সব বন্ধ নয় কড়া বিধি এলাকাভিত্তিক অর্থনীতি চালু রেখে নিয়ন্ত্রণের বার্তা মমতার
বর্ষবরণের মরশুমে করোনা নিয়ে উদ্বেগ চরমে। ওমিক্রন আতঙ্কের মধ্যেই লাফ দিয়েছে আক্রান্ত সংখ্যা। এই পরিস্থিতিতে বুধবার ফের রাজ্যজুড়ে কঠোর বিধিনিষেধ জারির সম…
সব বন্ধ নয় কড়া বিধি এলাকাভিত্তিক অর্থনীতি চালু রেখে নিয়ন্ত্রণের বার্তা মমতার
বর্ষবরণের মরশুমে করোনা নিয়ে উদ্বেগ চরমে। ওমিক্রন আতঙ্কের মধ্যেই লাফ দিয়েছে আক্রান্ত সংখ্যা। এই পরিস্থিতিতে বুধবার ফের রাজ্যজুড়ে কঠোর বিধিনিষেধ জারির সম্ভাবনা খতিয়ে দেখার নির্দেশ দিয়েছিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। ফলে দুর্ভোগের আশঙ্কায় ঘুম উড়েছিল সাধারণ মানুষের। ২৪ ঘণ্টার মধ্যে সেই জল্পনার অবসান ঘটালেন স্বয়ং মমতাই। বৃহস্পতিবার গঙ্গাসাগর থেকে হেলিকপ্টারে ওঠার আগে মুখ্যমন্ত্রী সাফ জানালেন, ‘জীবন-জীবিকার স্বার্থে যেখানে প্রয়োজন, শুধুমাত্র সেখানেই কড়াকড়ি হবে। করোনার জন্য গত দু’বছর অর্থনীতি ভীষণ মার খেয়েছে। সব তো বন্ধ করে দিলে হবে না! আমরা পরিস্থিতি খতিয়ে দেখছি। কোভিড একটু বেড়েছে। পর্যালোচনা করেই এই বিষয়ে প্রয়োজনীয় সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। যেসব পকেটে নিতান্ত দরকার, যতটুকু সম্ভব বিধিনিষেধ সেখানেই জারি করা হবে।’
কিন্তু, আন্তর্জাতিক বিমান চলাচল বন্ধ হবে কি? সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে মমতা বলেন, ‘বিদেশি বিমানের যাত্রীদের একাংশ, বিশেষ করে ইংল্যান্ড থেকে আগতদের মধ্যে অনেকেই ওমিক্রন ভ্যারিয়েন্টে আক্রান্ত। কিন্তু বিমান চলাচল বন্ধ করার সিদ্ধান্ত আমরা নিতে পারি না। এই সিদ্ধান্ত নেবে কেন্দ্রীয় সরকার। কোন কোন দেশে ওমিক্রন সংক্রমণ বেশি হচ্ছে, কেন্দ্রীয় সরকারের উচিত সেটা খেয়াল করে উপযুক্ত সিদ্ধান্ত নেওয়া। জনস্বার্থে সেইসব জায়গা থেকে বিমান যাতায়াতে বিধিনিষেধ বলবৎ করা উচিত বলেও আমি মনে করি।’ গঙ্গাসাগর মেলায় ভিন রাজ্য থেকে আসা তীর্থযাত্রীদের ভিড় সর্বাধিক। তাঁদের জন্য কোনও ভাবনা কী রয়েছে সরকারের? সাংবাদিকদের এই প্রশ্নে কিছুটা বিরক্তই হন মুখ্যমন্ত্রী। বলেন, ‘উত্তরপ্রদেশ, বিহার সহ বিভিন্ন রাজ্য থেকে মানুষ এলে আমরা কি আটকাব? যিনি চাইবেন না, তিনি আসবেন না। আমরা কাউকে বারণ করতে পারি না।’
এরপর বিকেলেই প্রশাসনের পক্ষ থেকে দু’টি বড় পদক্ষেপের কথা জানা যায়। এক, আগামী ৩ জানুয়ারি থেকে কলকাতায় ব্রিটেন থেকে আসা বিমান অবতরণ বন্ধের জন্য সংশ্লিষ্ট মন্ত্রককে চিঠি দিয়েছে রাজ্য। দুই, এখন থেকে গঙ্গাসাগর মেলায় আগত ভিন রাজ্যের তীর্থযাত্রীদের আরটিপিসিআর পরীক্ষা বাধ্যতামূলক। তীর্থযাত্রী এবং সাধুদেরও টিকাকরণ চলবে বলে জানিয়েছেন দক্ষিণ ২৪ পরগনার জেলাশাসক পি উলগানাথন।
অহেতুক আতঙ্ক ছড়ানোর বিরুদ্ধেও এদিন গঙ্গাসাগর থেকে ফেরার সময় সরব হন মুখ্যমন্ত্রী। সাফ জানান, ‘আমি কাল প্রশাসনিক বৈঠকে বলেছি, স্কুল-কলেজে কী পরিস্থিতি সেটা খতিয়ে দেখতে হবে। স্কুল-কলেজ বন্ধ করে দেওয়া হবে, এমনটা কিন্তু বলিনি। বড়দিনের ছুটি চলছে। স্কুল-কলেজগুলোর কী পরিস্থিতি রয়েছে, ছাত্রছাত্রীদের মধ্যে সংক্রমণ বাড়ছে কি না—এসব আমরা গুরুত্ব দিয়েই পর্যালোচনা করছি। কলকাতায় সংক্রমণ বাড়ছে। তার কারণ শহরতলি থেকে ট্রেনে প্রতিদিন বহু মানুষ কলকাতায় আসেন। বিমান থেকেও অনেক যাত্রী নামছেন। ফলে একটা ওমিক্রন কেস এলে সবার মধ্যে তা ছড়িয়ে যাওয়ার আশঙ্কা থাকে।’
কোভিড সংক্রমণ বৃদ্ধি প্রসঙ্গে মমতা আরও বলেন, প্রায় ছয়-আট মাস করোনা তো ছিল না। অনেক জায়গায় কোভিড হাসপাতাল তুলে দেওয়া হয়েছিল। কারণ, সাধারণ চিকিৎসা-অপারেশন ব্যাহত হচ্ছিল। সেগুলো আবার খতিয়ে দেখা হচ্ছে। ওমিক্রন অতটা মারাত্মক নয়। তবে এটা ছড়াচ্ছে বেশি। বাজারে যাঁরা যাবেন, তাঁরা আগের মতোই মাস্ক পরবেন, দূরত্ব বজায় রাখবেন। নিয়মমতো স্যানিটাইজও করতে হবে। গঙ্গাসাগর মেলায় মাস্ক পরা বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। এদিন সকালে কপিল মুনির মন্দিরের সামনে সাধুদের দ্বিতীয় ডোজ দেওয়ার সময় সেকথা জানান দক্ষিণ ২৪ পরগনার জেলাশাসক।
No comments