এখন এড্স, সংক্রমিত কমবয়সিরাও
এইচআইভি সংক্রমণ বাড়ছে। চলতি বছরের প্রথম দশ মাসেই পশ্চিম মেদিনীপুরে শতাধিক এইচআইভি সংক্রমিতের খোঁজ মিলেছে। এঁদের মধ্যে একাধিক অন্তঃসত্ত্বা রয়েছেন। রয়েছে কয়েকজন কমবয়সি ছেলে মেয়েও। গত কয়েক বছর ধরেই জেলায়…
এখন এড্স, সংক্রমিত কমবয়সিরাও
এইচআইভি সংক্রমণ বাড়ছে। চলতি বছরের প্রথম দশ মাসেই পশ্চিম মেদিনীপুরে শতাধিক এইচআইভি সংক্রমিতের খোঁজ মিলেছে। এঁদের মধ্যে একাধিক অন্তঃসত্ত্বা রয়েছেন। রয়েছে কয়েকজন কমবয়সি ছেলে মেয়েও। গত কয়েক বছর ধরেই জেলায় এইচআইভি সংক্রমিতের সংখ্যা বাড়ছে। স্বাস্থ্য দফতর সূত্রের খবর, ২০১০ সালে জেলায় সংক্রমিত ছিলেন ৬৫২ জন। বর্তমানে সংখ্যাটি ২,৬৪৬ জন!
জেলায় এআরটি (অ্যান্টিরেট্রোভাইরাল থেরাপি) কেন্দ্র রয়েছে দু’টি। মেদিনীপুরে এবং ঘাটালে। কেন্দ্র দু’টির তথ্য বলছে, জেলার মোট সংক্রমিতের ১,৩১১ জন মেদিনীপুরে চিকিৎসাধীন। ঘাটালে চিকিৎসাধীন ১,৩৩৫ জন। চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে অক্টোবরের মধ্যে নতুন করে ১৪৪ জন সংক্রমিতের খোঁজ মিলেছে। এঁদের ৩৫ জন ঘাটাল মহকুমার বাসিন্দা। বাকি ১০৯ জন মেদিনীপুর এবং খড়্গপুর মহকুমার। চলতি বছরে জেলায় ন’জনেরও বেশি এড্স আক্রান্তের মৃত্যু হয়েছে।
জেলা স্বাস্থ্য দফতর সূত্রের খবর, দাসপুর ১, দাসপুর ২ এবং ঘাটাল ব্লকে এইচআইভি সংক্রমিতের সংখ্যা বেশি। জেলার এক স্বাস্থ্য আধিকারিক জানাচ্ছেন, ‘‘যে সব এলাকার যুবকেরা কাজের খোঁজে ভিন্ রাজ্যে চলে যান, মাস কয়েক সেখানে কাটিয়ে ফের ঘরে ফেরেন, সেই সব এলাকাতেই এইচআইভি সংক্রমিতের সংখ্যা বেশি।’’ তাঁর কথায়, ‘‘অনেকেই সমাজের থেকে দূরে সরে যাওয়ার ভয়ে এই মারণ রোগকে আড়াল করে রাখার চেষ্টা করেন।’’ জেলার কিছু জায়গা ঝুঁকিসম্পন্ন এলাকা হিসেবে চিহ্নিত রয়েছে। পরিস্থিতি দেখে উদ্বিগ্ন জেলার একাংশ স্বাস্থ্য আধিকারিক। এক আধিকারিকের কথায়, ‘‘এইচআইভি সংক্রমিতদের মধ্যে যেমন গৃহবধূ, গর্ভবতী রয়েছেন, তেমনই যুবক-যুবতী, এমনকি কিশোর-কিশোরীও রয়েছে। বেশি চিন্তার এটাই।’’
পশ্চিম মেদিনীপুরের মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক ভুবনচন্দ্র হাঁসদার বক্তব্য, ‘‘আগে এত শিবির হত না। এখন বেশি সংখ্যক শিবির হচ্ছে। শিবিরে শনাক্ত হচ্ছে। তাই নতুন রোগীর খোঁজ মিলছে। সংক্রমিতদের কাউন্সেলিং করে গোপনে চিকিৎসার ব্যবস্থা করা হচ্ছে। এ নিয়ে উদ্বেগের কিছু নেই।’’ অভয় দিচ্ছেন স্বাস্থ্যকর্মীরাও। তাঁরা জানাচ্ছেন, এক সময়ে ধারণা ছিল, এড্স মানেই মৃত্যু। কিন্তু নিয়মিত চিকিৎসা করালে এডস রোগী বহু দিন সুস্থ ও কর্মক্ষম থাকেন। এইচআইভি নিয়ন্ত্রণ কর্মসূচির সঙ্গে যুক্ত একাংশ স্বাস্থ্যকর্মীর মতে, ‘‘মুশকিল হল, ওষুধ খেয়ে ভাল হয়ে যাওয়ার পর অনেক রোগীই আর ওষুধ খেতে চান না। কিন্তু ওষুধ বন্ধ করে দিলে তার ফল মারাত্মক হয়।’’ রাজ্যের অতিরিক্ত স্বাস্থ্য অধিকর্তা (এডিএইচএস) রবীন্দ্রনাথ প্রধানের অবশ্য দাবি, ‘‘নানা প্রচার ও সচেতনতা থেকে এইচআইভি সংক্রমণ এখন কমেছে।’’
বিশ্ব এড্স দিবসে মেদিনীপুরে এসেছিলেন রবীন্দ্রনাথ প্রধান। তিনি জেলা স্বাস্থ্য ভবন এবং বিদ্যাসাগর বিশ্ববিদ্যালয়ে সচেতনতামূলক কর্মসূচিতে অংশ নেন। স্বাস্থ্য আধিকারিকদের বার্তা, ‘‘এড্স আক্রান্তদের প্রতি যেন বৈষম্য না থাকে, সে দিকে সকলকেই খেয়াল রাখতে হবে।’’ এইচআইভি সংক্রমিতদের চিহ্নিত করতে পশ্চিম মেদিনীপুরে ১৩টি আইসিটিসি (ইন্টিগ্রেটেড কাউন্সেলিং টেস্টিং সেন্টার) রয়েছে। রবীন্দ্রনাথবাবু বলেন, ‘‘এইচআইভি নিয়ে নানা সচেতনতামূলক কর্মসূচি চলে। এই রোগ সম্পর্কে যত বেশি সচেতন করা যাবে, তত সংক্রমণ কমবে।’’
No comments