ভেঙেপড়া সেই মহিষাদল রাজবাড়ির( সিংহদুয়ার)রঙ্গিন প্রাসাদ সংস্কারের কাজ শুরু
মহিষাদল রাজবাড়ির ভেঙে পড়া হেরিটেজ রঙ্গিবসান প্রাসাদ সংস্কারের কাজ ফের শুরু করছে রাজ্য সরকার। দীর্ঘদিন কাজ বন্ধ থাকায় জেলা থেকে সংস্কারের প্রায় চার কোটি …
ভেঙেপড়া সেই মহিষাদল রাজবাড়ির( সিংহদুয়ার)রঙ্গিন প্রাসাদ সংস্কারের কাজ শুরু
মহিষাদল রাজবাড়ির ভেঙে পড়া হেরিটেজ রঙ্গিবসান প্রাসাদ সংস্কারের কাজ ফের শুরু করছে রাজ্য সরকার। দীর্ঘদিন কাজ বন্ধ থাকায় জেলা থেকে সংস্কারের প্রায় চার কোটি টাকা ফেরত চলে গিয়েছিল। দিনকয়েক আগে রাজ্যের অর্থ দপ্তর ওই টাকা পুনরায় খরচের অনুমোদন দিয়েছে পিডব্লুডিকে। সপ্তাহ খানেকের মধ্যেই কাজ শুরু করবে ঠিকাদার সংস্থা। বুধবার পিডব্লুডির ইঞ্জিনিয়ার ও আধিকারিকরা প্রাসাদ পরিদর্শন করে রাজবাড়ির কর্মীদের সঙ্গে কথাবার্তা বলেন।
রাজবাড়ি ঘিরে পর্যটন কেন্দ্র গড়ার জন্য নতুন করে পরিকল্পনা করছে রাজ্য সরকার। এজন্য রাজবাড়ির বর্তমান জমির স্ট্যাটাস সংক্রান্ত বিষয়ে প্রয়োজনীয় নথি চেয়ে পাঠানো হয়েছে। ডিসেম্বরের দ্বিতীয় সপ্তাহ নাগাদ রাজবাড়ি পরিদর্শনে আসছে বিধানসভার পর্যটন বিষয়ক স্ট্যান্ডিং কমিটি। রাজবাড়ির পাশাপাশি মহিষাদলের ইতিহাস প্রসিদ্ধ নাটশাল, গেঁওখালি, ইটামগরা, গোপালপুর, এক্তারপুরকে নিয়ে পর্যটন উন্নয়নের উদ্যোগ নিচ্ছেন বিধায়ক তিলক চক্রবর্তী।
রাজবাড়ি সূত্রে জানা গিয়েছে, একটানা বৃষ্টির জেরে গত ১৭ সেপ্টেম্বর বিশ্বকর্মা পুজোর দিন সন্ধ্যা ৭টা নাগাদ রঙ্গিবসান প্রাসাদের সোপান বারান্দার একাংশ ভেঙে পড়ে। তার সপ্তাহখানেকের মধ্যেই আরও একটি অংশ হুড়মড়িয়ে ভেঙে পড়ে। ফলে ৮৫ ফুট দীর্ঘ সোপান বারান্দা ভেঙে গিয়ে কার্যত খণ্ডহরে পরিণত হয়েছে রঙ্গিবসান প্রাসাদ।
প্রসঙ্গত, এই রাজবাড়ি প্রায় ২০০ বছরের পুরনো। ১৮০৯ সালে মহিষাদলের রাজা জগন্নাথ গর্গ ও রানি ইন্দ্রাণীর সময়ে এটি তৈরি হয়েছিল। হেরিটেজ বিল্ডিং ঘোষণার পর ২০১৫ সালের জুলাই মাস নাগাদ রঙ্গিবসান প্রাসাদ সংরক্ষণের জন্য কেন্দ্রীয় সরকারের সংস্কৃতি মন্ত্রক ৬ কোটি ৩১ লক্ষ ৪৯ হাজার টাকা বরাদ্দ করে। রাজ্যের তথ্য ও সংস্কৃতি দপ্তরের তত্ত্বাবধানে পুরাতত্ত্ব বিভাগ ওই রাজবাড়ি সংরক্ষণের কাজ করবে বলে ঠিক হয়। পুরাতত্ত্ব বিভাগ ওই কাজের জন্য হেরিটেজ কমিশনের পরামর্শ নেয়। টেন্ডারের পর এই কাজে যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের স্ট্রাকচারাল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের বিশেষজ্ঞদের নির্দেশমতো ২০১৭ সালে সংস্কারের কাজ শুরু হয়।
জানা গিয়েছে, ২০১৯-’২০ অর্থ বর্ষে রাজ্য হেরিটেজ কমিশন থেকে ৫ কোটি ৪৪ লক্ষ ৪৫ হাজার ৯৭৫ টাকা প্রাসাদ সংরক্ষণ ও সংস্কারের জন্য দ্বিতীয় দফায় বরাদ্দ হয়। সেই টাকার মধ্যে সংস্কারের জন্য ৮২ লক্ষ টাকা খরচ হয়। পিডব্লুডির তমলুক ডিভিশন ২০২০ সালের ১২ মার্চ সেই সংক্রান্ত কাজের ইউটিলাইজেশন সার্টিফিকেট পাঠায় জেলাশাসককে। অভিযোগ, সংস্কার ও সংরক্ষণের কাজ নিয়ে প্রথম থেকেই ঢিলেমি ছিল। একসময় কাজ বন্ধ করে ঠিকাদার সংস্থা পাততাড়ি গুটিয়ে চলে যায়। পরে জানা যায়, সময়মতো চার কোটি টাকা খরচ না হওয়ায় তা জেলা থেকে রাজ্যে ফিরে গিয়েছে। দীর্ঘদিন কাজ মাঝপথে থমকে থাকায় দুর্বল অংশ দিয়ে জল ঢুকে প্রাসাদ ভেঙে পড়ে। এরপরই টনক নড়ে প্রশাসনের।
স্থানীয় বিধায়ক তিলকবাবু পর্যটন স্ট্যান্ডিং কমিটির সদস্য। তিনি বলেন, অর্থদপ্তর পড়ে থাকা চার কোটি টাকা খরচের অনুমোদন দিয়েছে বলে পূর্তদপ্তর জানিয়েছে। এরপরই তারা কাজ শুরুর তোড়জোড় শুরু করেছে। বিল্ডিং ভেঙে পড়ায় সংস্কারের খরচ আরও বেড়ে যাবে। সেজন্য রাজ্য সরকারকে বাড়তি অর্থ চেয়ে চিঠি দিচ্ছি। মহিষাদল রাজবাড়ি ও ঐতিহাসিক কয়েকটি এলাকা ঘিরে পর্যটন কেন্দ্র গড়ার পরিকল্পনা রয়েছে। কয়েকদিনের মধ্যেই স্ট্যান্ডিং কমিটি ভিজিট করে রিপোর্ট দেবে।
No comments