্ডের সঙ্গে কথা বলে হোভারক্র্যাফ্টের ব্যবস্থা করেছিল জেলা প্রশাসন। মাত্র ১০মিনিটেই হোভারক্র্যাফ্ট নয়াচর পৌঁছে দেয় সরকারি সমীক্ষক দলকে।
প্রশাসন কাজের সুবিধার জন্য নয়াচরকে ১৩৬ থেকে ১৪১পর্যন্ত মোট ছ’টি জোনে ভাগ করেছে। সমীক্ষার সুবিধার জন্য এদিন সার্ভে টিম চারটি দলে ভাগ হয়ে ১৩৬নম্বর জোন মোহনা গেস্টহাউস, ১৩৮নম্বর পকমিল, ১৪০নম্বর বাবলাতলা ও ১৪১নম্বর খেজুরতলা এলাকায় সকাল ৮টা থেকে কাজ শুরু করে। আধিকারিক, ড্রোন অপারেটর ও আমিন মিলিয়ে প্রতিটি দলে ৫-৬জন করে সদস্য ছিলেন। সমীক্ষক দলগুলিকে নেতৃত্ব দেন জেলা পরিকল্পনা অফিসার, হলদিয়া উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের অ্যাসিস্ট্যান্ট এগজিকিউটিভ অফিসার, মৎস্য দপ্তরের সহ অধিকর্তা(প্রশাসন), সুতাহাটার বিডিও। নয়াচরের সবচেয়ে দুর্গম এলাকা হল খেজুরতলা ও বাবলাতলা এলাকা। নন্দীগ্রামের ঠিক উল্টোদিকেই নয়াচরের দক্ষিণভাগে এই এলাকা দুটির অবস্থান। যাতায়াতের রাস্তা দূর অস্ত, কোনও আলপথও নেই। ভেড়ির বাঁধ বা এক হাঁটু কাদায় হেঁটেই যাতায়াত করতে হয়।
এক আধিকারিক বলেন, রীতিমতো রোমাঞ্চকর ও পরিশ্রমসাধ্য ছিল এদিনের নয়াচর সাফারি।
নয়াচর ফিশারমেন কোআপারেটিভ সোসাইটির সাধারণ সম্পাদক সঞ্জয় কোলা বলেন, নয়াচরের ১৩টি সোসাইটির অধিকার বজায় রাখা দাবি জানিয়েছি। সেন্ট্রাল কোঅপারেটিভের জন্য কিছুটা জমিতে ফিশারি ও পর্যটনের ব্যবস্থা করতে হবে। ছ’টি জোন শণাক্ত করে মৎস্যজীবীদের বসবাসের ব্যবস্থা করতে হবে। নয়াচরের সঙ্গে হলদিয়া ও দক্ষিণ ২৪পরগনার যোগাযোগের জন্য ভাসমান ও স্থায়ী জেটি তৈরি করতে হবে। এক আধিকারিক বলেন, স্থানীয় মৎস্যজীবী বা বাসিন্দাদের কাছে যাতে সরকার উচ্ছেদ করার জন্য সার্ভে করছে এধরনের বার্তা না যায়, সেজন্য সতর্ক ছিলেন সবাই। স্থানীয় বাসিন্দাদের সঙ্গে সমীক্ষক দল সেভাবে কথাবার্তা বলেননি। এমনকী সংবাদমাধ্যমের কাছেও কেউ মুখ খুলতে চাননি। তবে এদিন ড্রোন ক্যামেরা দিয়ে সার্ভে করার সময় একটি ড্রোনের ক্যামেরা বিকল হওয়ায় সমস্যা হয়। সমীক্ষক দলের নয়াচর থেকে এদিন সন্ধ্যা ৬টা নাগাদ সবাই হলদিয়া ফিরে আসেন।
No comments